কক্সবাংলা ডটকম(১০ আগস্ট) :: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসন গত মাসে সীমান্তবর্তী একটি রাস্তার সংস্কারকাজে ২৫ কোটি ৬০ ডলার বরাদ্দ দেয়। স্বাভাবিক মনে হলেও ঘটনাটির গভীরতা কম নয়। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সীমান্তের সঙ্গে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারকে যুক্ত করতে ১ হাজার ৩৬০ কিলোমিটারের একটি ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক নির্মাণ করছে ভারত; যার অংশ হিসেবেই এ বরাদ্দ।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে আসিয়ানের দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বৃদ্ধির আশা করছে ভারত। তবে বলা হচ্ছে, এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে ভারত ও চীনের রেষারেষি আরো চরমে উঠবে প্রকল্পটির কারণে। খবর ব্লুমবার্গ।
সীমান্তীয় রাস্তা সংস্কারে শুধু বিগত দুই বছরে ৪৭০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। যার মধ্যে ভারতের মণিপুরের মোরেহ হয়ে মিয়ানমারের তামু থেকে থাইল্যান্ডের মায়ে-সট সংযুক্তকারী ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক রয়েছে। চীনের নিজস্ব অর্থনৈতিক করিডোর ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ উদ্যোগের কারণে ভারত তাদের ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ের দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিচ্ছে।
অন্যদিকে চীন আশা করছে, তাদের প্রকল্পটির মাধ্যমে ৬২টি দেশের মধ্যে ৫০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ সম্পন্ন হবে। সড়ক, রেল ও বাণিজ্য সংযোগ নিয়ে ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ রীতিমতো একটি আন্তঃমহাদেশীয় সংযোগকেন্দ্রে পরিণত হবে।
চীনের এ অর্থনৈতিক করিডোরটি ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। করিডোরটি বিতর্কিত পাকিস্তানের কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে নির্মাণ করায় এ উদ্বেগ আরো নতুন মাত্রা পেয়েছে।
অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নয়াদিল্লিভিত্তিক জ্যেষ্ঠ ফেলো কে ইয়োম বলেন, চীনের সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এশীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। আর এ কারণেই ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের আওতায় উত্তর পশ্চিমে অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ করছে চীন।
প্রসঙ্গত, চীন ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য রুট হিসেবে ব্যবহূত হতো সিল্করুট। ২০১৩ সালের চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ রুটটি পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দেন। শুধু পশ্চিমা প্রতিবেশী নয়, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোকে সংযুক্ত করার লক্ষ্য নেয়া হয় পরিকল্পনাটিতে।
প্রাথমিকভাবে অবকাঠামো বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক চাঙ্গা করার লক্ষ্য নেয়া হয়। চীনের এই ৯০ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্পটি ‘ওয়ান বেল্ট; ওয়ান রোড’ হিসেবেও পরিচিত। একে সিল্করুট ইকোনমিক বেল্ট ও একবিংশ শতকের সিল্করুট হিসেবেও ডাকা হয়।
চীন যখন নতুন অর্থনৈতিক করিডোর নিয়ে কাজ করছে, তখন ভারত ব্যস্ত তাদের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসি নিয়ে। এ নীতির অংশ হিসেবে নিজেদের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত অঞ্চলে সড়ক ও রেল সংযোগ নির্মাণে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ বিনিয়োগ করছে দেশটি। নিজেদের লক্ষ্য পূরণ সহজ করতে প্রতিবেশী নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন ও মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে।
অবশ্য ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ডের মধ্যকার ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নতুন কিছু নয়। ২০০১ সাল থেকে এ নিয়ে কাজ চলছে; তখন এটি ইন্ডিয়া-মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ রোড হিসেবে পরিচিত ছিল। মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সংযোগটির সঙ্গে এখন কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামকেও যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে ভারত।
সাউথ এশিয়ান সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন প্রোগ্রামের আওতায় ভারতের এ প্রকল্পে তহবিলায়ন করবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির আঞ্চলিক সহযোগিতা ও কার্যক্রম সমন্বয় বিভাগের পরিচালক রোনাল্ড অ্যান্থনিও এ প্রসঙ্গে জানান, প্রকল্পটির অবকাঠামো বিনিয়োগ দ্বিগুণ হয়ে ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।
এদিকে গত মে মাসে অনুষ্ঠিত চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড নিয়ে দুদিনের সম্মেলনে ভারত অংশ নেয়নি। যদিও চীন সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, আঞ্চলিক কার্যক্রম বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই তারা এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সব প্রতিবেশী দেশই এখান থেকে লাভবান হবে। এ অবস্থায় ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্প নিয়ে ভারতকে সব ধরনের সংশয় ও ভুল ধারণা ঝেড়ে ফেলার অনুরোধ করেছে চীন।
অন্যদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সড়ক, সেতু ও রেল সংযোগের অবকাঠামো খুবই দুর্বল। অবশ্য অঞ্চলটি অনুন্নত রাখা চীনের সেনাদের কাছে এ অঞ্চল দুর্গম করার একটি কৌশল। ১৯৬২ সালে চার সপ্তাহব্যাপী সীমান্ত যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে ভারতের। চীন-ভারত উভয়ই এ অঞ্চলটির দাবিদার।
এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারে অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হতে হবে ভারতকে। আর এ কারণে পিছিয়ে থাকা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত।
আইএইচএস মার্কিটের প্রধান অর্থনীতিবিদ রাজিব বিশ্বাস বলেন, নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ভারতকে এখন কিছু পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। এশিয়ায় প্রবৃদ্ধিতে এগিয়ে থাকতে হলে দেশটিকে অবকাঠামো সংযোগগুলো উন্নত করতে হবে।
Posted ৩:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta