সোমবার ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

অর্থ সংকটে দেশের ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রমে

সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
77 ভিউ
অর্থ সংকটে দেশের ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রমে

কক্সবাংলা ডটকম(৭ এপ্রিল) :: অর্থ সংকটের কারণে দেশে ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ১০ মাস ধরে অনেক কেন্দ্রে বিনামূল্যের ওষুধ মিলছে না। বন্ধ আছে সন্তান প্রসবের আগে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মা ও শিশুমৃত্যুর হার কমাতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রেগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এসব কেন্দ্রে বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ সেবা নেন। বর্তমান সংকট চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করেছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় কৌশলগত পরিকল্পনার (ওপি) মাধ্যমে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রেগুলো এর আওতায় পরিচালিত হয়।

এর অর্ধেক ব্যয় সরকার বহন করে, বাকি অর্থ আসে দাতা সংস্থাগুলো থেকে। প্রতিদিন গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ মানুষ সেবার জন্য যেত। এ হিসাবে প্রায় পৌনে সাত কোটি মানুষ ওষুধ ও সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবামূলক কার্যক্রম চলে স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচির (এইচপিএনএসপি) মাধ্যমে। এর চতুর্থ কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর জুনে। জুলাইয়ে নতুন করে ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকার পঞ্চম এইচপিএনএসপি শুরু হওয়ার কথা ছিল।

নানা জটিলতায় ১০ মাসেও এ কর্মসূচির অনুমোদন মেলেনি। পরে দেড় বছরের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়। তাতেও দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। বর্তমান সংকটের মূল কারণ এটি।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য– ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুস্বাস্থ্য এবং বয়ঃসন্ধিকালীন সেবা (কিশোর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা) দেওয়ার কথা। আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, কৃমিনাশক, প্যারাসিটামল, মেট্রোনিডাজল, পেন্টোনিক্স-২০, হিস্টাসিনসহ ২৮ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করার কথা এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিশ্চিত করতে আগামী মাসের মধ্যে সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সমকালের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে ৬ মাস ধরে রোগীদের বিনামূল্যের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও রয়েছে।

নারীদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ির সংকটও আছে। সন্তান প্রসবের আগে জরুরি পরীক্ষা সেবাও বন্ধ। ফলে স্বাভাবিক প্রসবের হার কমছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জনকে সেবা না নিয়েই ফিরতে হচ্ছে। এসব রোগীর শুধু পরামর্শ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, তারা ওষুধ ও প্রয়োজনীয় উপকরণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে বারবার চিঠি দিচ্ছেন।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের অবস্থা একই রকম। তিন মাস ধরে বিনামূল্যের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ। মনিরামপুর সদর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক (এফডব্লিউভি) শ্রাবন্তী দাস বলেন, ‘কৃমিনাশক বড়ি ছাড়া কোনো ওষুধ নেই।

ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে কোনো ওষুধ বরাদ্দ পাইনি। ওষুধ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি রোগীরা জেনে গেছেন। এ জন্য সেবা নিতে লোকজন কম আসেন। যারা আসেন তাদের রোগ সম্পর্কে মৌখিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

রোহিতা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক রিনা পারভেজ বলেন, ‘নভেম্বরের পর আর ওষুধ আসেনি। ওষুধ না থাকায় রোগীরাও এখন আর আসেন না। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি। বাকি সময় অলস বসে কাটাতে হচ্ছে।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক কেন্দ্র থেকে ওষুধের জন্য বারবার আবেদন করা হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনও বন্ধ। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল ১০ মাস বকেয়া। সবচেয়ে বড় বিষয়, এসব কেন্দ্রে সেবা নেন নিম্ন আয়ের মানুষ, যাদের বেসরকারিভাবে চিকিৎসা করানোর সক্ষমতা নেই। সংকট দেখা দিয়েছে পরিবার পরিকল্পনার উপকরণেও।

স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ। দেশে শিশুমৃত্যুর হার কমছে না, বরং বাড়ছে। ২০২৩ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিএসএস) প্রতিবেদন বলছে, আগের তুলনায় দেশে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে।

২০২১ সালে দেশে ১ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল হাজারে ২২ জন; ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২৫। এ ছাড়া ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুও আগের চেয়ে বেড়ে ৩১ জন হয়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারে এই হার ছিল ২৮ জন।

শিশুমৃত্যু বাড়লেও দেশের মাতৃমৃত্যু কিছুটা কমেছে। প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্মের বিপরীতে মাত্যৃমৃত্যু কমে ১৫৬ জন হয়েছে, ২০২১ সালে যা ছিল ১৬৮ জন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, এখনও ৫০ শতাংশের বেশি শিশুর জন্ম হয় বাড়িতে। অপ্রশিক্ষিত মানুষের হাতে সন্তান প্রসবের কারণে অনেক সময় মা ও শিশু মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ছে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ও নিরাপদ প্রসব বাড়াতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলো বড় ভূমিকা রাখছিল।

আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, এখনও দেশে ৫ বছরের কম বয়সে শিশুমৃত্যুর মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মারা যায় জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে। অর্থাৎ নবজাতক অবস্থায়। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা বন্ধ হলে এর প্রভাব পড়বে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হারে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি ১০০০ জীবিত জন্মে ১২ জনের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমান বাস্তবতায় এ দুটি লক্ষ্যে পৌঁছানো কঠিন হবে।

77 ভিউ

Posted ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com