কক্সবাংলা ডটকম(২২ জুলাই) :: বেতন-ভাতা ইস্যুতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সংগঠনের (এসিএ) মধ্যকার বিরোধের মধ্যেই চলতি মাসের ৯ তারিখে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন দলটির সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেলর। সিএ’র গুরুত্বপূর্ণ এই বোর্ড সদস্য বলেছিলেন, তিনি আশাবাদী সফর হবে, হবে অ্যাশেজও।
তবে সিএ এবং এসিএ এর মধ্যে অস্ট্রেলীয় সময় শুক্রবার রাতে যে বৈঠকটি হয়েছে তাতে টেলরের আশাবাদ মিথ্যাই হয়ে যাচ্ছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সংগঠনের প্রধান অ্যালিস্টার নিকোলসনের মধ্যে চলা শুক্রবার রাতের আলোচনা আবারও ভেস্তে গেছে কোনো ফলাফল ছাড়াই।
দুই পক্ষই আগের অবস্থানে অনড়। এসিএ এখনও খেলোয়াড়দের লভ্যাংশের ভাগাভাগির আগের শর্তে অনড়। আর সিএ-ও নতুন প্রস্তাবিত মডেলের বাইরে বেশি ছাড় দিতে রাজি নয়।
বিরোধের পর থেকে দুই পক্ষ নতুন করে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা বেশ কিছু দূর এগিয়ে এনেছিল। দ্রুতই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে শোনাও যাচ্ছিল।
তার প্রেক্ষিতেই মার্ক টেলর বলেছিলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন বোর্ডের পরিকল্পনায় থাকা পরবর্তী সবগুলো টেস্ট সিরিজই যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।
তবে তখন তিনি বলেছিলেন, দ্রুত সব মতপার্থক্য দূর হয়ে যাবে, আমাদের ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। সবকিছু সমাধান করে ফেলতে হবে।
কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। ফলে মাত্র এক মাস দূরে থাকা বাংলাদেশ সফরেও দল পাঠানো নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর এক খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সফর নিয়ে এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়া থেকে মিশ্র বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো সফরের আগে নিয়মমাফিক নিরাপত্তা পরিদর্শন হিসেবে সিএ এবং এসিএ দুই অংশের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসবে। আগামী সোমবার যে সফরের সূচি নির্ধারণ করা আছে।
তবে ইএসপিএনক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফর বাতিলও হতে পারে এমন ইঙ্গিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) দিয়েছে সিএ।
উল্লেখ, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে দেশটির ক্রিকেটারদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। এর পর থেকেই অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের সদস্যসহ প্রায় ২৭০ ক্রিকেটাররা কার্যত বেকার হয়ে যান। বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট এই অচলাবস্থার কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিশ্চিত করা কিছুই বলা যাচ্ছে না।
সমঝোতা চুক্তি না হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দল।
আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অস্ট্রেলিয়া মূল দল টেস্ট খেলতে আসার কথা বাংলাদেশে।
এর আগে অস্ট্রেলীয় সংবাদ মাধ্যম এবিসি নিউজের খবরে বলা হয়, ১০ আগস্ট অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের ডারউইনে সমবেত হওয়ার কথা। সেখানে অনুশীলন শেষে ১৮ আগস্ট ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে অসিদের।
খবরে বলা হয়, বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি না হলে খেলোয়াড়েরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বদলে ঘরোয়া লীগগুলোতে খেলবেন। আগামী ৪ আগস্ট থেকে শুরু হবে ক্যারিবীয় লীগ সিপিএল। চলবে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অথচ এই সময়টাতেই বাংলাদেশে আসার কথা অসিদের।
তাই চুক্তির বিষয়ে এর মধ্যে কোনো সুরাহা না হলে বাংলাদেশ সফর বাদ দিয়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা সিপিএল খেলতে চলে যেতে পারেন বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০০৬ সালে রিকি পন্টিংয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফর করেছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল। এরপর ১০ বছরের বেশি সময় পার হলেও টেস্ট র্যাং কিংয়ের সামনের কাতারের দলটির বিপক্ষে আর কোনো টেস্ট খেলা হয়নি টাইগারদের।
২০১৫ সালের অক্টোবরে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে দুইটি টেস্ট খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু সেবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ইস্যু করে সে সফর বাতিল করে নেয় দেশটির ক্রিকেট বোর্ড।
এরপর দেশের মাটিতে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ। সে টুর্নামেন্ট থেকেও নিজেদের দল প্রত্যাহার করেছিল অস্ট্রেলিয়া। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ আয়োজন করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার উদাহরণ তৈরি করে বাংলাদেশ।
ওইসব টুর্নামেন্ট এবং সিরিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে নজর দিয়ে বার বার অস্ট্র্রেলিয়াকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিল বিসিবি। অবশেষে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
Posted ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta