কক্সবাংলা ডটকম(২৪ আগস্ট) :: বাজারে এবং ঢাকার প্রায় প্রত্যেক রাস্তাতেই বিভিন্ন জায়গায় ভ্যানে করে আখ বিক্রির দৃশ্য সবারই চোখে পড়ে। গরমে অন্যান্য বোতলজাত পানীয়ের চাইতে আখের রসটাকেই অনেকে তেষ্টা মেটানোর জন্য পান করে থাকেন।একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে প্রতিদিন এক গ্লাস করে আখের রস খেলে ত্বকের সৌন্দর্য় তো বৃদ্ধি পায়ই, সেই সঙ্গে হাজারো রোগ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
আসলে প্রকৃতিকে এই উপাদানে উপস্থিত প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন সি একাধিক উপকারে লাগে।
আজ আমরা আখের এমনই কিছু গুণের কথা জানব-
১. ব্রণের প্রকোপ কমায়
সারা মুখ ছোট ছোট দানায় ছেয়ে গেছে? এদিকে কসমেটিক্স থেকে আয়ুর্বেদ পেস্ট, সবকিছু লাগিয়েও ফল মিলছে না? অল্প করে মুলতানি মাটি নিয়ে আখের রসের সঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে ফেলুন। তারপর সেই পেস্ট ভাল করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। সময় হয়ে গেলে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখটা ধুয়ে নিন। এমনটা সপ্তাহে একবার করলে একটা ব্রণকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
২. এনার্জির ঘাটতি দূর করে
আখের রসে উপস্থিত সিম্পল সুগার বা সুক্রোস রক্তে মিশে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনার্জির ঘাটতি দূর করে। তাই তো পেট খারাপের পর শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে আখের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে সেই রস যেন বাড়িতে বানানো হয়।
৩. মুখের গন্ধ দূর করে
আখের রসে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস। এই দুই খনিজ দাঁতকে শক্তপোক্ত করার পাশাপাশি গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দাঁতের ক্ষয় যেমন রোধ হয়, তেমনি দুর্গন্ধও কমে। প্রসঙ্গত, পুষ্টির ঘাটতির কারণে যদি মুখে গন্ধ হয়, সে সমস্যা মেটাতেও আখের রসের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। ১) লিভারের সমস্যা দূর করে
আখের রস পান করার অভ্যাস দেহে বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং লিভারের সুস্থতায় কাজ করে। আর এ কারণেই অনেক আগে থেকেই জন্ডিসের আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে আখের রস পান করার প্রচলন রয়েছে।
৪) হজম সংক্রান্ত সমস্যা প্রতিরোধ করে
আখের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে যা হজমে সহায়তা করে এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করে।
৫) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
অনেকেই ভাবতে পারেন প্রাকৃতিক চিনি সমৃদ্ধ আখের রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। আখের রসে ডায়াবেটিস চিনির চাইতেও কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর অন্যান্য যে কোনো আর্টিফিশিয়াল চিনির বিপরীতে।
৬) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
জার্নাল অফ ফাইটোকেমিস্ট্রি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায় আখের রসে বিদ্যমান ফ্লেভোনস দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি ও ছড়ানো প্রতিরোধ করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। আখের রসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
৭) পানি শূন্যতা দূর করে
পানি শূন্যতা এই গরমে খুবই স্বাভাবিক একটি সমস্যা যা নানা রোগ বয়ে নিয়ে আসে। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ এই আখের রস ইলেক্টোলাইট ও পানির শূন্যতা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।
৮) কিডনির সমস্যা দূর করে
আখের রস প্রাকৃতিক অ্যালকালাইন যা অ্যান্টিবায়োটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এছাড়াও আখের রস পানের অভ্যাস বুক জ্বালা পোড়া ধরনের সমস্যা এবং মূত্র নালীর ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।
৯) দাঁত ও মাড়ির সমস্যা প্রতিরোধ করে
আখের রসের প্রাকৃতিক অ্যাল্কালাইন অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে যা দাঁতের ক্ষয় বা মাড়ির ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও আখের রস মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও বিশেষভাবে সহায়ক।
কিছু জরুরী বিষয়
১) রাস্তার পাশের আখের রস স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় কারণ এতে জীবাণু থাকতে পারে, আপনি আখের রস পান না করে আখ খাওয়ার অভ্যাস করলেও একই ফলাফল পাবেন, নতুবা বাসায় আখের রস তৈরি করে নিন।
২) অতিরিক্ত আখের রস পান করা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক। দিনে ১ গ্লাস আখের রসই যথেষ্ট, নতুবা আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পাবে।
Posted ১২:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta