কক্সবাংলা ডটকম(৪ জুন) :: কার্ডিফের রাতের কৃত্রিম আলো কেড়ে নিয়ে মাদ্রিদিস্তা ফানুস উড়িয়ে আকাশের উজ্জ্বলতা বাড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। জুভেন্টাসের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জিতে স্বপ্নের সিঁড়ি পেরিয়ে লস ব্লাঙ্কোসরা এখন অনন্য উচ্চতায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নাম নিয়ে আধুনিক যুগে প্রবেশের পর প্রথম দল হিসেবে টুর্নামেন্টটির টানা দুটি শ্রেষ্ঠত্বে নাম লেখাল জিনেদিন জিদানের বার্নাব্যুর দলটি।
ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটের লড়াই ‘ইউরোপিয়ান কাপ’ যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে। রিয়াল প্রথম পাঁচ মৌসুমেই শিরোপা ঘরে তুলেছিল। পরে আরো কয়েকটি দল টানা শিরোপায় নাম লেখায়। কিন্তু ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামে আধুনিকায়ন হওয়ার পর কেউ আর পারেনি টানা মুকুট অর্জনে নাম লেখাতে। প্রায় দুই যুগ পর সেটাই করে দেখালেন রোনালদোরা।
আধুনিক যুগের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দুবার ফাইনালে ওঠা দলই অবশ্য মাত্র পাঁচটি। এসি মিলান, আয়াক্স, জুভেন্টাস, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদ। তাতে প্রথম চার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা বরাবরই বরণ করেছে রানার্সআপের ভাগ্য। শুধু রিয়ালই তাই সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হয়ে থাকল।
এক নজরে আধুনিক যুগে প্রবেশের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের পরিণতি-
১৯৯২-৯৩: আধুনিক যুগের উয়েফার লড়াইয়ে প্রথম শিরোপাটি ঘরে তোলে ফ্রেঞ্চ ক্লাব মার্শেই। তবে ঘরোয়া লিগে ম্যাচ গড়াপেটার শাস্তিতে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিষিদ্ধ থাকে দলটি।
১৯৯৩-৯৪: এবারের চ্যাম্পিয়ন এসি মিলান। পরের মৌসুমেও ফাইনালের টিকিট কাটে ইতালিয়ান জায়ান্টরা। তবে ডাচ জায়ান্ট আয়াক্সের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে টানা দুইয়ের স্বপ্ন পোড়ে দলটির।
১৯৯৪-৯৫: শিরোপা যায় আয়াক্সের ঘরে। পরের মৌসুমে ফাইনালে গেলেও টাইব্রেকারে জুভেন্টাসের কাছে হেরে যায় ডাচরা। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল।
১৯৯৫-৯৬: ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাস চ্যাম্পিয়ন। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা পরের মৌসুমে ফাইনালে জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে টানা শিরোপার স্বপ্ন বিসর্জন দেয়।
১৯৯৬-৯৭: বরুসিয়া ডর্টমুন্ড চ্যাম্পিয়ন। পরের মৌসুমে ফাইনালে যাওয়া হয়নি। স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে ঘরের পথ ধরে জার্মানরা।
১৯৯৭-৯৮: চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। পরের মৌসুমে কোয়ার্টারে ডায়নামো কিয়েভের কাছে ৩-১ গোলে হেরে থামতে হয় লস ব্লাঙ্কোসদের।
১৯৯৮-৯৯: ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়ন। পরের মৌসুমে শেষ আটে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-২ গোলে হেরে বিদায় ঘণ্টা বাজে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের দলটির।
১৯৯৯-২০০০: আবারো চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। জিনেদিন জিদান সেবার মাদ্রিদের খেলোয়াড় হিসেবে জিতলেন। পরের মৌসুমে সেমিতে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ গোলে হেরে ছিটকে যায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন স্প্যানিশ জায়ান্টরা।
২০০০-০১: শিরোপা যায় জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের শোকেসে। পরের মৌসুমে কোয়ার্টারে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৩-২ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট শেষ করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।
২০০১-০২: আরেকবার ইউরোপ সেরা রিয়াল মাদ্রিদ। পরের মৌসুমে সেমিতে জুভেন্টাসের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় রিয়াল।
২০০২-০৩: শিরোপা ঘরে তোলে এসি মিলান। ইতালিয়ান জায়ান্টরা পরের মৌসুমে কোয়ার্টারে ৫-৪ গোলে হেরে যায় স্প্যানিশ ক্লাব দেপোর্তিভো লা করুনার বিপক্ষে।
২০০৩-০৪: এবারের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগিজ চমক পোর্তো এফসি। পরের মৌসুমে অবশ্য শেষ ষোলোতেই বিদায়। ইতালিয়ান ইন্টার মিলান দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলে ছিটকে দেয় পোর্তোকে।
২০০৪-০৫: আরেকটি ইংলিশ চ্যাম্পিয়ন পায় ইউরোপ। এবার শিরোপা লিভারপুলের। অল রেডসরা পরের মৌসুমে শেষ ষোলোয় ০-৩ গোলে হারে পর্তুগিজ ক্লাব বেনফিকার কাছে।
২০০৫-০৬: বার্সেলোনার শোকেসে আসে চ্যাম্পিয়নশিপ। স্প্যানিশ জায়ান্টরা পরের মৌসুমে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নেয়। কাতালানরা অ্যাওয়ে গোলে হারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লিভারপুলের কাছে।
২০০৬-০৭: চ্যাম্পিয়ন এসি মিলান। ইতালিয়ানরা পরের মৌসুমে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে ০-২ গোলে হারে আরেক ইংলিশ জায়ান্ট আর্সেনালের বিপক্ষে।
২০০৭-০৮: চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জায়ান্টরা পরের মৌসুমেও শিরোপা ছোঁয়ার দূরত্বে ছিল। কিন্তু অ্যালেক্স ফার্গুসনের রেড ডেভিলদের ০-২ গোলে হতাশ করে লিওনেল মেসির বার্সেলোনা।
২০০৮-০৯: পেপ গার্দিওলার দুরন্ত বার্সেলোনার শোকেসে শিরোপা। পরের মৌসুমে ন্যু-ক্যাম্পের দলটি সেমিতে ২-৩ গোলে হারে ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানের কাছে।
২০০৯-১০: ইন্টার মিলানের শিরোপার হাসি। পরের মৌসুমে শালকের কাছে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৩ গোলে হেরে শেষ আটেই স্বপ্ন ভাঙে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের।
২০১০-১১: টাইটেল ফেরে বার্সেলোনার ঘরে। গার্দিওলার অপ্রতিরোধ্য বার্সা পরের মৌসুমে সেমিতে ২-৩ গোলে হেরে যায় ইংলিশ জায়ান্ট চেলসির কাছে।
২০১১-১২: চেলসির ঝুলিতে শিরোপা। তবে পরের মৌসুমে প্রথম কোন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যেয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়ে ব্লুজরা।
২০১২-১৩: চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ। পরের মৌসুমে সেমিতে দুই লেগ মিলিয়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে রিয়াল মাদ্রিদ।
২০১৩-১৪: লা ডেসিমার হাসি রিয়াল মাদ্রিদের। ঐতিহাসিক জয়ের পরের মৌসুমে স্প্যানিশ জায়ান্টরা সেমিতে ২-৩ গোলে হেরে যায় জুভেন্টাসের কাছে।
২০১৪-১৫: আরেক স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার ঘরে টাইটেল জয়ের হাসি। পরের মৌসুমে সেমিতে ২-৩ গোলে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হেরে বিদায় নেয় কাতালানরা।
২০১৫-১৬: আবারো স্পেন, আবারো রিয়াল মাদ্রিদ চ্যাম্পিয়ন। ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে জিনেদিন জিদানের দল।
২০১৬-১৭: সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। প্রথম দল হিসেবে টানা দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের হাসি। শনিবার রাতে কার্ডিফে জু্ভেন্টাসকে ৪-১ গোলে হারিয়ে প্রতিযোগিতায় নিজেদের দ্বাদশ শিরোপাটি জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। যার শেষ দুটি এল টানা দুবছরে।
Posted ১:০৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta