বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আপনি একজন সিনিয়র জেলা জজ। দীর্ঘদিন বিচারকাজ করেছেন। আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপল না? টেম্পারিং করে আপনি ভুল করেননি, জেনে-বুঝে আপনি ক্রাইম করেছেন।’
বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ মন্তব্য করেন।
ফৌজদারি রিভিশন পিটিশনের শুনানির সময় উচ্চ আদলত বলেন, ফৌজদারি মামলার ৯ আসামিকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আদেশে যে পরিবর্তন এনেছেন সেটি কেবল ভুল নয়, অপরাধও।
বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ইসমাইলকে বলেন, ‘আপনি নিজের আদেশ বাতিল করেছেন। এক অন্যায়কে ঢাকতে আপনি আরেকটি অন্যায় করেছেন এবং আপনি তা করতে দ্বিধা করেননি।’
এর আগে বিচারপতি মোহাম্মদ ইসমাইল হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হন এবং তার কাজের জন্য আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
ইসমাইলের আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ রাজা তার মক্কেলের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তার মক্কেলকে কার্যধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেন।
হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে যে কোনো বিচারকের আদেশে কোনো পরিবর্তন আনার জন্য মামলার উভয়পক্ষের আইনজীবীদের ডাকতে হবে। কিন্তু তিনি (বিচারক ইসমাইল) হাইকোর্টে হাজির হওয়ার আগেই তার আদেশ বাতিল করেছেন।
ইসমাইল আদালতকে বলেন, জামিন আদেশে দুটি শব্দ ব্যবহার করে তিনি ভুল করেছেন।
‘আমি দুঃখিত। আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী,’ তিনি হাইকোর্ট বেঞ্চকে বলেন।
বেঞ্চ বলেন, ‘আপনার মনে অনুতাপ দেখি না। আপনি বাধ্য হয়ে বলছেন। অন্তর থেকে আসেনি। অন্তর থেকে আসতে হবে।’
চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একইদিনে জামিন দেওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারের জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের বিরুদ্ধে আদেশের জন্য আগামী ২৭ জুলাই দিন ধার্য করেন আদালত।
এদিকে উচ্চ আদালতে শুনানি শেষে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেছেন, ‘আমি আল্লাহ পাকের কাছে বিচার দিলাম।’
বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
আপনি কিছু বলবেন—গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করলে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুক। আমি আল্লাহ পাকের কাছে বিচার দিলাম।’
কার বিরুদ্ধে বিচার দিলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ পাক করবে, যা করার।’
কার বিচার করবে—আবারও প্রশ্ন করা হলে ইসমাইল বলেন, ‘আল্লাহ পাক ভালো বুঝবেন।’
আবেদনকারী পক্ষ জানায়, জমির দখল নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে খোদেস্তা বেগম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন। এ মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাঁদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতে গত ২১ মে আসামিরা দুপুর ১২টার দিকে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। সেদিন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৯ আসামির জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন। একই দিন কক্সবাজারের দায়রা জজ ৯ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে খোদেস্তা হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন।
Posted ৬:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta