কক্সবাংলা ডটকম(২০ মে) :: শুরু হয়েছে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলন। রবিবার স্থানীয় সময় বিকেলে সৌদি রাজধানী রিয়াদের বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ৫৬ জন আরব ও মুসলিম নেতা ইতিহাসের প্রথম এ ধরনের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব-আমিরাতের আমির, বাহরাইনের বাদশাহ, ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান, মিশর, উজবেকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বেনিন, লেবানন, মৌরিতানিয়া, তিউনেশিয়া, ফিলিস্তিন, ইরাক ও নাইজারের প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, আলজেরিয়া পার্লামেন্টের চেয়ারম্যান ও উগান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সৌদি বাদশাহর উদ্বোধনী ভাষণের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাতে শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন।
শীর্ষ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, সহিষ্ণুতা ও সৌহার্দ্যের সম্প্রসারণ এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণের প্রচেষ্টা জোরদার করা।
এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে সৌদি বাদশাহ তাকে স্বাগত জানান। এ সময় তারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে : ট্রাম্
মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের ইসলামি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে আসা ও নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার বিকালে সৌদি আরবের রিয়াদে আরব-ইসলামি-আমেরিকান (এআইএ) সামিটে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘এই যুদ্ধ বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন গোষ্ঠীর বা বিভিন্ন সভ্যতার নয়। এই লড়াই সেই সব নৃশংস অপরাধীদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের জীবন কেড়ে নিতে চায়, সব ধর্মের ভালো মানুষ যারা জীবন রক্ষা করতে চায় তাদের হত্যা করতে চায় এসব অপরাধীরা। এই লড়াই ভালো এবং অশুভের।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এর মানে হচ্ছে সত্যিকার অর্থে ইসলামি জঙ্গিবাদ ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করা। এর মানে হচ্ছে নিরাপরাধ মুসলিমদের হত্যা, নারীদের ওপর নিপীড়ন, ইহুদিদের হত্যা ও খ্রিস্টানদের গলাকেটে হত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু শান্তির পথ এখানেই রয়েছে, এই প্রাচীন ও পবিত্র মাটিতে।’
দুই মাস আগে ক্ষমতাগ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছয়টি মুসলিম প্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সংশোধিত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। শুরু থেকেই ট্রাম্পের এ আদেশকে পরোক্ষ মুসলিম নিষেধাজ্ঞা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারণার সময়ও একের পর এক মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এবার সেই ট্রাম্পই সৌদি আরব সফরে এসে ইসলাম ও মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদের উদ্দেশ্যে এই ভাষণ দিলেন।
মুসলিম বিদ্বেষী বলে পরিচিতি পাওয়া ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং সব সময় আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা। আমরা এখানে লেকচার দিতে আসিনি, মানুষ কিভাবে বাঁচবে তা বলতে আসিনি এখানে। কী করতে হবে, কে করবে বা কিভাবে প্রার্থণা করতে হবে তা বলতে আসিনি। আমরা এখানে এসেছি অংশীদারিত্বের প্রস্তাব নিয়ে। যার ভিত্তি হবে পারস্পরিক স্বার্থ। যা সবার জন্য ভালো ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে।
জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, কিন্তু আমরা অশুভকে পরাজিত করতে পারব যদি সব মহৎ শক্তি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী থাকি। এই কক্ষে উপস্থিত সবাই যদি এই বোঝার ভাগ সমানভাবে বহন করি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর উচিৎ নয় তাদের শত্রুদের ধ্বংস করার জন্য আমেরিকার শক্তির অপেক্ষায় থাকা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে তারা দেশের, নিজেদের ও তাদের শিশুদের জন্য কেমন ভবিষ্যৎ চায়।
২০ মে (শনিবার) প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছান ট্রাম্প। এ সফরে ট্রাম্পের সঙ্গে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও মেয়ে ইভানকা ট্রাম্প ছাড়াও রয়েছেন জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বড় মার্কিন অধিজাতিক কোম্পানির সিইও তার সঙ্গে ছিলেন। সৌদি সফর শেষে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, ব্রাসেলস, ভ্যাটিকান এবং সিসিলি সফরে যাবেন ট্রাম্প। সূত্র: রয়টার্স, আল-আরাবিয়া।