বিশেষ প্রতিবেদক :: রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ‘আরসা’ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অধিকাংশ হত্যা, অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে আরসার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। মিয়ানমার থেকে এর নেতৃত্ব দিত আরসা প্রধান আতাউল্লাহ।
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থী সশস্ত্র সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি -আরসা প্রধান সেই আতা উল্লাহ আবু আম্মার জুননিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।
নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতে গোপন বৈঠকের সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযান চালিয়ে আরসার ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ সময় তাদের কাছে নগদ ২১ লাখ ৩৯ হাজার ১০০ টাকা, একটি ধারালো চাকু ও একটি স্টিলের ধারালো চেইন (ধারালো দাঁতযুক্ত ও দুই পাশে হাতল বিশিষ্ট) উদ্ধার করা হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পৃথক দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্বার জুনুনী (৪৮), মোস্তাক আহাম্মদ (৬৬), সলিমুল্লাহ (২৭), ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার চর আলগী এলাকার আতিকুল ইসলামের ছেলে মনিরুজ্জামান (২৪), আসমত উল্লাহ (৪০) ও মো. হাসান (৪৩), সলিমুল্লাহর স্ত্রী আসমাউল হোসনা (২৩) ও আরাকান রাজ্যের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর, মোসাম্মত শাহিনা (২২) ও ১৭ বছর বয়সী কিশোরী। তাঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমি পল্লী এলাকায় ভাড়া থাকতেন। আর সলিমুল্লাহ, মোসাম্মত শাহিনা ও ১৭ বছর বয়সী কিশোরী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকতেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আতাউল্লাহ ওরফে আবু আম্বার জুনুনী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির প্রধান বলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে। আতাউল্লাহ আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন বলে আদালতের জবানবন্দিতে জানিয়েছেন এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার চার আসামি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা (স্কোয়াড্রন লিডার) রিজওয়ান রুশদী হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, তাঁরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাদের পাসপোর্ট বা কোনো ভিসা নেই। অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকে অপকর্ম করতে পারে, তাঁরা কোন উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করল, তাঁদের অশুভ পরিকল্পনা জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত ছয় আসামিকে পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রেপ্তারকৃতদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে তাদের বিরুদ্ধে র্যাব বাদী হয়ে এফআইআর (নং ২৯) দায়ের করেছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে নাশকতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল।
পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, ধারালো চাকু ও চেইন উদ্ধার করা হয়।
দীর্ঘদিন আত্মগোপনে পালিয়ে ছিলেন মোস্ট ওয়ান্টেড রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত আরসার চিফ অফ কমান্ড আতাউল্লাহ।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসের রিপোর্ট অনুসারে, তখন থেকে উগ্রপন্থী সশস্ত্র সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি -আরসা দলটির নেতৃত্ব দেন আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি।
শত্রুদের (মিয়ানমারের সেনাবাহিনী) কাছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) নেতা আতা উল্লাহ এখন এক আতঙ্কের নাম। সমর্থকদের কাছে তাদের নেতা একজন ‘মুক্তিকামী সৈনিক’। যে সৌদি আরবের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে লড়াই করে যাচ্ছে। সমালোচকরা মনে করেন, তার বেপরোয়া সিদ্ধান্তে বিদ্রোহের কারণে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার জীবন বিপর্যস্ত। ফলে তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য ‘অভিশাপ’।
মিয়ানমারভিত্তিক স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ রিচার্ড হর্সি বলেন, ‘আতা উল্লাহ খুবই ক্যারিশমাটিক। সে সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। এমনভাবে কথা বলে যেন রোহিঙ্গাদের কষ্ট অনুভব করতে পারছে তিনি।’
ধারণা করা হয় ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ চেকপোস্টে আতা উল্লাহ’র নির্দেশেই হামলা চালিয়েছিল আরসা। এরপর সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ।
গত বছরের অক্টোবরে এক ভিডিও বার্তায় রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন হিসেবে আরসা ও নেতা হিসেবে নিজেকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন আতা উল্লাহ। ওই সময়ে মিয়ানমার সীমান্তে একটি হামলা চালিয়েছিল তারা।
আরসা নেতার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজনের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ৩০ বছর বয়সেই সে একটি বিদ্রোহী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। শুরুতে এই সংগঠনের অল্প কয়েকটি বন্দুক ছিল, বেশিরভাগ সময় লাঠি ও ছুরি হাতেই হামলা চালাত তারা।
ওই সময় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মুখোশধারী ব্যক্তি তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর আতা উল্লাহ মিয়ানমারের সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বর্ণনা দিচ্ছে।
সৌদি আরবে বিলাসবহুল জীবন
রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারাও স্বচ্ছলতার মুখ দেখেনি। তবে পাকিস্তানের করাচিতে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বেড়ে উঠা আতা উল্লাহ’র।
এক আত্মীয়ের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, তার বাবা করাচিতে দারুল উলুম মাদ্রাসায় পড়াশোনার পর পরিবারসহ সৌদি আরব পাড়ি দেয়। সেখানে শিক্ষকতা শুরু করে তার বাবা। এরপর এক বিত্তশালী পরিবারের নজরে আসে আতাউল্লাহ। সেই পরিবারের সন্তানদের পড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় তাকে। খুব তাড়তাড়িই তাদের কাছের মানুষ হয়ে যায় আতা উল্লাহ।
আতা উল্লা’র সৌদি জীবন সম্পর্কে জ্ঞাত অপর এক আত্মীয় জানায়, ওই পরিবার তাকে (আতা) খুবই ভালোবাসত এবং একেবারে আপন মনে করত। কিন্তু ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ১ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ার ঘটনা নাড়া দেয় তাকে। এরপরই সৌদি আরবের বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে রোহিঙ্গাদের সমর্থনে লড়াইয়ে নামে সে।
ইসলামি জঙ্গিদের সঙ্গে বিরোধ
শুরুতে সৌদি আরব থেকে কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পাকিস্তানে ফিরে যায় আতা উল্লাহ। এই টাকা শীর্ষ জিহাদিদের কাছ থেকে সে অস্ত্র, যোদ্ধা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে চেয়েছিল বলে করাচিতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এক জঙ্গি জানিয়েছে। ওই জঙ্গির মতে, সে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের তালেবান এবং জম্মু-কাশ্মিরের বিচ্ছন্নতাপন্থী লস্কর-ই-তৈয়বার কাছ থেকে বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা চায়।
২০১২ সালে তার সঙ্গে কাজ করা এক সহযোগীর মতে, ‘প্রকাশ্যে এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেও রাখাইনে তাদের হয়ে যুদ্ধ করতে রাজি হয়নি। বেশিরভাগ পাকিস্তানি জঙ্গিই তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে অনেকে অস্ত্র কেনার দেওয়া অর্থ ফেরত দেয়নি। আতা উল্লাহ অস্ত্রও পায়নি, ফিরে পায়নি টাকাও।’
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল তালাত মাসুদ বলেন, ‘বার্মায় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর জিহাদের ডাক আসলে মুসলিমদের সহানুভূতি অর্জনের জন্য প্রচারণা ছাড়া কিছুই নয়।’
২০১২ সালে পাকিস্তানে আতাউল্লাহকে কাছ থেকে দেখা কয়েকজন জঙ্গি জানায়, সে পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সময় একজন জাতীয়তাবাদীতে পরিণত হয়। জঙ্গিবাদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। কারণ যাদেরকে সে অর্থ দিয়েছিল তারা কোনও সহযোগিতা করেনি। অনেকে নাকি তার অর্থ চুরিও করেছে।
আতা উল্লাহ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের মতো (আরএসও) রাখাইনের অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা সংঘটিত সহিংসতা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস। সংস্থাটির প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে পুরুষ, নারী ও শিশুদের হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও হুমকির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির থেকে অপহরণ করে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য করে বলেও তথ্যপ্রমাণ মিলেছে।
১৮ মার্চ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত ‘আমি যে কোনো মুহূর্তে খুন হতে পারি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানায় ফর্টিফাই রাইটস।
প্রতিবেদনের বিষয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন এবং অন্যান্য গুরুতর লঙ্ঘনের ওপর ৭৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি, আশ্রয় শিবিরে চলমান সহিংসতা নিয়ে ১১৬ জনের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যার মধ্যে গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, মানবিক সহায়তা কর্মী এবং অন্যরা অন্তর্ভুক্ত। ফর্টিফাই রাইটস বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাবেক এবং বর্তমান সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে, যার মধ্যে রয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ–আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সংঘটিত এসব অপরাধের সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্র সংঘাতের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং মিয়ানমারের জন্য স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা (আইআইএমএম) এসব অপরাধ তদন্ত করতে পারে। সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়।
ফর্টিফাই রাইটস–এর পরিচালক জন কুইনলি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে প্রায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তির সঙ্গে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ সাধারণত সশস্ত্র সংঘাতের প্রত্যক্ষ ক্ষেত্রেই সংঘটিত হয়। তবে এই ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে সংঘটিত নির্দিষ্ট অপরাধগুলো মিয়ানমারের যুদ্ধে সরাসরি সংযুক্ত এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল। সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালে বিশিষ্ট রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী মহিবুল্লাহ হত্যার পর আশ্রয় শিবিরে বিদ্রোহী সহিংসতা বেড়ে যায়। ২০২১ সালে ২২ টি,২০২২ সালে ৪২ টি,২০২৩ সালে ৯০টি এবং ২০২৪ সালে কমপক্ষে ৬৫টি হত্যাকাণ্ডের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি, ক্যাম্প–৪ এক্সটেনশনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা শিক্ষক ও কবি মোহাম্মদ ফয়সালকে অপহরণ করে গুলি করে হত্যা করে।
ফর্টিফাই রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, তিনি আশ্রয় শিবিরে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিচ্ছিলেন। একইভাবে, ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর বালুখালী ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় আরসা সদস্যদের হামলায় ছয়জন নিহত হয়। হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিদ্রোহীরা ধারালো অস্ত্র ও বন্দুক নিয়ে হামলা চালিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের হত্যা করে।
ফর্টিফাই রাইটসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে আশ্রিতদের অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে গিয়ে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর পক্ষে লড়তে বাধ্য করছে। ২০২৪ সালে এক কিশোরকে অপহরণ করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের ঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৭ বছর বয়সী এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘সাতজন লোক আমাকে চায়ের দোকান থেকে অপহরণ করে, চোখে কাপড় বেঁধে এবং হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। পরে আমাকে জান্তা বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের কার্যক্রম দমনে বাংলাদেশ সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফর্টিফাই রাইটস বলছে, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে কাজ করে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে সহায়তা করা।’ এ ছাড়া, সংস্থাটি আন্তর্জাতিক দাতা দেশগুলোকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য সুরক্ষিত আশ্রয় ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাভিন মুরশিদ বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে যেসব গ্রুপ আছে, আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), এখানে তাদের দাবি কী? এরা কেন আছে এখানে? ওরা কী চাচ্ছে? ওরা কিসের জন্য এত মারামারি, কাটাকাটি করছে? যেখানে তারা দুজনেই বলছে তারা অধিকার, স্বাধীনতা চায়। তারা চায় মিয়ানমারে এক ধরনের পরিবর্তন আসুক, যেখানে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকবে। তারা দুজনেই যেহেতু সে সুযোগ চায়, তাহলে তারা একসঙ্গে কাজ না করে মারামারি করছে কেন? এই জিনিসটা আমাদের জানা প্রয়োজন। এ ছাড়া যেসব স্থান তাদের আওতায়, সেসব স্থানে সহিংসতার পরিমাণ কেমন তাও দেখা উচিত।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ফর্টিফাই রাইটসের সিনিয়র অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট প্যাট্রিক ফোংসাথর্ন ও সাংবাদিক তানভীরুল মিরাজ রিপন প্রমুখ।
Posted ৭:৫১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta