কক্সবংলা ডটকম(৩ মে) :: বিজ্ঞানীরা ইলিশের অন্ত্রে কিছু নতুন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করেছেন। তারা বলছেন, এসব ব্যাকটেরিয়া ইলিশকে রোগের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইজিবিই) এবং যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশের অন্ত্রের অনুজীবসমূহের গঠন ও বৈচিত্র্য উদঘাটন করা হয়।
ওই গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন বশেমুরকৃবির আইজিবিই এর অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম।
গবেষণা প্রবন্ধটি উচ্চ ইমপ্যাক্ট বিশিষ্ট বিজ্ঞান সাময়িকি প্লস ওয়ান-এ প্রকাশ হয়েছে।
বিজ্ঞানীদল মেটাজিনোমিক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ইলিশ মাছের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং এদের আপেক্ষিক সংখ্যা নির্ণয় করেন।
বাংলাদেশে ইলিশের প্রধান প্রধান আবাসস্থল, যথাক্রমে— কক্সবাজার, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, মুন্সিগঞ্জ ও রাজশাহীতে পাওয়া ইলিশের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার কৌলিক বৈশিষ্ট্যাবলি এবং স্বাতন্ত্র্য বিশ্লেষণ করেন।
তারা ইলিশের অন্ত্রে অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কিছু নতুন ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান।
এই গবেষণার দল নেতা ড. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এই গবেষণায় শনাক্তকৃত ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে ল্যাকটোকক্কাস, মরগানেলা, এন্টেরোকক্কাস, অ্যারোমোনাস, শিওয়েনেলা, পেডিওকক্কাস, লিওকোনস্টক, স্যাক্কারোপোরা এবং ল্যাকটোব্যাসিলাস উল্লেখযোগ্য প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া।
মাছের বাস্তুতন্ত্রে বিচরণকারী এসব প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ইলিশের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়া এসব ব্যাকটেরিয়া ইলিশের স্বাদ গঠনেও ভূমিকা রাখে।
উল্লেখ্য, প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া হলো জীবদেহে বসবাসকারী অণুজীব, যা পোষকের বৃদ্ধি, উন্নয়ন, রোগ প্রতিরোধসহ প্রতিবেশে অভিযোজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই গবেষণা দলের অন্যতম প্রধান সদস্য ড. এম. নাজমুল হক বলেন, গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো, নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়াগণের (সাইনোবাকা, সায়েনোকক্কাস, গেমাটা সেরেনিকক্কাস, স্যাক্কারোপলিস্পোরা এবং পলিনেলা) শনাক্তকরণ, যা পূর্বে কোনো মিঠাপানি বা সামুদ্রিক মাছের প্রজাতিতে লক্ষ করা যায়নি।
এই ধরনের অগ্রসরমান গবেষণা ইলিশ মাছের টেকসই উন্নয়নে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সমুদ্র থেকে নদীতে বিচরণকারী ইলিশ মাছ কখনো রোগাক্রান্ত হয়েছে, এমন কোন গবেষণা প্রবন্ধ বা প্রতিবেদন নেই।
সুতরাং নতুন আবিষ্কৃত প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলো ইলিশের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
এসব ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করে বাণিজ্যিকভাবে প্রোবায়োটিক হিসেবে দেশের মৎস্য চাষে ব্যবহারে সম্ভাবনার কথাও বলেন তারা।
উল্লেখ্য, ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং এদেশের একটি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃত।
এটি একটি আইকনিক ফ্ল্যাগশিপ প্রজাতি হিসেবে বিখ্যাত।
ব্যতিক্রম স্বাদের কারণে ইলিশ মাছের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক মূল্য এবং দেশ ও বিশ্বব্যাপী এর উচ্চ চাহিদা রয়েছে।
এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক আন্তঃসীমান্ত প্রজাতি হিসাবে পরিচিত।
উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক গুরুত্ব ছাড়াও, ইলিশের অপরিসীম আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে।
Posted ২:৫৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta