কক্সবাংলা ডটকম(৪ জুলাই) :: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ ইসরাইল সফরে যাচ্ছেন। তিনিই হতে যাচ্ছেন ইসরাইল সফরকারী প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ২৫ বর্ষপূর্তিতে নরেন্দ্র মোদি এ সফরে যাচ্ছেন। খবর এএফপির।
ইসরাইলের সঙ্গে দিন দিন বেড়ে চলা সম্পর্কের সূত্র ধরেই মোদি ইসরাইল সফরে যাচ্ছেন আর এ সম্পর্কের মূলে রয়েছে কয়েকশ’ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক এবং ইসরাইল তাদের অন্যতম সরবরাহকারী। ইসরাইলি গণমাধ্যম বলছে দুটো দেশ প্রতি বছর শত কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তিতে আবদ্ধ থাকতে চায়। মোদি ক্ষমতায় আসার পর ইসরাইলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বড় অস্ত্র চুক্তি করেছে ভারত। গত এপ্রিলে ভারতে ২০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দেয় ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এটাকে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় অস্ত্রচুক্তি বলে মনে করা হয়। পরবর্তী সময় ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে আরও ৬৩ কোটি ডলারে ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির ঘোষণা দেয় ইসরাইল।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিভিন্ন ইস্যুতে সমর্থন লাভের জন্য ইসরাইল অব্যাহতভাবে বন্ধু খুঁজে চলেছে এবং ভারত হতে যাচ্ছে নতুন সেই বন্ধুদেশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নরেন্দ্র মোদির আসন্ন সফরকে ইহুদিবাদী ইসরাইল ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
ইসরাইলের বিশ্লেষকরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি তেল আবিব সফরে গিয়ে সম্ভবত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ শহরে যাবেন না। সাধারণত বিদেশি কোনো প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী ইসরাইল সফরে গেলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও দেখা করেন। তবে, নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন ইসরায়েলি বিশ্লেষকরা। অবশ্য, গত মে মাসে ফিলিস্তিনি স্বশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নয়াদিল্লি সফর করেছেন এবং সে সময় তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
ভারত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার খাতিরে সবসময় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ভারতের লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার জন্য ভারত প্রথম দিকে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী ছিল না। হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা মোদির সঙ্গে ইসরাইলের উগ্র মুসলিম বিদ্বেষী নেতা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠতাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
ভারত ও ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মোদির ইসরায়েল সফরকে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তির বৃহত্তর প্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারে এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দুই দেশের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একদিকে ভারত তার সোভিয়েত আমলের সামরিক ব্যবস্থা হালনাগাদ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের প্রধান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়েছে ইসরায়েল।
এদিকে দুই রাষ্ট্রনেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানয়াহুর সাক্ষাৎ-কে কেন্দ্র করে সাজোসাজো রব গোটা ইজরায়েলজুড়ে৷ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ইজরায়েল সফর হতে চলেছে আর পাঁচটা সফরের থেকে একদম আলাদা৷ কী থাকছে সেই সফরে?
জানা গিয়েছে, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে মোদী অবতরণের পর থেকেই তাঁকে সঙ্গী হবেন৷ এমনকি প্রটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফেরার সময় বিমানবন্দরেও ছাড়তে আসবেন তিনি৷
ইজরায়েল প্রশাসনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পোপের ক্ষেত্রেই এই ধরনের স্বাগত জানানোর আয়োজন করা হয়৷ ইজরায়েল সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে হোটেলে ছিলেন, সেই কিং ডেভিড হোটেলেই থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী৷
সম্পূর্ণ সফরে প্রধানমন্ত্রীর খাবারের দায়িত্বে থকছেন ইজরায়েলে ব্যবসা করা প্রবাসী ভারতীয় তথা বিজেপি অন্যতম সমর্থক রিনা পুঝ্কারনা৷ তাঁর রেস্তোরা থেকেই আসবে প্রধানমন্ত্রী জন্য সমস্ত শাকাহারি সুস্বাদু খাবার৷ মোদীর থাকছে না কোনও আমিষ৷ তবে প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীদের জন্য থাকছে মাছের ব্যবস্থা৷
ইজরায়েলের সংবাদ সংস্থা জেরুজালেম পোস্টে প্রকাশিত হয়েছে, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন সফরে গিয়েছিলেন তখন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল হোটেল থেকে বার৷ এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রেও থাকছে সেই ব্যবস্থা৷ এই প্রথম দুই রাষ্ট্রনেতার জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টার্অ্যাকশনের৷ জানা গিয়েছে, ফেসবুক বা পেরিস্কোপে লাইভ চ্যাট করতে পারেন দুই প্রধানমন্ত্রী৷
Posted ২:০২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৪ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta