কক্সবাংলা ডটকম(১৮ মে) :: ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ড নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খানকে ডেকে পাঠিয়েছেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন আরাস্তু খান নিজেই।
ব্যাংকের জাকাত ফান্ডের ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর জাকাত ফান্ডে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত বোর্ড সভায় গৃহীত হয়নি উল্লেখ করে আরাস্তু খান বলেন, ‘ব্যাংকের ১৯ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা এবং সিএসআর সুবিধাভোগীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আসন্ন রমজানে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের ১৩ কোটি টাকার ইফতার বিতরণের সিদ্ধান্তও হয়নি।’
আরাস্তু খান উল্লেখ করেন, ‘ব্যাংকের ভাইস-চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিত্তিহীন তথ্য সংবাদ মাধ্যমে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে আছেই মাত্র ২৮ কোটি টাকার মতো। অথচ গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর জাকাত ফান্ডে দেওয়া হবে ৪৫০ কোটি টাকা।
এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে জানতে চান যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত বোর্ড কেন নিলো? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আসলে এই বছরে ইসলামী ব্যাংক ৪৫০ কোটি টাকা নিট প্রফিট করেছে। জাকাত ফান্ডের বিষয়ে ওই পর্ষদে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরাস্তু খান জানান, ‘ব্যাংকের পর্ষদে কোনও সিদ্ধান্ত হলে, তা চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য কেউ প্রকাশ করতে পারে না। অথচ সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তার এই মিথ্যাচারের কারণে প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ ড্যামেজ হয়েছে। সরকারের ইমেজ ড্যামেজ হয়েছে। ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের ইমেজও ড্যামেজ করা হয়েছে। সৈয়দ আহসানুল আলম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।’
সাংবাদিক সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সৈয়দ আহসানুল আলম ইনডেপেনডেন্ট পরিচালক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে এখনই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তবে আগামী বোর্ড সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ চাইলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন।’ তবে তার পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে কোনও চাপ নেই বলেও তিনি জানান।
ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩৪৭ কোটি টাকা জাকাত ফান্ডে এসেছে। এরমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৭৪ কোটি টাকা। আর কিছু টাকা ট্যাক্সের জন্য আলাদা করে রেখে এ ফান্ডে বিতরণ উপযোগী টাকা আছে ২৮ কোটি।’
সৈয়দ আহসানুল আলাম গণমাধ্যমকে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তার বেশিরভাগই সত্য নয় বলে দাবি আরাস্তু খান বলেন, ‘গত বোর্ডসভায় ব্যাংকের সিএসআর সুবিধাভোগীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংক মুনাফার একটি বড় অংশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ দুস্থ ও আর্ত-মানবতার সেবায় ব্যয় করছে। নিয়ম মেনে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ করা হয়। ব্যাংকের ১৯ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে খতিয়ে দেখার কোনও সিদ্ধান্ত বোর্ডসভায় নেওয়া হয়নি।
এ বছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। বোর্ডসভার বরাত দিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাংকের ১৩ কোটি টাকার ইফতার বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাও ঠিক নয়।
ব্যাংকের বোর্ডসভার যেকোনও সিদ্ধান্ত বোর্ডের কার্যবিবরণী স্বাক্ষরের আগে বোর্ডের সিদ্ধান্ত হিসেবে কোনও বক্তব্য দেওয়া বোর্ডের চেয়ারম্যানের পক্ষেও উচিত হবে না।’ ব্যক্তিগতভাবে কোনও পরিচালকের বক্তব্য বোর্ডের বক্তব্য হতে পারে না বলে জানান আরাস্তু খান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ লিখেছেন, অশুভ শক্তি ইশারায় আমার শত চেষ্টার পরেও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি পুনর্বাসিত হয়েছে। জাতির পিতার খুনিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ফিরে আসছেন নেতৃত্বে।
Posted ১১:৫৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta