কক্সবাংলা ডটকম(২০ মে) :: চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে এবার পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের ১০ পরিচালক। শনিবার এক বিবৃতিতে ইসলামী ব্যাংক ডিরেক্টর ফোরামের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়।
সভায় পরিচালকদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু বোর্ডের সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদ না মানার কারণে পরিচালকরা এক সঙ্গে পদত্যাগের হুমকি দেন।
এদিকে আলোচিত ইসলামী ব্যাংককে বদলাতে এসে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা নিজেরাই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খান দায়িত্ব নেওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই ব্যাংকটির পরিচালকরা দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে ব্যাংকটিতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা।
ব্যাংকটির শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘দ্বন্দ্ব পরিচালনা পর্ষদে হলেও এর প্রভাব পড়ছে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাতেও। পর্ষদের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে এর প্রভাব গ্রাহক পর্যায়ও পড়তে পারে।’
এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, ‘ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কেউই অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলমকে পছন্দ করছেন না। তবে অধ্যাপক আহসানুল আলম যে সব বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করছেন, এর ফলে গ্রাহকদের মধ্যে কিছুটা হয়ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’ আরাস্তু খান বলেন, ‘তার মিথ্যাচারের কারণে প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ ড্যামেজ হয়েছে। সরকারের ইমেজ ড্যামেজ হয়েছে। ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টের ইমেজও ড্যামেজ করা হয়েছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার আরাস্তু খান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের ভাইস-চেয়ারম্যান ভিত্তিহীন তথ্য সংবাদ মাধ্যমে দিয়েছেন।’ সৈয়দ আহসানুল আলমকে পদত্যাগের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে যে অভিযোগ তিনি করেছেন, তাও ভিত্তিহীন বলে মনে করেন আরাস্তু খান।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। এ কারণে তার ওপর বিরক্ত হয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালকরা শনিবার বসেছিলেন। সেখানে তারা ডাইরেক্টস ফোরাম গঠন করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছেন, যেকোনও পরিচালককে পদত্যাগ করানো হলে এক সঙ্গে একডজন পরিচালক পদত্যাগ করবেন।’
এদিকে গণমাধ্যমে অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলমের পক্ষে বেশ কয়েকজন পরিচালকের স্বাক্ষরসহ একটি মিডিয়া রিলিজ পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনও পরিচালককে হুমকির মাধ্যমে পদত্যাগ করানোর চেষ্টা করা হলে অনেক পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করবেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিচালকদের সরাতে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হুমকির মুখে যদি কোনও পরিচালককে পদত্যাগ করানো যায়, তবে একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পর্ষদ থেকে বিদায় নিতে হবে পরিচালকদের।
মিডিয়া রিলিজ প্রসঙ্গে সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্য আমার পক্ষে রয়েছেন। তাকে দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য করা হলে অন্যরাও পদত্যাগ করবেন। তিনি বলেন, ব্যাংকটির ২১ জন পরিচালকের মধ্যে নয়জন বিবৃতিতে সই করেছেন। এছাড়া তিন জন বিদেশে রয়েছেন, যারা এই বিবৃতিতে একমত পোষণ করেছেন।
তার পক্ষে বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ মে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সৈয়দ আহসানুল হকসহ অন্য পরিচালকদের পদত্যাগ করতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। তারা (সদস্যরা) এই হীন বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রের নেপথ্য শক্তিকে বের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আনার সিদ্ধান্ত নেন।
গত ১১ মে সৈয়দ আহসানুল আলমের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ পায়। ওই দিন তিনি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ইসলামী ব্যাংকে আবারও জামায়াত সমর্থকদের শক্তি সংহত হচ্ছে এবং তাতে সরকারের অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে যাচ্ছে।’ অন্যদিকে আহসানুল হকের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন সংবাদ সম্মেলনে আরাস্ত খান।
ব্যাংকটির পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘বাইরে থেকে আমি দ্বন্দ্বের বিষয়ে সবেমাত্র শুনেছি। কিন্তু ভেতরে কী হচ্ছে তা না জেনে কোনও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি বেসরকারি এই ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক পরিবর্তন আানা হয়। ওই দিন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), নির্বাহী ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৮৩ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত হিসেবেই পরিচিত ছিল এই ব্যাংক।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা ট্রাস্টের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা মুস্তাফা আনোয়ারের জায়গায় বসানো হয় সরকারের সাবেক সচিব আরাস্তু খানকে। পদত্যাগে বাধ্য করানো হয় ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে। নতুন এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মো. আবদুল হামিদ মিঞাকে।
Posted ৯:০৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta