শাহিদ মোস্তফা শাহিদ,সদর(৭ জুলাই) :: কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওর বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি কমে গেছে। বিপদসীমা থেকে নেমে এসেছে ফুলেশ^রী নদীর পানি। তবে পানি কমে যাওয়ায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে নদীর কয়েকটি বাঁধ। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে রয়েছে ঘরবাড়ীর গৃহস্থরা। এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নাইক্ষ্যংদিয়া রমজান সওদাগরের দোকানের পশ্চিম পাড়, জালালাবাদ পূর্ব ফরাজী পাড়া ও মিয়াজী পাড়া, পাল পাড়া, ইসলামাবাদ জাহানারা বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন কয়েকটি পয়েন্টের বাঁধগুলো। যে কোন মুহুর্তে বন্যার পানির তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা।
বৃহষ্পতি ও জুমাবার বৃষ্টি কমে আসার সাথে সাথে অনেকটাই কমে আসে বন্যা ও ফুলেশ^রী নদীর পানি। ৬ ইউনিয়নের সবকটি ওয়ার্ডে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বানভাসী মানুষের আশ্রয়স্থল হয়েছিল স্থানীয় সাইক্লোন সেল্টারগুলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবস্থান করছিল ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। এবারের বন্যায় অন্তত ৫/৬ টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে কৃষকের বীজতলা, শাক সবজি। ৫দিন ধরে মানুষ পানিবন্দী থাকার পর বৃহষ্পতি ও জুমাবার সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে ঢলের পানি। তবে ওজানে ভারী বর্ষণ কমে গেলে ঢলের পানি অনেকটা কমে যাবে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
এদিকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন জালালাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব লরাবাক ইদ্রিচপুর, পালাকাটা, পেচা পাড়া, মধ্যম পালাকাটা, নাইক্ষ্যংদিয়া, মোহনবিলা, ইসলামাবাদের ইউছুপেরখীল, হরিপুর, পশ্চিম খোদাইবাড়ীর হাজার হাজার মানুষ। ঈদগাঁও নদীর ২ কূলে ভাঙতে শুরু করেছে বাঁধগুলো। পানির গতিপথ সরাসরি বাঁধের সাথে ধাক্কা লেগে আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। দীর্ঘ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে অনেকাংশ নদীর নিকটে চলে এসেছে। বন্যার পানির তোড়ে বাঁধগুলো ভেঙ্গে গেলে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ভেসে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ইতিপূর্বে কক্সবাজার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিআরডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জালালাবাদের ভাঙ্গনটি পরিদর্শন করেছেন। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধটি বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিকভাবে সংস্কার করার জন্য ইতিমধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছে। বন্যার পানি কমে গেলে সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হবে বলে জানান পাউবোর কর্মকর্তারা।
জালালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ জানান, রাবারড্যাম পয়েন্টের বাধঁটি ভেঙ্গে গিয়ে সরাসরি আঘাত হেনেছে ফরাজী পাড়া সড়কে। যার কারণে চরম আতঙ্কে রয়েছে এখানকার মানুষ। ইতিমধ্যে বাঁধটি সংস্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি। অপরদিকে চৌফলদন্ডীর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, চৌফলদন্ডী বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে নিয়মিত পানি প্রবেশ করায় মানুষ নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে।
পোকখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দীন জানান, তার ইউনিয়নে ‘রোয়ানো’র আঘাতে ক্ষতবিক্ষত গোমাতলীর বেড়ীবাঁধটি সংস্কার না হওয়ায় সেখানকার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দূর্ভোগ। এদিকে ঈদগাঁওয়ে’র সাথে ফরাজীপাড়া ও পোকখালীর এবং ঈদগড়ের সড়ক যোগাযোগ অদ্যবধি বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে করে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জরুরী ভিত্তিতে বাধ ও সড়ক নির্মাণ করা না হলে বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকা বারবার বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার সমুহ আশংকা রয়েছে।
এদিকে টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন স্থানে ঢলের পানি প্রবেশ করায় বানভাসী মানুষকে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে।
৭ জুলাই একই দিন প্রায় ১২’শ পরিবারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদের নেতৃত্বে দুর্গতদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। ইউনিয়নের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ মাছুয়াপাড়া, গোলপাড়া, মোহনভিলা পালাকাটার ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড ছাতিপাড়া, পূর্বলরাবাক, দঃ লরাবাক ও চরপাড়া এলাকার গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
অবশ্য বিকেলে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠণিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী জালালাবাদের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাসমুহ ভাঙ্গা সড়ক ও বেড়িবাধ পরিদর্শন করেন এবং দুর্গত মানুষের সাথে কথা বলেন। শ্রীঘ্রই ভাঙ্গা বেড়িবাধ ও সড়ক পুণঃনির্মাণের জন্য সংশ্লিদের সাথে তিনি কথা বলবেন বলে উপস্থিতদের আশ্বস্ত করেন।
এসময় জালালাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ, ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ সাইফুল হক, সেলিম উল্লাহ ঈদগাহ রিপোর্টার্স সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, তার সফরসঙ্গীগন ও এলাকার বিশিষ্টজনেরা তার সাথে ছিলেন। একই দিন বিকেলে জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ হোছাইন তানিমের নেতৃত্বে একটি দল জালালাবাদের ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন শেষে দূর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
এসময় ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এস. এম. তারিকুল হাসান তারেক, ঈদগাঁও সাংগঠণিক উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ উদ্দিন রাশেল, সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা বিশাদসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা তার সাথে ছিলেন। এলাকাবাসীর মধ্যে মোঃ শফিকুল ইসলাম, আবছার কামাল এবং আবদুর রহিম প্রতিনিধিদলের নিকট ক্ষয়ক্ষতির বিবরন তুলে ধরেন।
Posted ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৮ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta