মো. রেজাউল করিম, ঈদগাঁও(২ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে তেহেরী খেয়ে আক্রান্ত হয়েছে অর্ধশতাধিক এসএসসি পরীক্ষার্থী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তেহেরী সরবরাহকারী হোটেলটি সিলগালা করে দিয়েছেন। ২রা জানুয়ারী বিকেলে বাজারের প্রধান সড়কের এ হোটেলটিতে তিনি এ অভিযান চালান।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা থার্টিফাস্ট নাইটে বাজারের অন্যতম খাবার সরবরাহকারী অভিজাত প্রতিষ্ঠান হোটেল পূবানী থেকে ৬৫ প্যাকেট তেহেরী কিনে খায়। শিক্ষার্থীরা তাদের হোস্টেলে এ খাবার নিয়ে যায় ঐদিন রাত সোয়া ৯টার দিকে। এর পরদিন কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পাশর্^বর্তী মডার্ণ হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক কেয়ারে ভর্তি হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছু ছাত্র নিজ নিজ বাড়িতে চলে যায়। খবর পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জান্নাত, অন্য শিক্ষক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে গিয়ে তাদের দেখতে যান ও খোঁজ খবর নেন। ছাত্রাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আলম জানান, ১লা জানুয়ারী দুপুর থেকে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হতে শুরু করে। তার মতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী এভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জান্নাত জানান, কি কারণে একই সাথে এত অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী অসুস্থ হলো তা নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্স, হাসপাতালটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. এম. ইউসুফ আলী, হোটেল পূবানীর স্বত্ত্বাধিকারী বাবু উত্তম রায় পূলক, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সোহেল জাহান চৌধুরী, স্থানীয় ২ চেয়ারম্যান যথাক্রমে আলহাজ¦ ছৈয়দ আলম, ইমরুল হাসান রাশেদ, কর্মরত শিক্ষকবৃন্দ, আক্রান্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা চালান।
উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন প্রিন্স জানান, ফেইসবুক মারফত তিনি প্রথমে খবরটি পান। পরে শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে আসেন। এসময় তিনি সংশ্লিষ্টদের সাথে এ ব্যাপারে কথাবার্তা বলেন। বিকেল নাগাদ তিনি হোটেলটি সিলগালা করে দেন।
ঈদগাঁও চেয়ারম্যান আলহাজ¦ ছৈয়দ আলম বলেন, খবর পেয়ে তিনি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের বৈঠকে উপস্থিত হন। রাতে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিল।
এদিকে ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সিরাজুল হক এক লিখিত বক্তব্যে জানান, বিষয়টি নিয়ে এলাকায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফেইসবুকে অতিরঞ্জিত করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় ইউএনও দোকানটি সিলগালা করে দেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রশাসন বরাবর কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
এছাড়া হোটেল মালিক উত্তম রায় পুলক, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম বসে বিষয়টির এক প্রকার সম্মানজনক সূরাহাও করেন। এর পরেও সিলগালার ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ী মহল চরমভাবে হতাশ হয়েছেন। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবরে অবগত করা হচ্ছে বলে জানান।
অন্যদিকে বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ ছাড়াই দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী এ হোটেলটি সিলগালা করে দিয়ে মালিককে হেনস্থা করায় জোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃহত্তর ঈদগাঁওতে খাদ্যের জগতে এটিই একমাত্র অভিজাত প্রতিষ্ঠান। যা যুগ যুগ স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের জনগণকে সেবা দিয়ে আসছে। বার বার প্রশাসনিক অভিযানে হোটেল মালিক জনগণের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের মতে ঠুনকো অযুহাতে এভাবে বাজারের সৎ এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের হয়রানি করলে আগামীতে কোন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী বাজারে বিনিয়োগ ও সেবাদানে আগ্রহী হবে না।
ঈদগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীদের পক্ষে লিখিত পত্রে স্বাক্ষর দেন চাউল ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম, বাবুল রুদ্র, মো. নুরুল হক, কসমেটিক্স ব্যবসায়ী আয়ুব, ঔষধ ব্যবসায়ী অজিত কুমার দে, মো. হুমায়ুন কবির, ক্লথ স্টোর মালিক পরিমল কান্তি দে, এনাম প্লাসের আবু হানিফ টিপু, ঝাল বিতানের জমির হোসেন, সুপার টেইলার্সের মিলন পাল, অনিক ফ্যাশনের ছৈয়দ আলম, সৌখিন বস্ত্র বিতানের রায়হান আমিন, সৌদিয়া স্বর্ণ বিতানের হাজী সেলিম উল্লাহ, আলম ফ্যাশনের নুরুল আলম, রিদুয়ান গার্মেন্সের মৌলানা কামেল ইবনে শরীফ, একতা গার্মেন্টস স্টোরের স্বপন কান্তি দে, ভাই ভাই স্টোরের রতন কান্তি দে, আল হোছাইন স্টোরের মো. সোহেল, বিনিময় স্টোরের উত্তম কান্তি দে, মা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রভাত কর্মকার, বিনিময় জুয়েলার্সের পরিমল দে, বিনিময় জুতা বাজারের নিরব কান্তি দে, কাঁচামাল দোকানের আবছার ও আজিজুল হক বায়জিদসহ অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী।
Posted ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta