বিশেষ প্রতিবেদক,সদর(১১ আগস্ট) :: কক্সবাজার সদর মডেল থানার আওতাধীন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআইর বিরুদ্ধে আটক বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ওয়ারেন্ট, ইয়াবা, অবৈধ গাড়ী, নিরীহ ব্যক্তিদের ধরে এনে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়াসহ অহরহ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তার গ্রেফতার বাণিজ্যের কারনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ। এ বাণিজ্য থেকে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ী এমনকি নিরীহ শ্রমিকরাও রক্ষা পাচ্ছে না। এতে করে পুরো বৃহত্তর ঈদগাঁওর জনসাধারণের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কেন্দ্রের ওই এএসআই যোগদানের পর থেকে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলেও তথাকথিত অভিযোগ এনে গ্রেফতার করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে পুলিশের পোষ্য দালালরা আটককৃতদের ছাড়ানোর বিষয়ে মধ্যস্থতা করছে এবং পুলিশ ও দালাল চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
সচেতন এলাকাবাসী উক্ত এএসআইকে প্রত্যাহারের দাবীসহ গ্রেফতার বাণিজ্য বন্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান তদন্ত কেন্দে যোগদানের পর টাকার জন্য যেন মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি। গত ৬ আগষ্ট রাতে পোকখালী ইউনিয়নের পশ্চিম ইছাখালী ঘাটঘর এলাকা থেকে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি রহমত উল্লাহকে আটক করেন। পরে ২৫ হাজার টাকায় দফারফার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। পরে অবশ্য স্থানীয় সাংসদের কল পেয়ে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন।
এছাড়া পূর্ব ইউছুপেরখীল গ্রামের আজম ও কবির নামের ২ ছাত্রলীগ নেতাকে ধরে এনে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এছাড়া বৃহত্তর ঈদগাঁওর বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষদের আটক করে বাণিজ্য করছেন তিনি।
পোকখালীর রহমত উল্লাহ জানান, পুলিশ আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। একটি মামলার ৩ বার জামিন নামা জমা দেওয়ার পরও বারবার ধরে নিয়ে যাচ্ছে এএসআই । আবার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ২০১২ সালে স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহলের ইশারায় সীমানা বিরোধের জেরে একটি মামলা হয়েছিল। ঐ মামলায় জামিন নামা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে জমা দেওয়ার পরও ২০১৬ সালে আরেকবার গ্রেফতার করেছিল। পুনরায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে আবারো জামিন নামা জমা দেওয়া হয়। তারপরও বারবার ধরে নিয়ে আসছে।
সর্বশেষ গত ৯ আগষ্ট রাতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তার বাড়ির সামনে থেকে মৃত আবু শামার পুত্র মোক্তার ও তাকে ধরে নিয়ে আসে। জামিন নামা দেখালে ছেড়ে দেয়। এভাবেই অহরহ ব্যক্তিদের কাছ থেকে আটকের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। এমনকি স্থানীয় দালালদের সাথে জোট বেঁধে মানুষকে হয়রানি করে আসছে উক্ত এএসআই।
আওয়ামীলীগ নেতা আবদুর রহমান জানান, এভাবেই আটক বাণিজ্য অব্যাহত রাখলে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি দিনদিন প্রশ্নবিদ্ধ ও ক্ষুন্ন হবে। এছাড়া নিরীহ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের আটক করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
রহমত উল্লাহ আরো জানান, যে কোন সময় অস্ত্র ও মাদক দিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে। তিনি এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করতেও প্রস্তুতি নিয়েছেন।
এএসআইর বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তি এ ধরণের অভিযোগ উত্থাপন করেন। অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাকে প্রত্যাহারের জন্য দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এএসআই বলেন, ওয়ারেন্ট কপি নিয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে আদালতের পরোয়ানাভূক্ত আসামীকে ধরেছি। কাউকে হয়রানি করিনি এবং বাণিজ্যও হয়নি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত বড়–য়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
Posted ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta