মোঃ রেজাউল করিম,ঈদগাঁও(২৪ আগষ্ট) :: কক্সবাজার সদরের জালালাবাদ চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের তান্ডবলীলায় ফুঁসে উঠেছেন ঈদগাঁও বাজারের ব্যবসায়ীরা। ভাঙচুর, মারধর ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এক ঘন্টা দোকান পাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে বাজারবাসী। তান্ডবলীলা চলাকালে পুলিশের ২ কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
২৪ আগষ্ট দুপুর দেড়টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাজারে চলেছে এ ঘটনা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সমাবেশে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের গ্রেফতার করা না হলে শুক্রবার থেকে হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচীর হুঁশিয়ারী দেয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, বৃহষ্পতিবার দুপুরে ঈদগাঁওর সেবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতাল পরিচালক ও মালিক মিজানুর রহমানকে ডেকে আনতে জালালাবাদ চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ তার পরিষদের ৪ গ্রামপুলিশকে পাঠান।
তারা হাসপাতালে উঠে মিজানকে খুঁজতে থাকলে সেখানে কর্মরতরা তিনি ৩য় তলায় বাসায় আছেন বলে জানায়। পরে তারা তার বাসায় গিয়ে চেয়ারম্যান তাকে শালিসে ডেকেছে বলে জানায়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি, বাক বিতন্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এর সাথে যোগ দেন হাসপাতালে অবস্থানরত মিজানের ছোট ভাই ও স্টাফ রুবেল। পরে গ্রাম পুলিশরা হাসপাতাল ত্যাগ করে চেয়ারম্যানের কাছে চলে যায়।
চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে তার ঘনিষ্টজন ওজির আলীর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন লোককে আবারো হাসপাতালে পাঠান। তারা সেখানে উপস্থিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি ও মারধর হয়। এতে ওজির আলীসহ কয়েকজন আহত হয়। খবর পেয়ে চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ শতাধিক লোক নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেন। পরে উপস্থিত লোকজন সেখানে ভাঙচুর ও তান্ডবলীলা চালায়।
এসময় মালিক মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী, ৫ মাসের শিশুপুত্র, মিজানের ছোট ভাই ও স্টাফ রুবেলসহ অনেককে লাঠিসোটা নিয়ে মারধর করে। তাদের হামলায় হাসপাতালটির মূল্যবান কাঁচের গ্লাসসহ দরজা-জানালা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।হামলাকারীরা মিজানের বেডরুমে গিয়েও তছনছ চালায়।
খবর পেয়ে ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের ২য় কর্মকর্তা দেবাশীষ সরকার, নবাগত এএসআই লিটনুর রহমান জয়সহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে যায়। এসময় তারাও হামলাকারীদের থেকে রেহাই পায়নি। দূর্বৃত্তরা ২য় কর্মকর্তা দেবাশীষ সরকার ও কনষ্টেবল ইউছুপ আলীকে বেধড়ক পিটায়।
অন্যদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে বাজারের ব্যবসায়ী ও জালালাবাদ যুবলীগ সভাপতি হাসান তারেক ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। অপ্রীতিকর এ অবস্থার প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
উল্লেখ্য, ৩ লাখ টাকা পাওনার দাবীতে এক লোক জালালাবাদ চেয়ারম্যানকে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত বিচার দেন। চেয়ারম্যান মিজানকে উক্ত বিচারে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি চেয়ারম্যানের আহবানে সাড়া না দেয়ায় মূলত এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আশপাশের লোকজন জানান, হামলার ঘটনায় জালালাবাদ ইউনিয়নের মেম্বার সেলিম উল্লাহ, মেম্বার মোক্তার আহমদসহ অনেকে অংশ নেন। এদিকে হামলার ঘটনার পর ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদের আহবানে ঘন্টাব্যাপী দোকান পাট বন্ধ রেখে বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন ব্যবসায়ী ও বাজারবাসী।
জালালাবাদ প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ও সদর যুবলীগ সহ-সভাপতি ওসমান সরওয়ার ডিপোর সঞ্চালনায় বাজারের পুরনো রূপালী ব্যাংক ভবন চত্বরে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে অভিযুক্ত জালালাবাদ চেয়ারম্যান ও তার লোকদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান-২, ঈদগাঁও ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী, ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা পরিষদ সভাপতি সিরাজুল হক, জেলা যুবলীগ সাংস্কৃতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির হুমু, জালালাবাদ আ.লীগ সভাপতি সেলিম মোর্শেদ ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক ডা. এম. মমতাজুল ইসলাম রিয়াদ, ইসলামাবাদ এমইউপি ও ইউনিয়ন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জালালাবাদ প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ওসমান সরওয়ার ডিপো, সদর যুবলীগ নেতা নাছির উদ্দীন জয়, চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে মারধর ও নির্যাতনের শিকার মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী প্রমুখ।
বক্তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় না আনলে ধর্মঘট ও হরতালের মত কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে পুরো ঈদগাঁও বাজার অচল করে দেয়ার হুঁশিয়ারী দেন।
সমাবেশে জালালাবাদ চেয়ারম্যানের ভোট ডাকাতি, কারচুপি, অনিয়ম, দূর্ণীতি, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অব্যবস্থাপনার কথা প্রকাশ্যে তুলে ধরে অবৈধ (তাদের দাবীমতে) এ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জনগণের নিকট বিচার কামনা করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক এক টমটম চালক ও এক সাধারণ লোকসহ ঘটনায় অংশ নেয়া জালালাবাদ চেয়ারম্যানের ঘনিষ্টজন ওজির আলীকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঈদগাঁও ডায়াবেটিক এন্ড মডেল হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করেছে।
এলাকার পরিস্থিতি এখনো থমথমে। ব্যবসায়ী ও বাজারবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্র পুলিশের ইনচার্জ মো. খায়রুজ্জামান জানান, সামগ্রিক পরিস্থিতির ব্যাপারে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। সংঘটিত ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার ব্যাপারে জালালাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাবাদী একটি অংশের সালিস বানিজ্য ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়।
তার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ পুলিশকে উসকে দিয়ে হামলার শিকার উজির আলীসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৪ জন নিরপরাধ যুবককে আটক করিয়েছে। এছাড়া প্রতিপক্ষরা তুচ্ছ এ ঘটনাকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে তিনি জানান।
এলাকার নিরীহ লোকজনদের হয়রানিমূলক ধরপাকড় থেকে বিরত থাকা, পরিষদের চৌকিদার ও যুবক উজির আলীর উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার এবং আটক নিরীহ ৫ যুবককে ছেড়ে দেয়ার জন্য চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। জালালাবাদের ওয়ার্ড মেম্বার ওসমান সরওয়ার ডিপো এ ঘটনায় ইন্ধন যুগিয়েছে বলেও তিনি দাবী করেন।
Posted ১০:৩০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta