কক্সবাংলা ডটকম(১৯ জুন) :: ঈদকে সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স। গত মে মাসে প্রবাসীরা প্রায় ১২৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ। এটি আগের মাস এপ্রিলের তুলনায় ১৬ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় আড়াই শতাংশ বেশি। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের (জুলাই-মে) হিসাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই কমার হার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, রমজান এবং ডলারের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে। ঈদের মাস জুনে ১৫০ কোটি ডলার রেমিটেন্স আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলার ক্রমেই কিছুটা দুর্বল হওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে আগের চেয়ে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। এতে ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা বেশি পাচ্ছেন গ্রাহকরা। এছাড়া রোজা শুরু হওয়ায়ও প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চলতি মাসে দেশে বড় অংকের প্রবাসী আয় আসবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, রেমিটেন্স আহরণে সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে মানুষের লেনদেন বাড়ছে। সে কারণে রেমিটেন্স বাড়ছে। জুনে রেকর্ড সংখ্যক রেমিটেন্স আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিটেন্সের প্রবাহ নিন্মমুখী ছিল। এর জন্য বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করে আসছেন বিশ্লেষকরা। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমে যাওয়া, ডলারসহ বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান শক্তিশালী রাখা ও অবৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত হওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা অবৈধ উপায়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বেশ কিছু উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- রেমিটেন্স পাঠাতে ব্যয় কমানো, বিদেশে অবস্থিত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোকে রেমিটেন্স পাঠাতে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ দেশের ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসে প্রবাসীরা ১২৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। যা এপ্রিলে ছিল ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এছাড়া গত বছরের মে মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১২১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাইতে ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স আসে, যা বিগত ৩৪ মাসের মধ্যে ছিল সর্বনিন্ম। এরপর আগস্ট মাসে ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১০৫ কোটি ৬৬ লাখ ও অক্টোবরে আসে ১০১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স। নভেম্বরে তা ৯৫ কোটি ১৪ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল গত ৭২ মাসের মধ্যে সর্বনিন্ম। এরপর ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ ডলারে।
আর জানুয়ারি মাসে রেমিটেন্স আসার গতি আরেকটু বেড়ে আবার ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে তা আবার কমে ৯৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে, যা ছিল প্রায় ছয় বছরের মধ্যে সবনিন্ম। তবে মার্চে আবারও রেমিটেন্স প্রবাহ শত কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই মাসে এর পরিমাণ ছিল ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই মে) দেশে মোট রেমিটেন্স এসেছে এক হাজার ১৫৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল এক হাজার ৩৪৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের এ সময়ে প্রবাসী আয় কমেছে ১৯১ কোটি বা ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, এপ্রিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৩৫ কোটি ১৯ লাখ ডলার। এছাড়া বেসরকারি ৩৯টি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৮৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, বিদেশী নয় ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ২৬ লাখ ডলার ও বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।
Posted ২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৯ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta