কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জুন) :: ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। তবে কিছু কিছু প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ও পত্রিকা অফিস খোলা থাকবে চাঁদ রাত পর্যন্ত। এর মধ্যেই ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। অনেকেই আবার অফিসের কারণে ঈদের দু’এক আগেই বাড়ির পথ ধরবেন।
আবার দেখা যায় অফিসের কারণে হয়তো বাড়ির কর্তা আগে যেতে পারেন না, সে ক্ষেত্রে ভিড় এড়াতে পরিবারের অন্য সদস্যদের আগেই গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। তাছাড়াও টিকিট নিয়ে তো বড় ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয় প্রত্যেকবারই। আর ঈদের এই আনন্দ প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতেই নাড়ির টানে বাড়ির পথে ছুটে চলা।
তবে যখনই বাড়ি যান না কেন যাত্রাপথে সাবধান থাকুন। কেননা এ সময় রাস্তাঘাটে পোহাতে হয় হাজারো দুর্ভোগ। এক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে সহজেই ছোটখাটো বিভিন্ন সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
পরিকল্পনা করুন
বাসায় যাওয়ার দু-এক দিন আগে থেকেই পরিকল্পনা করুন। কোথায় যাচ্ছেন, সেখানকার আবহাওয়া কেমন, ক’দিন থাকবেন ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে প্রস্তুতি নিন। এর মাধ্যমে যেমন কম জিনিস বহন করা সম্ভব তেমনি পরে কোনো দরকারি সামগ্রী যেমন ওষুধ, চশমা প্রভৃতি বাড়িতে ফেলে আসার ধকলও পোহাতে হবে না।
বাড়ি থেকে বের হবার আগে
প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে অনেকেই ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। সেক্ষেত্রে বাড়ি থেকে বের হবার সময় অবশ্যই লাইট, ফ্যান, পানির কল, গ্যাস এসব চেক করে তারপর বাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ভালোভাবে সংরক্ষণ করে যাওয়া উচিত। বাড়ির চাবি মনে করে অবশ্যই সাথে নিন। কারণ ঈদের সময় ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা থাকে, কাজেই এসময় অনেক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
রোজাদারদের জন্য সতর্কতা
রোজা রেখে রওনা হলে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে কিছু খাবার সঙ্গে রাখুন, যেন ইফতারের সময় বাইরের খাবার খেতে না হয়। অনেকেরই মোশন সিকনেসের কারণে বাসে বা ট্রেনে উঠলে মাথা ঘোরে। বিভিন্ন কারণে মোশন সিকনেস হতে পারে। বেশি খারাপ লাগলে কেউ কেউ বমিও করে থাকেন। তারা রওনা হওয়ার আগেই বমিনাশক জাতীয় ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা পেতে সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেট রাখুন।
সঙ্গে পানির বোতল রাখুন
বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই অবশ্যই পানির বোতল সঙ্গে রাখুন। সুস্থ থাকতে নিজে পানি পান করুন এবং আপনার সঙ্গে কোনো ছোট কেউ থাকলে তাকেও পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পানে উৎসাহিত করুন।
পোশাক
ভ্রমণের সময় পোশাকের ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করুন। খুব বেশি আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তে বরং হালকা, আরামদায়ক ও সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোশাক ভ্রমণের জন্য নির্বাচন করুন। তাহলে ভ্রমণ আপনার জন্য অনেক আরামদায়ক হয়ে উঠবে।
জুতা
ভ্রমণের সময় আপনি কোন ধরনের জুতা পরে বের হলেন, সেটাও খেয়াল করুন। জুতা আরামদায়ক না হলে চলাফেরায় কষ্ট হয়। এ সময় মেয়েদের যতটা সম্ভব উঁচু হিলের স্যান্ডেল এড়িয়ে ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরা উচিত। কারণ দীর্ঘযাত্রার সময় পরে থাকা উঁচু হিলের জুতা পায়ের রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে এবং হাঁটুতে চাপ দেয়; ফলে পায়ের হাড়ে ব্যথা হতে পারে। আবার একেবারে নতুন জুতো পায়ে কোথাও রওনা হবেন না। এতে পায়ে ফোস্কা পড়তে পারে।
ছাতা ও চশমা
বাসে বা ট্রেনে ওঠার আগে বেশ খানিকটা পথ রোদে হাঁটার প্রয়োজন হয়। অনেকটা সময় আবার বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তখন সানবার্ন থেকে বাঁচতে ছাতা কিংবা রোদচশমা ব্যবহার করুন। শিশুরা সব সময় ছাতার নিচে থাকতে রাজি না হলে বিকল্প হিসেবে তাদের হ্যাট পরাতে পারেন।
হালকা ঘুমিয়ে নিন
যাত্রাপথে অনেকেই বই পড়ে সময় কাটান। ভালো অভ্যাস কিন্তু আপনার যদি মোশন সিকনেস থাকে, তাহলে দয়া করে এ কাজটি করতে যাবেন না। ট্রেনে দুলুনির সঙ্গে সঙ্গে বই পড়ার ফলে মাথা ঘোরা শুরু হতে পারে, যা থেকে পরে বমিও হতে পারে। তাই বাইরের দিকে তাকিয়ে না থেকে ও বই না পড়ে বরং চোখ বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে ঘুমিয়েও নিতে পারেন।
অপরিচিতদের খাবার এড়িয়ে চলুন
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় অপরিচিত কেউ কিছু দিলে খাবেন না। একই কথা প্রযোজ্য, ঈদ কাটিয়ে ফিরে আসার সময়ও। নতুবা বড় কোন দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে আপনার।
ফার্স্ট এইড বক্স
ঈদের সময় যেহেতু অনেক মানুষ একই বাড়িতে একত্র হন, ফলে যেখানে যাচ্ছেন সেখানে সব কিছু সব সময় হাতের নাগালে নাও পেতে পারেন। তাই যাওয়ার আগে ফার্স্ট এইড বক্স নিতে কিছুতেই ভুলবেন না। মনে রাখবেন, ঈদের সকালে অসতর্কতাবশত হাত কেটে গেলে কিংবা আপনার সন্তান খেলতে গিয়ে হাঁটু ছিলকে ফেললে এই ফার্স্ট এইড বক্সই হয়তো বড় বিপদ থেকে রেহাই দেবে। এছাড়া একটি নোটবুকে আপনার পরিচিত চিকিৎসক ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফোন নম্বর ও ঠিকানা লিখে রাখুন। এতে দুর্ঘটনা মোকাবিলা করা তুলনামূলকভাবে সহজ হবে।
শিশু ও বয়স্কদের খেয়াল রাখুন
ভ্রমণের সময় শিশুরা অধিক উত্তেজনাবশত প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। কখনো সে ব্যথা পায়, কখনো হারিয়েও যায়। এজন্য আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কার সঙ্গে খেলছে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। একেবারে ছোট শিশু নিয়ে ভ্রমণ না করাই উচিত। একান্ত প্রয়োজনে বের হতে হলে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করে তবেই বাসা থেকে বের হোন। শিশুদের বাইরের খোলা খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত রাখার জন্য বাসায় তৈরি কিছু মুখরোচক খাবার সঙ্গে নিয়ে নিন। তারা যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও তরল-জাতীয় খাবার খাচ্ছে কি না, সেদিকে সব সময় লক্ষ রাখুন।
এছাড়া বয়স্ক মানুষের জন্য বাসে বা ট্রেনে ওঠা কষ্টসাধ্য হয়ে থাকে। সে সময় তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। বাসের মধ্যেও যেন তারা একই ভঙ্গিতে বেশিক্ষণ বসে না থাকে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকুন।
গর্ভাবস্থায় ভ্রমণে করণীয়
বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা নিরাপদেই ভ্রমণ করতে পারেন। তবে দেহে ঝাঁকির উদ্রেক হয় এমন পথ যথাসম্ভব পরিহার করুন। প্রথম ৩ মাস ও সাত মাস বা ২৮ সপ্তাহ পেরোনোর পর ভ্রমণ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। গর্ভাবস্থায় একা ভ্রমণের চিন্তা করা ঠিক নয়। তারা না হয় এবারে ঈদের আনন্দ বাড়িতে বসেই উপভোগ করুন। অন্য যে কোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
ভ্রমণের সময় ব্যায়াম
বাসে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় অনেকক্ষণ বসে থাকার জন্য অনেকেরই পা ফুলে যায়। গন্তব্য স্থলে যাওয়ার জন্য ছয়-সাত ঘণ্টার বেশি একনাগাড়ে বসে থাকার প্রয়োজন হলে এমন ঘটনা বেশি ঘটে। এতে ভ্রমণ আনন্দদায়ক হওয়ার পাশাপাশি দেহও সতেজ থাকবে ।
* বসে থেকেই হাত কয়েকবার ওপর-নিচ করতে পারেন। এতে দেহের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
* বসে থেকেই একটু পর পর দুই পা গোড়ালির ওপর ভর করে কয়েকবার ঘুরিয়ে নিন।
* বাস থামলে বা গাড়ি থামিয়ে সুযোগ পেলেই হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করে শরীরের অবসাদ দূর করুন।
Posted ৬:২৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta