শহিদুল ইসলাম,উখিয়া(১৭ জুলাই) :: কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তি ২টিতে ত্রাণ সুবিধা নিচ্ছে একই রোহিঙ্গা পরিবার। নতুন আসা এসব রোহিঙ্গাদের সাথে পুর্বের আন – রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গাও মিশে গেছে।
কুতুপালং ও বালুখালী বস্তির দুটির মধ্যে পৃথক ঝুপড়ি ঘর তুলে দুইমুখী ত্রাণ সামগ্রী নিচ্ছে। একই পরিবারের বাবা বালুখালী আর মাতা কুতুপালং অথবা পুত্র -কন্যা কিংবা পুত্রবধু পৃথক উপায়ে তথ্য গোপন করে বহুমুখী ত্রাণ গ্রহণ সুবিধায় মেতে ওঠেছে। ত্রাণ গ্রহণের আওতায় অন্তর্ভুক্তি করণে ফুড কার্ড প্রদান করার অজুহাতে কার্ড প্রতি হাতিয়ে নিয়েছ ২০০/১০০০ টাকা পর্যন্ত।
এসব টাকা রোহিঙ্গাদের মাঝি নামধারী কথিত চাঁদাবাজ ও স্থানীয় কিছু নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিরা আদায় করে নিজেরাই ভাগ -বাটোয়ারা করেছে। অনেক রোহিঙ্গা পরিবার সুবিধাভোগ চক্রের দাবীকৃত টাকা প্রদান করতে না পারায় ফুড কার্ড বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
প্রতি রোহিঙ্গা পরিবার চাল,ডাল,ভোজ্য তেল, চিনি, কফি, খাদ্যশস্য, কম্বল ও চিকিৎসা সামগ্রী সহ ৩৫ প্রকার পণ্য রয়েছে। যেগুলো মালয়েশিয়া সরকার সহ অন্যান্য এনজিও গুলো প্রদত্ত বাদেও গোপনে রোহিঙ্গা সমর্থিত কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নগদ টাকা ও নিত্যপণ্য সামগ্রী প্রদান করে থাকে।
মালিেয়য়ার প্রতিনিধি দলের সংগে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্দ্যেগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হলেও অন্য এনজিও গুলোর কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ফূড কার্ড প্রাপ্তিতে সুবিধাভোগী চক্রের অনৈতিক আবদারের টাকা দিতে না পারায় অন্তত শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার ত্রাণ বঞ্চিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
ত্রাণ না পাওয়ার বিষয়ে বঞ্চিত রোহিঙ্গা পরিবার গুলো রেড ক্রিসেন্ট এর কর্তা ব্যক্তিদের অবহিত করলে তারা পরবর্তী দেখবেন বলে জানান দেন। এর বাইরেও রোহিঙ্গারা গোপনে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও ব্যক্তি বিশেষের গোপন তৎপরতার ত্রাণ সামগ্রী পাওয়ার খবরে দিন-দিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে। পাশাপাশি অনৈতিক কর্মকান্ডও সংঘটিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এনিয়ে স্থানীয় জনমনে নানা শংকা বিরাজ করছে। প্রসংগতঃ বালুখালী বনভূমিতে গড়ে তোলা রোহিঙ্গা বস্তি নিয়ে জনমনে নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। গভীর বনাঞ্চলে সম্প্রতি গড়ে ওঠা জনবিচ্ছিন্ন এ রোহিঙ্গা বস্তিটি মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার নতুন আখড়া হতে চলছে বলে বিভিন্ন
সূত্র ও স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগের সুরে দাবী করে জানান,মিয়ানমার থেকে নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির সংলগ্ন আশ্রয় নিয়ে নতুন রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে তোলেন। বন বিভাগের বিশাল জায়গা দখল করে গড়ে ওঠে বস্তি বনবিভাগ উচ্ছেদ করে। ফলে বালুখালীর একটি সার্থান্বেষী চক্র কৌশলে বনবিভাগের জায়গা দখল করে নতুন রোহিঙ্গা বস্তি গড়ে তোলে। এতে বনবিভাগের বিপুল জায়গা জবর দখলে নিয়ে দেয় ওই অতিউৎসাহী চক্র। ধীরে -ধীরে ওই বস্তির স্থায়ীত্ব হতে থাকে। প্রশাসনের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে পর্যায়ক্রমে রেশনপাতি বিতরণও চলে।
পরবর্তী প্রশাসনের নজরদারিতে রেশন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলেও সুবিধাভভোগী চক্রও গোপনে ভিন্ন পন্থায় নতুন রোহিঙ্গাদের নানা সুবিধা দিয়ে স্থায়ীত্ব করণের আভাঁস দৃশ্যমান হচ্ছে। এতে স্থানীয় সচেতন মহলে নানা উদ্ধেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে সীমান্তের উখিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কি.মি. দূরে বালুখালী পানবাজার থেকে প্রায় দুই কি.মি. পশ্চিমে গভীর বনাঞ্চলের মধ্যে সৃজিত সামাজিক বনায়ন উজাড় করে সম্প্রতি গড়ে তোলা হয় এ রোহিঙ্গা বস্তি। এ বস্তিতে যাতায়াতের একমাত্র পথ বালুখালী পানবাজার থেকে কিছু অংশ ইট বিছানো গ্রামীন রাস্তা, বাকি অংশে কোন রাস্তা নেই।
এ পথটুকু হেঁটেই যাতায়াত করতে হয় বস্তি পর্যন্ত। ফলে এখানে নির্ভয়ে চলে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা। অনেক দাগি আসামিও এখানে ঘাপটি মেরে আছে বলে সূত্রে জানা গেছে।এসব দাগী আসামিরা নিজেদের সার্থ আদায়ে তৎপর ভুমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে নানা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করতে করেছে অঘোষিত ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটিও। তাদের ছত্রছায়ায় উত্তোলন করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিকট থেকে টাকা ও বহুমুখী ফাঁয়দা। পক্ষান্তরে উখিয়ার অপর রোহিঙ্গা ক্যাম্প কুতুপালংয়ের অবস্থান উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কি.মি. দূরে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক সংলগ্ন। এখানে যে কারো সহজে যাতায়াত করা সম্ভব।
কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবিরের তত্বাবধানের জন্য সরকারের একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে রয়েছে সশস্ত্র পুলিশ, আনসার দস্যরা। এছাড়াও কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির ও বস্তির কয়েকশত গজের ব্যবধানে রয়েছে কচুবনিয়া বা উত্তর ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি ও উখিয়া টিভি উপকেন্দ্র। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির ও বস্তিতে বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান।
এটি মোটামুটি কিছুটা সরকারের নিয়ন্ত্রনে থাকার পরও এখানে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবাসহ সব ধরণের মাদকের কারবার ও অসামাজিক কার্যকলাপসহ জঙ্গিদের আনাগোনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কুতুপালং শিবির -টালও বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে ইতিমধ্যে মিয়ানমারের গুপ্তচর রয়েছে বলে সুত্রে জানা গেছে। ওইসব গুপ্তচর আসলে মিয়ানমার সরকার পক্ষে না,রোহিঙ্গাদের পক্ষাবলম্বন করছে।
রোহিঙ্গাদের পক্ষাবলম্বন করে নাকি মিয়ানমার থেকে আরো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে এদেশে গোপনে রেশনপাতি, নগদ টাকা ও নানা উপঢৌকন বিতরণ করছে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দেখা দিয়েছে সচেতন দেশপ্রেমিক মহলে। বালুখালীতে গড়ে তোলা নতুন রোহিঙ্গা বস্তি মিয়ানমার -বাংলাদেশ সীমান্তের পাশাপাশি হওয়ার কারণে রাতের আধারে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করে পরেরদিন আবার মিয়ানমারে চলে যায়। এতে কোন সমস্যা হয় না তাদের।
এ সুযোগে কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী ইয়াবা নিয়ে অনুপ্রবেশ করে বালুখালী নতুন বস্তিতে অবস্থান নেয়, পরে সুযোগ বুঝে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে থাকে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারনে এমনিতে কিশোর-যুবক, অনেক বিবাহিত/অবিবাহিত পুরুষদের নিয়ে নানাভাবে সামাজিক, পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সেগুলোর কারনে অনেক পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে, যা সমাজের সর্বত্র প্রভাব ফেলছে। বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিকে ঘিরে ইতোমধ্যে স্থানীয় কিশোর-যুবকদের যাতায়াত বাড়ছে। বস্তি স্থাপনের ভূমিকা পালনকারীরা এলাকায় চিহ্নিত ইয়াবা পাচারকারী সন্ত্রাসী।
দেশ-বিদেশের অজ্ঞাত উৎসের অর্থে রোহিঙ্গা বস্তিটিকে বালুখালীতে স্থায়ী করতে পারলে এখানে ওই চক্রের দুইটি উদ্দেশ্য সফল হবে। তার মধ্যে দেশি-বিদেশি জঙ্গিদের ঘাঁটিতে পরিণত করে স্থানীয় কিশোর ও যুবক সমাজকে ধ্বংস করাই তাদের মূল লক্ষ বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
অবৈধভাবে বনবিভাগের সামাজিক বনায়নেরজায়গা দখল করে গড়ে তোলা বস্তির কারণে সরকারের অন্তত শতাধিক একর বনভুমি যেমনি বেহাত হয়েছে,তেমনি কোটি -কোটি টাকার বনজ সম্পদ উজাড় হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে।পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নতুন করে রোহিঙ্গা বস্তির কারণে স্থানীয় জনগন অজানা আশংকায় পড়েছে।
প্রশাসনিক ভাবে রোহিঙ্গাদের একত্রে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, নতুন রোহিঙ্গারা বিপুল জায়গা দখল করে আছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন বালুখালীর নতুন রোহিঙ্গা বস্তিতে প্রশাসনের নজরদারিতে সাহায্য -সহযোগিতা করছে। গোপনে কোন এনজিও কোন অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী বিচ্ছিন্ন বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিটি যত দ্রুত সময়ে স্থানান্তর করে কুতুপালং কিংবা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হউক। তাহলে বালুখালীর গ্রাম বাসী হাফঁ ছেড়ে বাচিঁ এ ফরিয়াদ. সরকারের প্রতি। অন্যথায় রোহিঙ্গাদের রেশন প্রথা চালু থাকলেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অপরাধ মুলক ঘটনাও সংঘঠিত হওয়ার ঝুঁকিও কম না এমন অভিমত আমজনতার।
Posted ৬:২২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta