মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া(২২ জুন) :: ওয়ালাদং পাহাড়ী ঢলে আর নাফনদীর জোয়ারের ফলে চিংড়ীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। উখিয়ার পালংখালীতে প্রায় ৩ হাজার একর চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়েছে।
দাদন আর স্বায়ত্ত্বশাসিত ব্যাংক, বা ব্রাক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চিংড়ি উৎপাদনে পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রায় ৬শতাধিক চিংড়ি চাষীরা সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
সরকারের কাছে চিংড়ি চাষীদের আবেদন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম এই চিংড়ীঘের জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে স্থানীয় চাষীদের চিংড়ি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে।
পালংখালী, আনজুমানপাড়া, রহমতের বিল, নলবনিয়া, ফারির বিল, থাইংখালী ও বালুখালী ঘুরে ক্ষতিগ্রস্থ চিংড়ি চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পালংখালী বিত্তহীন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৩ হাজার একর চিংড়ি ঘের রয়েছে। রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বালুখালী থেকে পালংখালী পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধটি স্থায়ী ভাবে নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরে বেশ কয়েকবার আবেদন নিবেদন করার পরও কাজ হয়নি।
চিংড়ি চাষী মোক্তার আলম, শাহজাহান, ফয়েজুল ইসলাম, রমজান আলী, আব্দুল হক জানান, প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে চিংড়ি চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে বিত্তহীন সমবায় সমিতির প্রায় ৬ শতাধিক সদস্য। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এসব চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে চাষীদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত কোটি কোটি টাকার চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাচ্ছে। ফলে হতদরিদ্র চাষীরা সর্বস্ব হারিয়ে অনেকেই এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি উন্নয়নে নাফনদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণের লক্ষ্যে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণ বশত: তার স্থগিত হয়ে যায়। যে কারণে বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার রাতভর ভারী বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও নাফ নদীর জোয়ারের পানি একাকার হয়ে প্রায় ৩ হাজার একর চিংড়ি ঘের প্লাবিত হয়ে ১০ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। চিংড়ি চাষীদের অভিযোগ শুস্ক মৌসুমে চিংড়ির মড়ক, চিংড়ি ঘেরে ডাকাতি, লুটপাট, বর্ষায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে পড়ার কারণে পালংখালী চিংড়ি চাষীরা পথে বসার উপক্রম হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার্জনে সক্ষম এ চিংড়ীঘের বিনষ্ট হওয়ার ফলে চাষীদের নাভিশ্বাস হয়ে দাড়িয়েছে। এই চাষিরা যাতে পুনরায় কাজ শুরু করতে তাদের সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আগামি উপজেলা সেমিনারে চিংড়ীঘের সংস্কারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাসানো হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, তিনি পালংখালীর চিংড়ি ঘের পরিদর্শন করে দেখেছেন। নাফনদীর বেড়িবাঁধসহ নানা সমস্যার কারণে এলাকার চিংড়ি চাষীরা প্রতিবছর বছর ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে। ফলে রপ্তানীযোগ্য চিংড়ি চাষাবাদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন।
Posted ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta