মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া(৬ জুন) :: কক্সবাজার উখিয়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় জনপদ রতœাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া, চাকবৈঠা, মোরাপাড়া, করাচি পাহাড়, ভালুকিয়া, খেওয়াছড়ি, তুলাতলি, পূর্বকূল, আমতলী, লম্বাঘোনা, মাছকারিয়া, থাইনখালীও জালিয়াপালং ইউনিয়ন এলাকার অর্থকরী ফসল পানের বরজে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরা’য় লন্ডভন্ড এসব পানের বরজ নিয়ে পান চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
পানচাষীদের আয়ের একমাত্র অবলম্বন পানের নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হাজারো কৃষক পরিবার সহজ শর্তে কৃষি ঋণ বরাদ্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা বলেছেন, পানের বরজ হতে কৃষকদের ৫ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি নির্ভরশীল এ উপজেলায় উৎপাদনশীল পণ্যের মধ্যে ধানের পর পান-সুপারি চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। এসব পরিবার গুলো পরের জমি জমা বর্গা নিয়ে অথবা নগদ টাকায় বাৎসরিক লাগিয়ত নিয়ে পানের বরজ করে থাকে। এসব পানের বরজে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা পুঁিজ বিনিয়োগ করে আয়ের পথ সুগম করার জন্য দৈহিক পরিশ্রম করার পরও উচ্চমূল্যে পানের বরজে উপকরণ ক্রয় করে পান বাজারজাত করণে মোক্ষম সময়ে ঘূর্ণিঝড় মোরায় পানচাষীদের একমাত্র আয়ের উৎস্য ধুমড়ে মুছড়ে ফেলেছে।
ভালুকিয়া থিমছড়ি গ্রামের মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে পেশাদার পানচাষী আলী আহমদ (৪৫) জানায়, সে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করে ৩০ হাজার চারা বিশিষ্ট একটি পানের বরজ করেছিল। ঘূর্ণিঝড় মোরায় ওই পানের বরজ থেকে এক টাকার পানও বিক্রি করতে দেয়নি। সে জানায়, পরিবারের সহায়সম্বল যা ছিল তা ওই পানের বরজে বিনিয়োগ করেছে। এখন প্রশাসন যদি তাদের আর্থিক ভাবে সহযোগীতা না করে তাহলে তার পক্ষে পানের বরজ করা আর সম্ভব হবে না। একই কথা বললেন, ভালুকিয়া পূর্বকুল গ্রামের আজু মিয়ার ছেলে ছৈয়দুর রহমান।
সে জানায়, বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা অগ্রিম লাগিয়ত দিয়ে সে ২০ হাজার চারার একটি পানের বরজ করেছে। শ্রমিকের মজুরী, পানের বরজের উপকরণ ক্রয়, সার ও কীটনাশক ওষুধ সহ উক্ত পানের বরজে তার প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে। সে জানায়, আশা ছিল পানের বরজের পান বিক্রি করে এবার আনন্দের সাথে ঈদ কাটাবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোরায় তার পানের বরজ ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।
সর্বস্ব হারিয়ে এ পেশাদার পান উৎপাদনকারী আলী আহমদ জানায়, সরকারি ভাবে বা সহজ শর্তে তাদের ব্যাংক প্রদান করা না হলে অর্থকরী ফসল পান উৎপাদন করা তাদের পক্ষে আর সম্ভব হবে না। এভাবে শত শত কৃষক উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে এসে পানের বরজের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিতে দেখা গেছে।
রতœাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার পানের বরজ সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। অর্থকরী ফসল পান শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এসব পানচাষীদের সহজ শর্তে ঋণপ্রদান করার জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, এ ইউনিয়ন তথা উখিয়া উপজেলায় উৎপাদিত পান-সুপারী বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রপ্তানী হচ্ছে। তিনি জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় ২ হাজারেরও অধিক পানের বরজ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে পড়েছে। পানের বরজের সাথে জড়িত প্রায় ৫ হাজার পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এসব পান চাষীদের আর্থিক ভাবে সাহায্য সহযোগীতা করা না হলে উখিয়ার পান শিল্পে ধ্বস নামতে পারে। বেকার হয়ে পড়তে পারে প্রায় ২০ হাজার পরিবার।
উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় সাড়ে ৪ শ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়ে থাকে। তিনি বলেন, পানের বরজ হতে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেখিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পরিপত্র প্রেরণ করা হয়েছে এবং চাষীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জোরালো সুপারিশ রাখা হয়েছে ওই পরিপত্রে।
Posted ১১:৪৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta