মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(২৬ মে) :: পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে উখিয়া সীমান্তের ১১টি পয়েন্টে সক্রিয় হয়ে উঠেছে চোরাচালানীরা। দালাল সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে ভোজ্য ও জ্বালানী তেলসহ পিঁয়াজ, রসুন সেমাই, চিনি, গুড়, গরম মসলা থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্যপণ্য।
বিনিময়ে এদেশে পাচার হয়ে আসছে ইয়াবা, সিগারেট, বোতলজাত মাদকদ্রব্য ও নিম্নমানের কসমেটিকস্ সামগ্রী।
আইনপ্রয়োগকারী সংস’ার হাতে ছোটখাট মাদকের চালান আটক হলেও পাচারকৃত পণ্য উদ্ধার বা আটক না হওয়ার ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস’ার রহস্যজনক ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় উপজেলা প্রশাসন উখিয়ার পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে রমজানের দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় ইউএনও দোকানে মূল্য তালিকা না টাঙানোর দায়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানাও করেন।
পবিত্র রমজান সামনে রেখে উখিয়ার অর্ধশতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকার নিত্যপণ্যের সরবরাহ এনে গুদামজাত করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জ্বালানী ও ভোজ্যতেল, পিঁয়াজ, রসুন, সেমাই, চিনি, গুড়সহ বিভিন্ন প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী।
অসাধু পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির অজুহাতে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে নিত্যপণ্য। আর এসব পণ্যসামগ্রী সীমান্তের ধামনখালী, রহমতের বিল, আনজুমানপাড়া, নলবনিয়া, বটতলী, থাইংখালী, পালংখালী, বালুখালী, ফাত্রাঝিরি, ডিগলিয়াপালং, ডেইলপাড়া, রেজু আমতলীসহ ১১ পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে পাচার করা হচ্ছে বলে স’ানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
সীমান্তে বসবাসরত গ্রামবাসীর অভিযোগ হাতিমোরা কিল্লামারা এলাকার সৈয়দ আলম, বার্মাইয়া জাহেদ উল্লাহ, তুলাতুলির নজির আহমদসহ ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট প্রহরা দিয়ে সীমান্তের পাহাড়ি পথে রাতের বেলায় নিত্যপণ্য পাচারে সহযোগিতা করছে।
এসব চোরাইপণ্য আনা-নেওয়ার ব্যাপারে সীমান্তের চিহ্নিত দালাল সিন্ডিকেটের সদস্য রেজু আমতলী গ্রামের আশরাফ আলী, সৈয়দ নূর, সৈয়দ করিম, জসিম উদ্দিন ও করই বনিয়া গ্রামের আব্দুর রহিমসহ ৭-৮ জন লোক বিজিবি-পুলিশের নাম ভাঙিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করার ঘটনায় চোরাচালান বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে একাধিক গ্রামবাসী জানিয়েছেন।
আমতলী বিজিবি সূত্রে জানায়, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে তারা তৎপর। তবে নিত্যপণ্য পাচারের ব্যাপারে তারা অবগত নন। আনসার, বিজিবি ও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির সত্যতা জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, কে বা কারা টাকা আদায় করছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস’া নেওয়া হবে।
নিত্যপণ্য পাচারের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আবুল খায়ের জানান, ‘মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে আসা প্রায় ১৫ হাজার ইয়াবাসহ ২৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এখান থেকে নিত্যপণ্য পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পুলিশ যেকোনো সময় পণ্যসহ পাচারকারীদের আটক করবে।’
ঘুমধুম বিজিবির কোম্পানি কমান্ডার রফিকুল ইসলাম জানান, তুমব্রু বাজারে বিক্রির জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা স’ানীয় ব্যবসায়ী সমিতির টোকেন নিয়ে নিত্যপণ্য নিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে কোনো মালামাল পাচার হতে দেওয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, মিয়ানমারে বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল চাহিদার কারণে নিত্যপণ্য পাচারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। তবে যেহেতু রোহিঙ্গারা নিয়মিত আসা যাওয়া করছে, তাই রমজানকে সামনে রেখে পাচারকাজ আরো বাড়তে পারে বলে সন্দেহ করছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, কোনো ব্যবসায়ী নিত্যপণ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস’া নেওয়া হবে। অবিলম্বে প্রতিটি দোকানে মূল্য তালিকা টাঙানোর নির্দেশও প্রদান করেন তিনি।
Posted ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৭ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta