মোসলেহ উদ্দিন, উখিয়া(৮ জুলাই) :: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ সময় পাহাড় ধ্বসে ও পানির স্রোতে পড়ে মারা গেছে শিশু সহ ৪ জন। বন্যার পানি ইতিমধ্যে সরে গেলেও ঘরবাড়ি, খাদ্য সামগ্রী ও গ্রামীণ সড়ক লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার কারণে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে পোহাতে হচ্ছে নানা সংকট, সমস্যা ও দূর্ভোগ।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। তবে ইউএনও বলছেন, এ উপজেলায় দূর্গত মানুষের জন্য ৫ মে.টন চাল ও নিহতের পরিবারদের জন্য টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে গতকাল শনিবার।
সরেজমিন উপজেলার হতদরিদ্র এলাকা রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা ঘুরে গৃহহীন কয়েকটি পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানা যায়, বুধবার বিকাল ৩টার দিকে হঠাৎ করে ৫/৬ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ গ্রামের প্রায় ৩৫টি বসত বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
এ সময় ক্ষতিগ্রস্থরা নিকটস্থ সাইক্লোন সেন্টার ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিলেও দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত মালামাল, খাদ্য সামগ্রী, সহায় সম্বল, বসত বাড়ির নিচে চাপা পড়েছে। সর্বশান্ত এসব পরিবারগুলোকে ছেলে মেয়ে নিয়ে খেয়ে, না খেয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে।
গৃহহীন পরিবার হারাশিয়া গ্রামের আব্দু সালাম (৪৫) জানান, সে দিনমজুর করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। একমাত্র অবলম্বন মাথা গুজার ঠাঁই বসত বাড়ি খানা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ায় তাকে ছেলেমেয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
একই গ্রামের গৃহহীন আবুল কাশেম (৫৫), মাহমুদুল হক মিস্ত্রি (৪৫) জানায়, তাদের বসত বাড়িটি বিধ্বস্ত হওয়ায় ছেলেমেয়ে নিয়ে খাদ্য সহ নানা সংকটের মোকাবেলা করে দিনযাপন করতে হচ্ছে।
স্থানীয় ইউ,পি, সদস্য মোঃ শাহজাহান জানান, তার ওয়ার্ডে ৩৫টি পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। তাদের অনেকেই আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলেও খাদ্যসহ নানা সমস্যা নিয়ে দিনযাপন করতে হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে রাজাপালং, রতœাপালং, পালংখালী, জালিয়াপালং ও হলদিয়াপালং সহ ৫টি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধ-শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সাড়ে ৫ শতাধিক বসত বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার পরিবার।
পানির স্রোতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ কিলোমিটার ব্রিক সলিং, কার্পেটিং সড়ক সহ কাঁচা রাস্তা, কালভার্ট, ব্রিজ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ার কারণে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। পালংখালী ইউনিয়নের ৩ হাজার একর চিংড়ি ঘের সহ ব্যক্তি মালিকানাধীন ২ শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী ও জালিয়াপালং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী জানান, এ দুই ইউনিয়ন নাফ নদী ও সাগর তীরবর্তী এলাকা হওয়ার কারণে জোয়ারের পানির তীব্রতায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাঈন উদ্দিন জানান, ৫টি ইউনিয়নে ৫ মে. টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বন্যায় ও পাহাড় ধ্বসে নিহত ৪ জনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে ৮০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে।
Posted ১০:৪৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta