মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(১৭ জুলাই) :: কক্সবাজার উখিয়া উপজেলা ও লাগোয়া নাইক্ষংছড়ি সীমান্তের পূর্বাঞ্চলীয় জনপদ রেজু বটতলী, আমতলী, গর্জবনিয়া, ডেইলপাড়া, করইবনিয়া ও হাতিমোরা এলাকার চিহ্নিত ১০ সদস্যের পাচারকারী সিন্ডিকেটের প্রায় শতাধিক সহযোগীর মাধ্যমে ওপার থেকে পাচার হয়ে আসছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সিগারেট, পলিথিন ও মাদকদ্রব্যের চালান।
উখিয়া থানা পুলিশ, বিজিবি, কোষ্টগার্ড, ডিবি পুলিশের সদস্যরা কিছু চোরাই পণ্য সামগ্রী আটক করলেও চোরা চালানীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত চোরাচাআনের সিন্ডিকেট প্রধানদের গ্রেপ্তার করতে পরেনি বলে দাবী উঠেছে স্থানীয় সচেতনদের মধ্যে। গ্রামের মানুষ জানান, সীমান্ত এলাকাস্থ গ্রামগুলো এখন মাদকের বাজারে পরিণত হয়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে চোরাচালানীদের আনা সিগারেট, ১২ পার্সেন্ট নামের মাদকের বোতল, ইয়াবা,হ নানা রকম বোতলজাত এলকোহল।
স্থানীয়রা এরা জানায়, বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের কিছু অসাধু ব্যক্তিদের সহআেগিতায় এসব চোরাচালানীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ডেইলপাড়া গ্রামে বসবাসরত আমির হোসন, সাইফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ ইসহাক সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানায়, ১০ সদস্যের পাচারকারী সিন্ডিকেটে শতাধিক সহযোগী চোরাচালানী সীমান্তের ওপার থেকে নিষিদ্ধ মালামাল এপারে নিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। এসব চোরাই পণ্যের মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারের তৈরি ১২% নামের এক প্রকার তরল মাদক দ্রব্য।
এসব মাদকের চালান স্থানীয় ভাবে বাজারজাত হওয়ার কারণে গ্রামের সহজ সরল কিশোর যুবক নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। নেশায় অভ্যাস্ত এসব কিশোর যুবকেরা মাদকের টাকা যোগান দিতে বয়োবৃদ্ধ মা-বাবাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করছে।
সম্প্রতি থানায় অভিযোগ করতে আসা হাতিমোরা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ বিধবা আয়েশা খাতুন (৫৫) ও ভালুকিয়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আলী মাস্টার জানান, হাতের নাগালে মাদক বিক্রির কারণে স্কুল পড়–য়া ছেলেরা মাদক সেবনে অভ্যাস্ত হয়ে পড়ছে। নেশার টাকার জন্য বাড়ীর মূল্যবান মালামাল চুরি করে বাহিরে বিক্রি করছে। বাধা দিলে মা-বাবাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে কুন্টাবোধ করছে না। তিনি তার মাদকাসক্ত ছেলের জন্য একটি অভিযোগ করতে এসে স্থানীয় সাংবাদিকদের তার প্রক্রিয়া ব্যক্ত করে সংবাদ মাধ্যমে মাদকের ব্যাপারে লেখালেখি করার অনুরোধ জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী জানায়, স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান ২/৩ জন জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় প্রতিরাতেই মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসছে ইয়াবা, ১২% মাদক, পলিথিন, সিগারেট, গবাদি পশুসহ বিভিন্ন প্রকার নিষিদ্ধ ঘোষিত চোরাইপণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে ইয়াবা ও ১২% মাদক স্থানীয় ভাবে বিক্রি হওয়ার সুবাদে এলাকার যুব সমাজ ও স্কুল কলেজগামী ছাত্র নেশায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি। স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে দাবী করে গ্রামবাসী মাদকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা রাজাপালং ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেল উদ্দিন সুজন অভিযোগ করে জানান, সীমান্ত এলাকায় রেজু বিজিবি’র সদস্যদের নিয়মিত টহল অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ওপার থেকে আসা মাদকের চালান কিভাবে পাচার ও স্থানীয় ভাবে বাজারজাত হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
পূর্বাঞ্চলীয় মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এডভোকেট এটিএম রশিদ জানান, চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধে জনমত গঠে তোলার লক্ষ্যে সভা সমাবেশ করা সত্ত্বেও চোরাচালান সিন্ডিকেটের তৎপরতা কমেনি। তাদের বেপরোয়া হয়ে উঠার নেপথ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতা রয়েছে বলে ওই নেতা দাবী করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ মোঃ আবুল খায়ের জানান, স্থানীয় গ্রামবাসী অনৈতিকতার বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার না হলে পুলিশের একার পক্ষে চোরাচালান, মাদক পাচার ও মাদক সেবন প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
Posted ৪:০২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta