বিশেষ প্রতিবেদক(১৭ জুন) :: চলতি মাসের ২ জুন কক্সবাজার আসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি সহানুভূতি প্রকাশ করতেই ছিলো তাঁর এই আগমন। ঘূর্ণিঝড়ে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি সৃষ্টি করে গেলে এক রাজনৈতিক ঘূর্ণিঝড়। শাহপরীর দ্বীপে গিয়েই এমপি বদিকে বলেন ‘তোমাকে আর এই আসনে মনোনয়ন দেয়া হবে না।’
অন্যদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ডেকে নিয়ে আলিঙ্গন করার পাশাপাশি নিজ আগ্রহে ছবি তুলেন জেলার প্রবীণ সাংবাদিক তোফায়েল আহমদের সঙ্গে। ব্যাস এরপর থেকেই জেলার রাজনীতির হাওয়ায় পরিবর্তনের আভাস আসতে থাকে। ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন প্রভাবশালী রাজনীতিকের মফস্বলে কর্মরত একজন সাংবাদিককে কাছে টেনে নেয়া। তারপর আশীর্বাদসূচক কথাবার্তা বলার পর রাজনীতির হিসেব নিকেশ পাল্টে যায়। এতোদিন ধরে নৌকা প্রতীকের দাবিদার অনেক রাজনীতিক হারিয়ে যান আলোচনার টেবিল থেকে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকার প্রার্থী হওয়ার দৌঁড়ে নাম লেখান সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবী সমাজসেবক তোফায়েল আহমেদ। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে দ্রুতই এই সাংবাদিক পরিণত হতে থাকেন শৌখিন রাজনীতিকে। তোফায়েল আহমদের নামে ফেস্বুকে একটি স্ট্যাটাস কিংবা ছবি যুক্ত হলেই সেটি হয়ে যাচ্ছে ভাইরাল। পাশাপাশি অনেকেই পক্ষে বিপক্ষে নানান মন্তব্য লিখছেন।
এমপি বদিও যে বিষয়টিকে সহজভাবে নেননি তা তাঁর কর্মকান্ডে বোঝা যাচ্ছে। নিজ অনুগত বেশ কয়েকজনকে তিনি লেলিয়ে দিয়েছেন তোফায়েল আহমদের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট এবং ছবির মাধ্যমে তাঁদেরও প্রার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছেন। উদ্দেশ্য একটাই, যেনতেনভাবে তোফায়েল আহমদকে হেয় করে প্রার্থী তালিকার বাইরে ফেলে দেয়া। অবশ্য এতে হিতে বিপরীত হচ্ছে। দিনদিন উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার জনগণ তোফায়েল আহমদের বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এমনিতেই বর্তমানে দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় সর্বনাশা মাদকযুক্ত ট্যাবলেট (বড়ি) ইয়াবাকে। এই ইয়াবাকে কেন্দ্র করেই দেশব্যাপী সাথানীয় এমপি’র বিরুদ্ধে সমালোচনার ঢেউ উঠে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করা তালিকাতে তাঁর পরিবারের ৬ সদস্য এবং শতাধিক অনুসারীর নাম আসে। ইয়াবা বিক্রি এবং বিক্রেতাদের সহায়তা করার অভিযোগেই তালিকায় তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। বিষয়টি দেশব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনকে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। যদিও এমপি বদি দীর্ঘদিন থেকে দাবি করছেন তিনি কখনোই সর্বনাশা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না, এখনো নেই।
অন্যদিকে সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বরাবরই অবস্থান নেন ইয়াবার বিরুদ্ধে। ইতিপূর্বে এমপি বদির ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার একাধিক প্রতিবেদনও তিনি নিজ হাতে লিখেন। পরবর্তীকালে যা জাতীয় দৈনিক কালের কন্ঠে প্রকাশিত হয়। এ কারণে এমপি বদি নিজে বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানি মামলাও দায়ের করেছিলেন। ফলে দীর্ঘসময় ধরে তাঁদের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। রাজনৈতিক কারণে যে সম্পর্ক আরো খারাপের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে তোফায়েল আহমদ কক্সবাংলাকে জানান,আমি এবং আমার পরিবার সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। কক্সবাজারে আমিই প্রথম ব্যক্তি যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের দাবী জানিয়েছে। এছাড়া জঙ্গি, ইয়াবা, মানবপাচার সহ সকল অন্যায়ের প্রতিবাদকারী কলম সৈনিক,যা আমরন পর্যন্ত আমি চালিয়ে যাব। এ কারনে চারদলীয় সরকারের সময় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা দেয়া হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নের্তৃবৃন্দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে।তিনি আরও বলেন বর্তমানে সময়ে উখিয়া টেকনাফবাসী ইয়াবা ও মানবপাচারের নামের কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে চায়।
এদিকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র কক্সবাংলাকে জানিয়েছে, উখিয়া-টেকনাফ এখনো পর্যন্ত মনোনয়নের দৌঁড়ে এমপি বদির অবস্থান সবার শীর্ষে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলা চলমান। নি¤œ আদালত যে মামলায় তাঁকে দু’বছরের সাজা দেন। সেই সাজা উচ্চ আদালতে বহাল থাকলে আইনগতভাবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হারাবেন এমপি বদি। এরপরই অন্য প্রার্থীদের বিষয়টি আলোচনায় আসবে। তবে আওয়ামী লেগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে সুসম্পর্কের কারণে তোফায়েল আহমদকেও খাটো করে দেখছেনা ওই সূত্র।
বি : দ্র: – প্রতিবেদনটি কক্সবাংলা’র নিজম্ব।তাই অনুমতি ছাড়া এটি প্রকাশ করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ
Posted ২:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta