কক্সবাংলা ডটকম(১০ জুন) :: আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ জাতীয় গ্রিডে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের আশা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মাণ হচ্ছে ভাসমান টার্মিনাল। এর বাইরে টার্মিনাল নির্মাণের কথা রয়েছে ভারতের দুটি ও ব্যক্তিখাতে বাংলাদেশের আরো একটি কোম্পানির। কিন্তু কাতারকে ঘিরে চলমান সংকট জ্বালানিটির জোগান নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। কাতার এলএনজির প্রধান উৎস দেশ হওয়ায় সরবরাহ বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি বেড়ে যেতে পারে এর মূল্য। এতে ঝুঁকিতে পড়বে এলএনজিতে বিনিয়োগও।
বৈশ্বিক এলএনজি বাজারের বিরাট অংশ দখল করে আছে কাতার। বৈশ্বিক এলএনজির বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ মধ্যপ্রাচ্যের এ ক্ষুদ্র দেশটি। ২০১৬ সালে প্রায় ৭ কোটি ৭২ লাখ টন এলএনজি রফতানি করেছে তারা। কাতারের এলএনজির বড় ক্রেতাদের বেশির ভাগই এশিয়ার। জাপান ও চীনের পাশাপাশি ভারতও বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করে দেশটি থেকে। ইন্টারন্যাশনাল গ্যাস ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরে বিশ্ববাজারে মোট এলএনজির এক-তৃতীয়াংশ জোগান দিয়েছে কাতার।
দেশে শিল্প ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের পরিসর বাড়ছে। ফলে গ্যাসের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। তবে নতুন গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান না পাওয়ায় গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য থাকছে। শিল্প-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও আবাসিকসহ সব খাত মিলে বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩২০ থেকে ৩৫০ কোটি ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ২৭০ কোটি ঘনফুটের মতো। অর্থাৎ ৬০ থেকে ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে। জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে তাই ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড। বার্ষিক হারে টার্মিনালটি ভাড়ায় ব্যবহার করবে পেট্রোবাংলা। এলএনজির কাঁচামাল আমদানি করা হবে কাতার থেকে। এ বিষয়ে কাতারের রাশগ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিও করেছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮ সালের মার্চ নাগাদ গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে জিওটেকনিক্যাল ও জিওফিজিক্যাল সমীক্ষা শেষে বর্তমানে ডিজাইন ও ড্রইংয়ের কাজ চলছে। কিন্তু কাতার সংকট দীর্ঘায়িত হলে এলএনজির উৎস নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে পেট্রোবাংলাকে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অবলম্বন করেনি। সৌদি কিংবা কাতারের যে কোনো এক পক্ষের প্রতি অবস্থান নিলে ব্যবসা-বাণিজ্যে জটিলতা ও ঝুঁকি দেখা দেবে। এসব দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক অবনতি হলে এলএনজির মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা দেখা দেবে।
তবে উপসাগরীয় দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েনের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে না বলে মনে করেন জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, দোহার সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করলেও কাতার থেকে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানিতে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছি না আমরা।
দেশীয় কোম্পানি হিসেবে সামিট পাওয়ারও মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে। গত ২০ এপ্রিল এ নিয়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সামিট গ্রুপ। চুক্তি সম্পাদনের ১৮ মাসের মধ্যে বিল্ট ওন অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) ভিত্তিতে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা।
দেশীয় কোম্পানি সামিট পাওয়ারের পাশাপাশি বাংলাদেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন পেয়েছে জ্বালানি খাতে ভারতের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড। কুতুবদিয়া দ্বীপে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় ভারতীয় কোম্পানিটি। এলএনজি টার্মিনাল ছাড়াও বাংলাদেশে তিন হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স পাওয়ার লিমিটেড। এ প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ করার কথা ১৩০ কোটি ডলার। কিন্তু রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের কারণে অনিল আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের অবস্থা এখন অনেকটাই নাজুক।
মার্চে শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে ৯৬৬ কোটি রুপি নিট লোকসান করেছে রিলায়েন্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস। বিভিন্ন ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার কোটি রুপি। ভারতে ১০টির মতো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে গ্রুপটি। রিলায়েন্সের এ ঋণকে ‘স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট (এসএমএ)’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে ব্যাংকগুলো। প্রতিষ্ঠানটির ঋণমানও কমিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সিগুলো। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে এলএনজি টার্মিনাল ও বিদ্যুেকন্দ্রে রিলায়েন্সের অর্থের জোগান অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১০০ কোটি ঘনফুট ক্ষমতার ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করতে চায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত পেট্রোনেট এলএনজি লিমিটেডও। পেট্রোবাংলার সঙ্গে এ-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকও সই করেছে প্রতিষ্ঠানটি। টার্মিনাল নির্মাণে পেট্রোনেটকে ৫০ হেক্টর জমি দেয়া হবে। জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন গত জানুয়ারিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ টার্মিনালের জন্য পেট্রোনেট এলএনজি আমদানি করবে কাতার থেকে।
Posted ১২:২২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১০ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta