শনিবার ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

এ‌শিয়ার পুঁজিবাজারে সবার নি‌চে বাংলা‌দে‌শ

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫
36 ভিউ
এ‌শিয়ার পুঁজিবাজারে সবার নি‌চে বাংলা‌দে‌শ

কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জানুয়ারি) :: দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া শ্রীলংকা কিংবা অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত পাকিস্তানের পুঁজিবাজার গত বছর বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।

এশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাজারগুলোয় সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে এ দুই দেশের পুঁজিবাজারে।

এ সময় ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজারে রিটার্ন ছিল কিছুটা নেতিবাচক। অন্য দেশগুলোর পুঁজিবাজার গত বছর ইতিবাচক ধারায় ছিল।

শুধু সূচকের রিটার্ন নয়, বাজার মূলধন, লেনদেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণসহ আরো অনেক সূচকেই এগিয়ে ছিল এসব দেশের পুঁজিবাজার। যদিও এক্ষেত্রে পুরোই বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে।

এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে প্রায় সব সূচকেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অবস্থান সবার নিচে। যদিও বয়স বিবেচনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেয়েও পুরনো দেশের পুঁজিবাজার।

এদেশে পুঁজিবাজারের যাত্রা ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ নামে।

১৯৬৪ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। প্রত্যাশা ছিল বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজার আরো পরিণত হবে। হয়ে উঠবে পুঁজি সংগ্রহে উদ্যোক্তাদের মূল ভরসা। কিন্তু দীর্ঘ ছয় দশকের পথচলায় সে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেনি ডিএসই।

পুরোপুরি কার্যকর ও গতিশীল পুঁজিবাজার হিসেবে নিজেকে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে সেখানকার পুঁজিবাজার।

এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয়ও জিডিপির বিপরীতে পুঁজিবাজারের মূলধনের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ।

এশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাজারগুলোর মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের সঙ্গে তুলনায় দেখা যায় ২০২৪ সালে প্রায় সব সূচকেই এসব দেশ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। এক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বিবেচনায় ফিলিপাইন ও শ্রীলংকা বাদে বাকি সব দেশই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।

এ দুই দেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা যথাক্রমে ২৮৫ ও ২৯০। আর বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০।

এছাড়া ভারতে ৫ হাজার ৫৬৪, পাকিস্তানে ৫২৩, থাইল্যান্ডে ৮৮৫, ভিয়েতনামে ৪৩৫ এবং ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজারে ৯৪৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।

বাজার মূলধনের দিক থেকে বাংলাদেশ গত বছর শুধু শ্রীলংকার চেয়ে এগিয়ে ছিল। তুলনামূলক ছোট অর্থনীতির দ্বীপদেশটির বাজার মূলধন গত বছর শেষে ছিল ১ হাজার ৬৪৫ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

আর বাংলাদেশের বাজার মূলধন ছিল ২ হাজার ৯৯৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

এছাড়া বছর শেষে বাজার মূলধন ভারতে ছিল ৫ লাখ ২৮ হাজার ৭৪৮ কোটি, পাকিস্তানে ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি, থাইল্যান্ডে ৫৫ হাজার ৯২২ কোটি, ভিয়েতনামে ২১ হাজার ১৮৪ কোটি, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৫ হাজার ৫৮০ কোটি ও ফিলিপাইনে ছিল ৩৪ হাজার ২৮৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

একটি দেশের পুঁজিবাজারের গভীরতা পরিমাপ হয় জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন হিসাবের মাধ্যমে। এদিক থেকেও বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। গত বছর শেষে দেশে জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

একই সময়ে জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন ভারতে ছিল ১৩৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১২ দশমিক ৪, শ্রীলংকায় ২২ দশমিক ১, থাইল্যান্ডে ১০৫ দশমিক ৭, ভিয়েতনামে ৪৫ দশমিক ২, ইন্দোনেশিয়ায় ৫৪ ও ফিলিপাইনে ছিল ৭৩ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট ও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাড়াতে হবে।

নব্বইয়ের দশকে পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানি এসেছে, তারা কিন্তু এখান থেকে মূলধন উত্তোলনের পাশাপাশি করপোরেট করের ক্ষেত্রে ভালো ছাড় পেয়েছে, যার কারণে কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হয়েছে।

এখন কিন্তু তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান খুব বেশি নয়। আইনি কাঠামোয় এমন বিধান থাকতে হবে যাতে করে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য হয় আবার তাদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনারও ব্যবস্থা থাকে।

পুঁজিবাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি বাছাই করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ব্লুচিপ কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসা প্রয়োজন। আমাদের এখানে এমন বিধান রয়েছে, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একই গ্রুপের অন্য একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে পারবেন না। আইনি ধারাবাহিকতা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির সময় করপোরেট কর কত হবে সেটি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল।

যদিও সেটি পরে আর ঠিক থাকেনি। তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই করা প্রয়োজন। শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিটি আরো যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে করে কোম্পানিগুলো যৌক্তিক মূল্য পায়। সর্বক্ষেত্রেই ম্যানুয়াল পদ্ধতি থাকায় দুর্নীতির সুযোগ থেকে যাচ্ছে। তাই অটোমেশনের মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ করতে হবে।

অতীতে যে কারসাজি হয়েছে, তার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখান থেকে অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী চলে গেছে। এর কারণ হচ্ছে তারা এখানে বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত কোম্পানি পায়নি। লভ্যাংশের পরিমাণের ভিত্তিতে কোম্পানির ক্যাটাগরি নির্ধারণ পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তাছাড়া তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও রোধ করতে হবে।’

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনের পরিমাণও বেশ কম। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন তলানিতে নেমেছে। গড় লেনদেনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার গত বছর এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে ছিল।

এ সময় দেশের পুঁজিবাজারের গড় লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। যেখানে ভারতের পুঁজিবাজারে গড় লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৩১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।

পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে গড়ে ৫ কোটি ৮০ লাখ, শ্রীলংকায় ৩ কোটি ৪০ লাখ, থাইল্যান্ডে ১১৫ কোটি ৮০ লাখ, ভিয়েতনামে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৮৮ কোটি ও ফিলিপাইনের পুঁজিবাজারে গড়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ লেনদেন হয়েছে।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের দিক দিয়েও বাংলাদেশের অবস্থান নিচের সারিতে। গত বছরে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনে বিদেশীদের অংশগ্রহণ ছিল ১ শতাংশ। একই সময়ে ভারতে এ হার ছিল ১২ শতাংশ। এছাড়া পুঁজিবাজারের লেনদেনে বিদেশীদের অংশগ্রহণের হার পাকিস্তানে ৪ শতাংশ, শ্রীলংকায় ১০, থাইল্যান্ডে ৫১, ভিয়েতনামে ১৮, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৩ ও ফিলিপাইনে ২৫ শতাংশ ছিল।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘অতীতে ১০০টির মতো মন্দ কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনা হয়েছে, যার কারণে বাজারের গুণগতমান নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্তির জন্য আকৃষ্ট করা যায়নি। যে কারণে ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

তাছাড়া কভিড এবং এর পরবর্তী সময়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সুশাসনের ঘাটতি ও অপশাসন। পুঁজিবাজারকে এককভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সার্বিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে গেলে পুঁজিবাজারও বিকশিত হবে।’

আগের দুই বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালেও দেশের বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে পুঁজিবাজার। এ সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ১৬ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার পুঁজিবাজারে এ সময় ২ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন ছিল।

অন্যদিকে পাকিস্তানের পুঁজিবাজারে ৮৫ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশটির বেঞ্চমার্ক সূচক কেএসই-১০০ রেকর্ড ১ লাখ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। শ্রীলংকার পুঁজিবাজারে গত বছর ৫০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন ছিল। এছাড়া এ সময় ভারতে ৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১২ শতাংশ ও ফিলিপাইনে ১ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন ছিল।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আকারের তুলনায় আনুপাতিক হিসাবে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই রুগ্‌ণ হয়ে পড়েছে। দেশে বর্তমানে ৪৫৬টি স্টক ব্রোকারেজ, ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ৬৭টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রয়েছে।

এক্ষেত্রে শুধু ভারত বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। দেশটিতে ৪ হাজার ৯০২টি ব্রোকারেজ, ২২৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক ও ৪২টি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রয়েছে। বাকি দেশগুলোয় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে কম।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজ হচ্ছে বাজার সৃষ্টি করা। অথচ আমাদের এখানে বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিদর্শনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়।

পুঁজিবাজারের আকারের তুলনায় বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি হলে তখন সেটি অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। এর মানে হচ্ছে আমাদের পুঁজিবাজার দক্ষ নয়। আর বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী না হলে পুঁজিবাজার এগোবে না। তারাই বাজারকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

দেশের পুঁজিবাজারের যাত্রা বেশ দীর্ঘ হলেও নীতি ব্যর্থতার কারণে এটি সামনে এগোতে পারেনি। এখানে নতুন পণ্য আনার জন্য কাজ হয়নি। শুধু আইপিও নয়, এখানে বন্ডের বাজারও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ডেরিভেটিভস এখানে কখনো আসেনি। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেও নতুন পণ্য নেই। বাজারে পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকলে বিনিয়োগকারী আসবে না, এটিই স্বাভাবিক। তাছাড়া যেসব কোম্পানি এখানে তালিকাভুক্ত রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বিনিয়োগযোগ্য পণ্যের সংখ্যা অত্যন্ত কম। পণ্যের গুণগত মান খুবই দুর্বল।

দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের বিষয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলো বরাবরই উন্নাসিকতা দেখিয়েছে, যা বর্তমানেও দেখা যাচ্ছে। দেশের পুঁজিবাজার যদি শক্তিশালী থাকত, তাহলে আজকে ব্যাংক খাতের যে করুণ অবস্থা, সেটি হতো না। কারণ দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন পুঁজিবাজার থেকে এলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক কম থাকত। এক্ষেত্রে কোনো নীতিসহায়তা নেই। নীতিসহায়তার মাধ্যমেই পুঁজিবাজার বিকশিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বর্তমান সরকারের অবদান শূন্য।’

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে ধস নামে। এ সময় ধসের কারণে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। পুঁজিবাজার ধসের ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা সালমান এফ রহমানকে মূল হোতা হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।

এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও তার নাম এসেছে। যদিও তার বিরুদ্ধে কখনোই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন সরকার। বরং এ সময় প্রভাব খাটিয়ে পুঁজিবাজার থেকে নানা সুবিধা নিয়েছেন তিনি।

২০১০ সালের ধস-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ বছর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন।

তার উত্তরসূরি হিসেবে ২০২০ সালে দায়িত্বে আসেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। যদিও আলোচিত এ দুই চেয়ারম্যানের বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও স্বজনপ্রীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজার আরো খাদের কিনারে চলে গেছে।

গত ১৫ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে কোম্পানির তালিকাভুক্তি ও প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে অর্থ লুটে নেয়ারও অনেক নজির রয়েছে। অনিয়মের কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে নেমেছে।

বিশেষ করে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শীর্ষ দুই প্রতিষ্ঠান রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল ও এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে ইউনিট হোল্ডারদের অর্থ তছরুপের অভিযোগ থাকলেও বিএসইসির পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অনেক ক্ষেত্রে এসব অনিয়মে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনেও গত ১৫ বছরে অনিয়ম, প্রতারণা ও কারসাজির মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের পুঁজিবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় কিছুদিন উজ্জীবিত হতে দেখা গেছে বিনিয়োগকারীদের। যদিও কিছুদিন পরই তাদের সে প্রত্যাশায় ছেদ ঘটেছে। মূলত পুঁজিবাজার নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ঘাটতির কারণেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত দেড় দশকে পুঁজিবাজারে সুশাসন তলানিতে ঠেকেছে। এত পরিমাণে অনিয়ম হয়েছে যে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে ডিএসইর পক্ষ থেকে পরিকল্পনা ও রূপরেখা তুলে ধরা হবে।’

36 ভিউ

Posted ১:৫৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com