শাহিদ মোস্তফা শাহিদ,সদর (৬ জুন) :: কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আউলিয়াবাদস্থ মাওলানা আবদুল্লাহর প্রতিষ্ঠিত মারকাজে আমেনা নূরানী মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা বার্মাইয়া ৩ মৌলভীর অপকর্মের কারণে জঙ্গি তৎপরতার সন্দেহ দিন দিন বাড়ছে। এতে এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মায়ানমারের ৩ শিক্ষক নিজেদেরকে বড় মাপের আলেম হিসাবে জাহির করে এলাকার যুব সমাজকে ভুল বুঝিয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানটি জঙ্গি আস্তানায় পরিণত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরা কৌশলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জাতীয় সনদ ও পরিচয় পত্র তৈরি করে বাংলাদেশী নাগরিক বনে গিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে স্থানীয় দানবীর মৌলভী আবদুল্লাহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর টেকনাফের হ্নীলার মৌলভী ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসাবে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার কয়েক মাস পূর্বে চিহ্নিত ডাকাত ও ভূমিদস্যুদের সাথে হাত মিলিয়ে খোদ প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী আবদুল্লাহকে পরিকল্পিতভাবে একটি হত্যা মামলায় আসামী করে। চতুর ঐ ইসলাম মৌলভী আবদুল্লাহর কাছের লোক সাজিয়ে তাকে রাতারাতি অন্য স্থানে পাঠিয়ে দিয়ে ভুমিদস্যুদের সাথে হাত মিলিয়ে তার ঘর, জায়গা-জমি সবকিছু দখলে নেয়।
এদিকে কয়েক বছর ঐ প্রতিষ্ঠানটি তার নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ায় সে নিজেকে বড় মাপের মুফতি পরিচয় দিয়ে মালেশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন এলাকায় লোকজন পাঠিয়ে মাদ্রাসার নামে চাঁদা হাতিয়ে নিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। এরই ফাঁকে সে নিজে আরো ২ রোহিঙ্গা মৌলভী আরমান ও ইয়াকুবকে নিয়োগ দেয়। ৩ রোহিঙ্গা মৌলভী মিলে ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে একেবারে তাদের নাগালে নিয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ মৌলভীর নামে ঈদুল আযহার সময় গরু, শীতকালে শীতবস্ত্র ও বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা আসে।
এলাকার ২/১জনকে ম্যানেজ করে গরু কিংবা শীতবস্ত্রগুলি কৌশলে মিয়ানমারের লোকজনের হাতে তুলে দেয়। অথচ সরকার এসব গরুর দাতাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। স্থানীয় ২/১ প্রভাবশালীর ইশারায় এরা কৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছে। এমনকি গভীর রাতে উক্ত মাদ্রাসায় বহিরাগত মৌলভীদের আনাগোনাও বৃদ্ধি পায়।
৩য় শ্রেণী পর্যন্ত নূরানী মাদ্রাসা পরিচালিত হলেও এ শিক্ষকরা নিজেদের এক তরফা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিতি লাভ করায় নিজস্ব গতিতে তারা ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত কওমি আক্বিদার সিলেবাস পাঠদান দিয়ে আসছে। তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা গেছে এ মাদ্রাসায় জাতীয় দিবস পালন করে না।এমনকি খোদ সাবেক প্রধান শিক্ষক মৌলভী ইসলাম নিজেই জাতীয় সংগীতের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে আসছিল কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে থাকে।
এসব মন্তব্য নিয়ে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে উঠলে এক পর্যায়ে এলাকায় স্বনামধন্য ব্যক্তি শাহনেওয়াজ শাহিন কোম্পানীকে সভাপতি করে একটি গ্রহণযোগ্য কমিটি উপহার দেয় এলাকাবাসী। এরই মাঝে ঐ ৩ মৌলভীর ভাগ বাটোয়ারার কাজ বন্ধ হওয়ায় কমিটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে বিষোদগার করতে থাকে।
এক পর্যায়ে এলাকাবাসী ২ মেরুতে অবস্থান করায় ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিককে অবহিত করলে তিনি সরেজমিনে একাধিকবার গিয়ে অবশেষে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে সহ¯্রাধিক লোকজনের উপস্থিতিতে তাকে (চেয়ারম্যানকে) আহবায়ক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে। ঐ কমিটি ৩ বার মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে বসেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এক পর্যায়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচন ও সভার দিন ধার্য্য করে।
যথারীতি বৈঠকে গত ২০ মে বার্ষিক সভার দিন ধার্য্য করে। প্রধান অতিথি হিসাবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কর্নেল অবঃ ফোরকান আহমদকে দাওয়াত দেয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক নিজেই। প্রধান অতিথি হিসাবে হয়ত ফোরকান সাহেব উপস্থিত হলেই পুরো থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে অপকর্মের ৩ মুল হোতাদের।
তাই কৌশলে আবারো এলাকাবাসীকে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে রোহিঙ্গা এ ৩ মৌলভী আহবায়ক কমিটির ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সভাটিও বানচাল করে। বর্তমানে ঐ ৩ শিক্ষকের কলাকৌশলেই সরকারী কোন বিধি ছাড়াই এক প্রকার রোহিঙ্গা আইনে এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশ থেকে মাদ্রাসার নামে চাঁদার টাকাগুলি এখনো তাদের পকেটে রয়েছে।
সচেতন মহলের দাবী, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী মায়ানমারের ঐ ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা এবং আটক পূর্বক নাশকতামূলক কোন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তথ্য গোপন রেখে বাংলাদেশের ভোটার হওয়ায় ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার নির্বাচন কমিশন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এক ব্যক্তি। বিষয়টি তদন্তাধীন বলে জানা গেছে। স্থানীয় এমইউপি আবদু শুক্কুরের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপরোক্ত বিষয়টি সত্য বলে স্বীকার করেন।
অন্যদিকে মারকাজে আমেনার পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও ইসলামাবাদ চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বার্মাইয়া ৩ মৌলভী প্রতিষ্ঠানটি মনগড়া নিয়মানুযায়ী পরিচালিত করে আসছে এবং যথারীতি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জরুরী হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
Posted ১:১৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta