আব্দুল হামিদ, নাইক্ষ্যংছড়ি(১৪ জুলাই) :: কক্সবাজারের রামু উপজেলার ঈদগড়-বাইশারী সড়কে অপহৃত মোটর সাইকেল চালক সহ এক মাদ্রাসা ছাত্রতে সাত দিন পর মুক্তিপনে ছাড়া পেয়েছে।
শুক্রবার ভোররাতে ঈদগড়-বাইশারী সড়কের ব্যাংঢেবা নামক গহীন অরন্য থেকে ৭দিন পর মূমুর্ষ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করা হয়।আর অপহৃতদের উদ্ধারের জন্য পরিবারকে গুনতে হয় ১লক্ষ ১০ হাজার টাকা।
এরফলে গত সাতদিন ধরে চলা অপহরণ ও মুক্তিপনের ঈদুর-বেড়াল খেলার সমাপ্তিতে স্বস্তি পেল অপহৃতদের পরিবার,প্রশাসন ও অপহরণকারীরা। কারণ অপহৃতদের উদ্ধার এবং অপহরনকারীদের ধরতে চাপরে মুখে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অপরদিকে গ্রেফতার হওয়ার আতংক এবং দাবী অনুয়ায়ী পর্যাপ্ত মুক্তিপন না পাওয়ায় ছাড়তে চাইছিলনা অপহরণকারীরা।
অবশেষে চতুর্মুখি চাপে ৬লক্ষ টাকার দাবীর মধ্যে মাত্র ১লক্ষ ১০ হাজার টাকার দেনদরবারে মুক্তিপান অপহৃত যুবক নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের দক্ষিন বাইশারী গ্রামের বাসিন্দা উসমান গনীর পুত্র মাদ্রাসা পড়–য়া সাদ্দাম হোসেন (১৮) ও একই ইউনিয়নের পূর্ণবাসন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা করিম মুন্সির পুত্র মোটর সাইকেল চালক নুরুল আমিন (২৪)।
অপহৃত যুবক সাদ্দাম হোসেনের পিতা উসমান গনী জানান, গত ৭জুলাই অপহরনের তিন দিন পর ৯ জুলাই রবিবার অপরিচিত এক মোবাইল নাম্বার থেকে অপহৃতদের মুক্তিপনের জন্য ৬ লাখ টাকা দাবী করছিল।তিনি আরো জানান, অপহরণকারীরা এখন বিভিন্ন অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপনের জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। তাদের চাহিদা মত মুক্তিপন না দিলে মেরে ফেলারও হুমকি দিতে থাকে ঐ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।
অপহৃত সাদ্দাম হোসেনের বড় ভাই কাউছারের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাত দুইটার দিকে রামু উপজেলার ঈদগড়ের বৈধ্যপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্প সংলগ্ন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের রিজার্ভ এলাকায় হাতে হাতে মুক্তিপনের টাকা নেয় সন্ত্রাসীরা। টাকা নেওয়ার এক ঘন্টা পর ফোন করে তাদের বেংডেফা নামক জায়গায় ছেড়ে দিয়েছে বলে জানায়। পরে সকাল ৫ টার দিকে তাদের অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
অপহৃত নুরুল আমিনের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসীদের মুক্তিপন হিসেবে দরকষাকষি শেষে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। উদ্ধারের পর তাদের শরীরে একটুও শক্তি নেই। বর্তমানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের চোখে, কব্জি এবং মাথায় আঘাত রয়েছে। সুস্থ হতে প্রায় সপ্তাহ দুয়েক লাগবে। অপহরনের পর থেকে নুরুল আমিনের মা-বাবা ছেলের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বলেও জানান তিনি।
এদিকে ৭ জুলাই অপহরনের পর থেকে নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ৩১ বিজিবির সদস্যরা ঈদগড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গহীন বনে সম্ভ্যাব্য এলাকায় সাড়াশী অভিযান চালায়। পাশাপাশি কক্সবাজারের রামু থানা পুলিশ, ঈদগড় পুলিশ, বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ গহীন বনে অভিযান পরিচালনা করলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের উদ্ধার করতে পারেনি।আর ৭ দিন পর শুক্রবার ভোররাতে অপহৃতরা উদ্ধার হওয়ায় এক প্রকার স্বস্তি পেল প্রশাসন।
জানা যায়,গত ৭ জুলাই ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক নুরুল আমিন দুই আরোহী সাদ্দাম হোসেন ও জসিম উদ্দিনকে নিয়ে ঈদগড় বাজার থেকে নিজ বাড়ী বাইশারী আসার পথে রাত ১০ টায় বাইশারী-ঈদগড় সড়কের অলিরঝিরি নামক স্থানে ৭/৮ জনের সশস্ত্র ডাকাত দলের সদস্যরা সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেট সৃষ্টি ও গুলি বর্ষন করে দুইজনকে অপহরন করে নিয়ে যায়। ঐ সময় জসিম উদ্দিন নামের আরোহী পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পায়। এরপর পরই ঘটনাটি প্রশাসনকে জানানো হলে ঈদগড় পুলিশ-বাইশারী পুলিশ ও এলাকাবাসী উক্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন।
এ বিষয়ে রামু থানার (ওসি তদন্ত) পরিদর্শক কবির হোসেন জানান, অপহরনের পর থেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে সন্ত্রাসীদের সম্ভাব্য স্থানে অপহৃতদের উদ্ধারে সাড়াশি অভিযান চলে। পাশাপাশি বিজিবির অভিযানও অব্যাহত থাকায় চাপের মুখে অপহৃতদের ছেড়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
তবে স্থানীয়রা জানান,বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কে অপহরন, মুক্তিপন, বানিজ্য নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবির সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হলে অবশ্যই চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা ধরা পড়বেন বলে মনে করেন তারা।
Posted ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta