বিশেষ প্রতিবেদক(১৩ আগস্ট) :: মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আবারও ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ ব্যাপক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে অভিযান চালানো হচ্ছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে সেনাবাহিনী গত কয়েক দিনে বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। রোহিঙ্গারা মনে করছে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য এটি পরিকল্পিত অভিযান।
এ পরিস্থিতিতে আবারও ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে এ আশঙ্কায় সীমান্তে নজরদারি ও টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
সীমান্তের ওপার থেকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কিছুদিন আগে মংডু শহরের পাশে একটি পাহাড়ের কাছে ৭ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর মৃতদেহ পাওয়া যায়। এর পর একটি রোহিঙ্গা পাড়ায় হামলা চালিয়ে বেশ কিছু লোককে হত্যা করা হয়েছে। পরে নিরাপত্তার অজুহাতে রাখাইনে সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
গত অক্টোবরে সহিংস ঘটনার পর রাখাইনে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ করেছিল মিয়ানমার। সে সময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হয় অমানবিক দমন-পীড়ন নির্যাতন। সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অন্তত ২০টি গ্রামে আগুন দেয়। হত্যা করে এক হাজারের বেশি নিরীহ ব্যক্তিকে। নিখোঁজ হয় বহু রোহিঙ্গা। ধর্ষিত হয়েছে অনেক নারী ও শিশু।
এতে বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তাদের প্রায় সবাই পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রাখাইনে সেনা সমাবেশ কমালেও এখন নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কথা বলে ফের ব্যাপক সেনা মোতায়েন করেছে।
রাখাইন রাজ্যের পুলিশ প্রধান কর্নেল সেই লুইন সেনা মোতায়েনের সত্যতা নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, রাখাইনে বিদ্রোহীরা কিছু মুসলিম ও বৌদ্ধকে হত্যা করেছে। তাই সেনাবাহিনী নিরাপত্তা বাড়িয়েছে।
টেকনাফে বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম আরিফুল
ইসলাম বলেছেন- ‘সীমান্তের ওপারে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করার খবর আমরা অবহিত হয়েছি। তারা জানিয়েছে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য সেনা সদস্য বাড়ানো হয়েছে। তার পরও সীমান্তের কাছাকাছি এভাবে সেনা সমাবেশ বাড়ানোর ঘটনায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।’
বিজিবি অধিনায়ক জানান- রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের কারণে আবার যেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে ব্যাপারে বিজিবি সতর্ক রয়েছেন। বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবির টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজারে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মনজুরুল হাসান খান জানিয়েছেন- ‘রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েন করার খবর আমরা পেয়েছি। বিজিবি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্ক রয়েছে। কোনোভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, সীমান্তে একটি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে টহল ও নজরদারি নিশ্ছিদ্র করতে পারবে বিজিবি।
রাখাইন থেকে একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক দিন থেকেই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে ওই এলাকায়। কমপক্ষে ১২টি ব্যাটালিয়ন সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে। ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেনা মোতায়েন করায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। সূত্র আরও জানায়, সেনাবাহিনী রাখাইনে সড়ক সংস্কার করছে। কোথাও কোথাও নতুন সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনকে জোর করে ধরে নিয়ে নির্মাণ কাজে নিয়োগ করছে সেনাবাহিনী।
আবু তাহের, উখিয়া সীমান্ত থেকে ফিরে
Posted ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৩ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta