মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(২৭ মে) :: কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সংঘবদ্ধ ডাকাত ও সন্ত্রাসীচক্রের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা বস্তিতে চলছে অপহরণবাণিজ্য। বালুখালী ও কুতুপালং বস্তিতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ওপর প্রশাসনিক কোনো নজরদারি না থাকায় সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা একের পর এক অপহরণের ঘটনায় লিপ্ত হয়ে মুক্তিপণ হিসাবে মোটা অংকের চাঁদাবাজি করছে।
সম্প্রতি মালয়েশিয়া প্রবাসী এক রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে মধুরছড়া জঙ্গলে তিনদিন আটকে রেখে হত্যা করেছে অপহরণকারীচক্র।
পুলিশ নিহত রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন বা সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করতে না পারায় বস্তির রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরাজ করছে অপহরণ আতংক।
সরেজমিন কুতুপালং ও বালুখালী বস্তি এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে আলাপ করা হলে তারা জানান, মধুর ছড়া গভীর জঙ্গলে অবস’ান নিয়ে সশস্ত্র ডাকাত, সন্ত্রাসীচক্র রোহিঙ্গা কিশোরী-যুবতীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার রোহিঙ্গাদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।
২৫ মে বিকেল ৩টায় উখিয়া থানা পুলিশ মধুর ছড়ার গভীর জঙ্গল থেকে মালয়েশিয়াপ্রবাসী কুতুপালং বস্তির ৪২ নম্বর শেডের বাসিন্দা ইমাম হোছনের ছেলে মো. শফির (২৯) লাশ উদ্ধার করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিল্টন বড়-য়া জানান, মালয়েশিয়াপ্রবাসী মো. শফিকে তিনদিন আগে অপহরণ করা হয়েছিল। তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
কুতুপালং বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, এর আগেও সন্ত্রাসীরা বস্তি এলাকা থেকে ৪/৫ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে অপহরণ করে মধুর ছড়ার জঙ্গলে আটকে রাখে। পরে আত্মীয়স্বজনেরা মুক্তিপণ দিয়ে ওইসব রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে।
বস্তির ওই নেতা আরো জানান, কুতুপালং বস্তির কিছু সন্ত্রাসীচক্র বহিরাগত ডাকাতদের সাথে আঁতাত করে রোহিঙ্গা নরনারীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। এনিয়ে বস্তি এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরাজ করছে অপহরণ আতংক।
বালুখালী বস্তির নাগু মাঝি অভিযোগ করে জানান, ২৬ মে সন্ধ্যা ৬ টায় অপহরণকারীচক্রের সদস্যরা বালুখালী বস্তির বাসিন্দা উমর হামজার ছেলে কামাল হোছন (২৫) কে অপহরণ করে মধুর ছড়ার জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা মুঠোফোনে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এঘটনায় অপহৃত কামাল হোছনের ভাই আবুল হোছন বাদি হয়ে গত শনিবার উখিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন।
বালুখালী বস্তির ডি-ব্লকের বাসিন্দা মৌলভী ইউনুছ জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে বিদেশে অবস’ানরত স্বজনেরা মসজিদের জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল। ওই টাকা নিয়ে ক্যাম্পে ফেরার পথে স’ানীয় সন্ত্রাসীরা টাকাগুলো ছিনিয়ে নেয়। এনিয়ে প্রতিবাদ করায় সন্ত্রাসী অপহরণ করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি প্রদর্শন করেছে।
স’ানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ জানান, বস্তি এলাকায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত। বিভিন্ন মামলায় সম্পৃক্ত এসব রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কারণে বস্তি এলাকায় সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের জানান, বিভিন্ন মামলায় সম্পৃক্ত সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Posted ২:২৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৮ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta