মোসলেহ উদ্দিন/শহীদুল ইসলাম,উখিয়া(২৫ আগস্ট) :: বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সন্ত্রাসী আলেকিন গ্রুপ ও পুলিশ বাহীনির সাথে সংঘর্ষে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।আর রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে সীমান্ত প্রহরী বিজিবি,কোস্টগার্ড ও পুলিশ সদস্যরা।
শূক্রবার সকাল থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়ার পালংখালীর রহমতের বিল সহ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পালংখালীর আনজুমান পাড়া থেকে ধামনখালী আঞ্জুমান পাড়া, রহমতের বিল ও ঘুমধুম ও তুমব্র“ সীমান্ত সংলগ্ন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা বেড়িবাধের উপর অবস্থান নিয়েছে। সন্ধ্যা হলেই এদের অনুপ্রবেশের আশংকা করছে স্থানীয়রা। তবে রোহিঙ্গারা যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি’র অসংখ্য সদস্য সেখানে অবস্থান করছেন।তারা চেষ্টা করছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলছেন, এসব রোহিঙ্গার কারণে এখানকার এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ধামনখালী গ্রামের আবদুল্লাহ বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে আল-ইয়াকিন নামের একটি সন্ত্রাসী সংগঠন মিয়ানমারের নাসাকার ৪টি চৌকি দখল করে নিয়েছে।
শূক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে ৭/৮ রাউন্ড গুলি বর্ষনের খবর শুনেছি। বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বিজিবির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরৎ পাঠানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেন।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, স্থানীয় চৌকিদার, ইউপি সদস্য ও গ্রামবাসীর সহযোগীতায় সীমান্ত এলাকায় সার্বক্ষনিক পুলিশ এবং বিজিবিকে সহযোগীতা করছি। কোন অবস্থাতেই রোহিঙ্গাদের এদেশে ঢুকতে দেওয়া হবেনা।
ইউপি সদস্য নুরুল আমিন ও জয়নাল আবেদীন বলেন, রোহিঙ্গারা এদেশে এসে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই করছে। কিছু কতিপয় দালালদের কারণে রোহিঙ্গারা এদেশে আসার সুযোগ পাচ্ছে। তারাও স্থানীয় তরুন যুবকদের নিয়ে রাতভর সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সাথে থাকবেন।
৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, সীমান্তে ব্যাপক জোরদার করা হয়েছে। কোন অবস্থাতেই রোহিঙ্গাদের এদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবেনা।
উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, খবর পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবালের নির্দেশে সন্ধার পর থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যাত্রীবাহী বাস সহ বিভিন্ন যানবাহনে পুলিশ সদস্যরা তল্লাশী চালাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার লোকজনের মাঝে অজানা আতংক বিরাজ করছে। এ রিপোর্ট লেখাকালীন পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক সংবাদের মাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা যায়,বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সন্ত্রাসী আলেকিন গ্রুপ ও পুলিশ বাহীনির সাথে সংঘর্ষ লিপ্ত হয়।এসময় পুলিশ সদস্যসহ ৩২জন নিহত হয়। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এখনো অব্যাহত রয়েছে।আর সেই ভয়েই পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।
এদিকে শুক্রবার সকাল ১১টায় টেকনাফের নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে সে দেশের ১৪৬ জন নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরে তাদের একই পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক মেজর শরিফুল ইসলাম জমাদ্দার ১৪৬ জনকে ফেরত পাঠানোর তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এলাকায় সন্ত্রাসীদের সমন্বিত হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর তার দায় চাপানো হয় রোহিঙ্গাদের ওপর। এ ঘটনায় ঘরহারা হয় ৩০ হাজার মানুষ। পালাতে গিয়েও গুলি খেয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের। মৃত্যুর ভয়ে বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নিয়েছে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গারা এখনো টেকনাফের লেদা, নয়াপাড়া, শামলাপুর ও উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীর বস্তিতে অবস্থান করছে।
Posted ৫:১৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৫ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta