বিশেষ প্রতিবেদক(১৮ জুলাই) :: সুগন্ধা। গাল ভরা নাম সড়কটির।কক্সবাজারের কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের পাশেই সুগন্ধা সড়কের অবস্থান। হেঁটে গেলে পাঁচ মিনিটেই পৌঁছানো যায় চোখ জুড়ানো সৈকতে। অথচ সড়কে পা দিতেই ঝাপটা মারে শুঁটকির দুর্গন্ধ। নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়। পাশের হোটেলেও এই গন্ধ নাকে এসে লাগে।
এই সুগন্ধা সড়কের উত্তর পাশেই তৈরি হয়েছে অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকানপাট। ওই সব দোকানের বেশ কয়েকটিতে বেচাকেনা হয় শুঁটকিও। দুর্গন্ধের উৎস ওই দোকানগুলোই। কেবল দুর্গন্ধ নয়। সড়কের কিছু অংশ দখল করে গড়ে ওঠা এসব দোকানের কারণে সরু হয়ে পড়েছে সৈকতে যাতায়াতের পথ। দোকানিদের উৎপাত ও অযাচিত ভিড়ের কারণেও পর্যটকদের ভ্রমণের আনন্দও মাটি হচ্ছে। সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত এলাকা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসে জেলা প্রশাসন দুই দফায় এই সড়কের দক্ষিণ পাশের শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছে। তবে অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও উত্তর পাশের দোকানগুলো উচ্ছেদ হয়নি।
গত শুক্রবার বিকেলে কলাতলী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ ইট বিছানো সুগন্ধা সড়কের উত্তর পাশে ৬০টির বেশি ঝুপড়ি দোকানপাট গড়ে ওঠেছে। টিনের বেড়া ও ছাউনি দিয়ে তৈরি এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে শুঁটকি, ওষুধ, আচার, ভাজা মাছ, শামুক-ঝিনুকের গয়নাসহ নানা ধরনের পণ্য। সড়ক সরু হয়ে পড়ায় পর্যটকবাহী রিকশা, অটোরিকশা ও প্রাইভেটকার স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারে না। পর্যটকদের হাঁটাচলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। শুঁটকি দোকানের কারণে নাক চেপে চলাচল করছেন পর্যটকেরা।
ঢাকার রমনা এলাকার ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘সমুদ্রসৈকতের নির্মল বাতাস খেতেই আমরা এখানে ছুটে এসেছি। এখন শুঁটকির দুর্গন্ধে হাঁটাচলা দায় হয়ে পড়েছে। হোটেলকক্ষেও শুঁটকির দুর্গন্ধে ঘুম আসে না। সৈকত এলাকা থেকে শুঁটকি মার্কেট দ্রুত সরিয়ে নেওয়া উচিত।’
কক্সবাজার সদর ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার নগরের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী সুগন্ধা সড়কটি কলাতলীর ৪ নম্বর সড়ক। এটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের বিএস দাগ ২০০০২,২০০০৪, ২০০০৫ ও ২০০০১ এর অন্তর্ভুক্ত। ২০০৯ সালে বাতিল হয়ে যাওয়া ১৯, ২৪, ১২ ও ২৩ নম্বর প্লটের ১৪০ শতক সরকারি জমি দখল করে এই দোকানগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, দেড় বছর আগে সুগন্ধা সড়কের উত্তর পাশে অবৈধভাবে তৈরি এই দোকানগুলো গড়ে ওঠেছে। এসব দোকানের কোনোটিরই অনুমোদন নেই।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর একটি মেসার্স ভাই ভাই ফার্মেসি। এই দোকানের মালিক নুরুল হাকিম বলেন, পৌরসভার বাহারছড়া এলাকার জনৈক বুলবুল থেকে তিনি দোকান ঘরটি ভাড়া নিয়ে ফার্মেসি করেছেন।
এর পাশেই টেবিল বসিয়ে ভাজা মাছ বিক্রি করছেন জয়নাল আবেদিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, তিন মাস আগে মোহাম্মদ নুর নামে এক ব্যক্তি থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা সেলামিতে দোকান ঘরটি ভাড়া নিয়েছেন তিনি।
এসব অবৈধ দোকানের মালিকেরা নিজেদের মধ্যে ‘সুগন্ধা শুঁটকি ও অন্যান্য দোকান মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে সমিতিও গড়ে তুলেছেন।
ওই সমিতির সভাপতি আব্দুস সবুর বলেন, ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার সৈকতে ১০০টি প্লট বরাদ্দ দেয়। শর্ত লঙ্ঘন করায় কিছু প্লটের ইজারা বাতিল হয়। বাতিল হওয়া প্লটের জমিতে তাঁরা দোকানগুলো গড়ে তুলেছেন। এসব দোকানপাট উচ্ছেদ না করার জন্য আদালতের নির্দেশনা আছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে সুগন্ধা সড়কের দক্ষিণ পাশ থেকে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা (দোকানপাট) উচ্ছেদ করে প্রায় এক একর সরকারি জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। সড়কের উত্তর পাশ থেকেও তিনটি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছিল।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আদালতে রিট করে সরকারি জমি দখলে রাখা যায় না। দোকানগুলো শিগগিরই উচ্ছেদ করা হবে।
Posted ৬:৩৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta