কক্সবাংলা রিপোর্ট(১ জুলাই) :: কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগরে রাসত্মাঘাট নির্মাণসহ সরকারি কোন উন্নয়ন কাজে বাধা দানের অপচেষ্টা সহ্য করা হবে না বলে জানিয়েছেন দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকাবাসী। শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় স্থানীয় গ্রামবাসী আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা এ হুঁশিয়ারি দেন।
দরিয়ানগরে রাস্তাঘাট নির্মাণসহ আড়াই কোটি টাকার দুটি উন্নয়ন প্রকল্প বাসত্মবায়নের প্রাক্কালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ডীন ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে পাহাড়কাটার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলা দায়েরের প্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ কর্মসূচি পালন করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন- বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দরিয়ানগরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ব্রীজ নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে উক্ত ক্যাম্পাসের কারণে এলাকার রাসত্মাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে এবং আরো উন্নয়ন হচ্ছে। এলাকার দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। কিন্তু শুরু থেকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল।
মহলটি এতদিন কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনকে বাধাগ্রস্ত করতে না পেরে সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের লেলিয়ে দিয়েছে। তারা ৭০ লাখ টাকার একটি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডরমিটরি নির্মাণ কাজ বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করছে। অথচ উক্ত উন্নয়ন কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতমাসে ঠিকাদার নির্বাচনের পর কার্যাদেশও দিয়েছে। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এসব উন্নয়ন কাজ শুরু হচ্ছে।
বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, একটি রাস্তার অভাবে এখানকার হাজার হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তাই কোন ষড়যন্ত্রই গ্রামবাসী বরদাশ্ত করবে না।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, অন্যথায় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় ঘেরাও ও মেরিন ড্রাইভ অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে এলাকাবাসী বাধ্য হবে।
বক্তারা রাস্তা ও ডরমিটরি নির্মাণ কাজে একটি ইঞ্চিও পাহাড় কাটতে হবে না, এমন নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন- পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারি উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
দরিয়ানগর বড়ছড়া সমাজ কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত সমাবেশের আগে স্থানীয় আশ্রায়ণ প্রকল্প থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয় এবং ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে বড়ছড়া ব্রীজ চত্বরে এসে সমাবেশে মিলিত। এদের দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মসূচিতে যোগ দেন স্থানীয় দরিয়ানগর বড়ছড়া যুবসমাজ ও শহর কৃষক লীগের ১২নং ওয়ার্ড শাখার নেতৃবৃন্দ।
বড়ছড়া সমাজ কমিটির সভাপতি কাজী আবদুল খালেকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইসমাইলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত বিড়্গোভ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নজির আলম সওদাগর, মোহাম্মদ আলী বাবুল, আবু তাহের, আসমত আলী সওদাগর, কৃষক লীগ ১২ নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক আবুল মঞ্জুর, সহ-সভাপতি নেজামউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খান মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সুমন, যুবনেতা রেজাউল করিম, দরিয়ানগর বড়ছড়া যুব সমাজের সভাপতি নুরুল আবছার ও মাহবুব আলমসহ অন্যান্য নেৃতবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর শহরতলীর দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকায় ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কক্সবাজার ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর এখানে স্থাপন করা হয় কাঁকড়ার জন্য সস্তায় বিকল্প খাদ্য তৈরির জন্য একটি গবেষণা কেন্দ্র। সেই সাথে দেশে প্রথমবারের মত ভেটকি চাষের পোনা উত্পাদনের জন্য নতুন একটি গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এ গবেষণা প্রকল্পটি শুরু করতে আগামী সপ্তাহে কক্সবাজারে আসছেন মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানো বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য বিজ্ঞান অনুষদের ভেটকি বিশেষজ্ঞ একদল শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের একটি দল। দলটি প্রায় পক্ষকাল কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। বর্তমানে এ ক্যাম্পাসে ফিশারিজ অনুষদের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে কোর্সের অংশ হিসাবে এক মাস মাঠ পর্যায়ে অধ্যয়ন ও গবেষণা করতে।
পরিপূর্ণ শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য এ ক্যাম্পাসে ধীরে ধীরে অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে পাকা রাস্তাঘাটের অভাবে এখানে উন্নয়ন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে রাস্তা তৈরি ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ একসাথেই হচ্ছে।
ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেন, কক্সবাজার ক্যাম্পাসে সরকারি প্রতিশ্রুতি মোতাবেক শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে কাজ হবে। পাহাড় কেটে পরিবেশ ধংস করা হবে না। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্টরা নির্মাণ কাজে তদারকি করতে পারে।
Posted ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০২ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta