বিশেষ প্রতিবেদক(৪ জুন) :: পানির ওপর জেগে আছে কেটে নেওয়া অসংখ্য বাইনগাছের গুঁড়ি। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেটে ফেলা গাছের ডাল-পালা। এলাকাটি উপকূল রক্ষার জন্য সৃজিত প্যারাবনের অংশ। সেখানে এখন গড়ে তোলা হচ্ছে চিংড়ি ঘের। চিংড়ি চাষের প্রয়োজনে ইতিমধ্যে চারপাশে বাঁধ দিয়ে ওই জায়গায় ঢোকানো হয়েছে লোনা পানি।
রোববার দুপুরে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটার দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এই চিত্র। উপকূলীয় বন বিভাগের সৃজিত প্যারাবন কেটে এভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে চিংড়ি ঘের।
ওই চিংড়ি ঘেরের মালিক জহির উদ্দিন বলেন, প্যারাবন হলেও এই জমি তাঁর দখলে আছে দীর্ঘসময় ধরে। ঘেরের গাছপালা স্থানীয় লোকজন লাকড়ির জন্য কেটে নিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এভাবে প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের গড়ে তোলা হচ্ছে। কুতুবজোম ইউনিয়নের তাজিয়াকাটা এলাকায় তিনটি, ঘটিভাঙায় একটি এবং শাপলাপুর ইউনিয়নে দুটি চিংড়িঘের গড়ে উঠেছে প্যারাবন ধ্বংস করে।
প্যারাবন ধ্বংস করে এভাবে চিংড়ি ঘের গড়ে ওঠায় উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদেরা। তাঁরা বলছেন, এতে মহেশখালীর জীববৈচিত্র্য বিশেষ করে পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগী সংস্থা নেকম এর কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম বলেন, মহেশখালীর সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গা উপকূলে সৃজিত প্যারাবনে কয়েক প্রজাতির বক, পানকৌড়ি, কাদা খোঁচা, গাঙচিল এবং বিলুপ্ত প্রায় চামচ ঠোঁট পাখি বিচরণ করে। সব মিলিয়ে ৪৫টি প্রজাতির অন্তত ৫০ হাজার পাখির আবাসস্থল এই প্যারাবন। চিংড়িঘেরের জন্য গাছ কেটে ফেলায় পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। পাশাপাশি উপকূলীয় বেড়িবাঁধও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৭০০ একর প্যারাবন ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে এই ছয়টি চিংড়িঘের। পুরো উপজেলায় উপকূলীয় বন বিভাগের ১৭ হাজার একরের বিশাল প্যারাবন দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র ২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও লোকবলের অভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
চিংড়িঘেরের জন্য কত গাছ কাটা হয়েছে তার হিসাব মেলেনি। তবে কেটে নেওয়া গাছের সংখ্যা প্রায় লাখখানেক হবে বলে মন্তব্য করেন কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন।
উপকূলীয় বন বিভাগের গোরকঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণের মূল হোতাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আটটি মামলা হয়েছে। কিন্তু কেউ ধরা পড়ছে না। ফলে প্যারাবন নিধন বন্ধ হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপকূলীয় বন বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, প্যারাবন কেটে চিংড়িঘের নির্মাণ করার সময় স্থানীয় বনকর্মীরা বেশ কয়েকবার বাধা দিয়েছিল। তারপরও প্যারাবন নিধন করে ঘের নির্মাণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। প্যারাবন উজাড় করে ছয়টি চিংড়িঘের নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বন বিভাগ আটটি মামলা করেছে।
মহেশখালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের তৈরির সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছে। জড়িতদের ধরার জন্যও পুলিশ চেষ্টা করছে।
Posted ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৫ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta