কক্সবাংলা রিপোর্ট(২১ জুলাই) :: নতুন জটিলতায় পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। জাইকার অর্থায়নে ৪৫ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের ‘সর্বনিম্ন’ দরদাতা হিসেবে জাপানি কোম্পানি সুমিতমোকে এরই মধ্যে চুক্তির আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী মাসে এই চুক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু দরপত্র বাছাইয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনেছে অপর প্রতিযোগী জাপানি দরদাতা মারুবিনি।
তারা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট-সিপিটিইউতে এ বিষয়ে আপিল করেছে। আগামী সপ্তাহে এই আপিলের ওপর শুনানি হবে। ফলে আগামী মাসে চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সরকারি সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিএল) বলছে, সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দরপত্র বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তাই শুনানি চললেও চুক্তির জন্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার পর গত বছর হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার কারণে এই প্রকল্পের দরপ্রক্রিয়া কয়েক দফা পিছিয়ে যায়। পরে সরকারের জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে প্রকল্পের কার্যক্রম আবার শুরু হয়। দরপত্রে অংশ নেয় জাপানি দুই প্রতিষ্ঠান। এর একটি মারুবিনি করপোরেশন। মারুবিনির সঙ্গে রয়েছে মিতসুবিশি হিটাচি পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড এবং টিওএ করপোরেশন।
প্রতিযোগী সুমিতমোর সঙ্গে রয়েছে তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশন। আর্থিক প্রস্তাবে মারুবিনির চেয়ে সুমিতমোর অর্থমূল্য বেশি ছিল। সুমিতমো করপোরেশন ৪.২ বিলিয়ন ডলার এবং মারুবিনি করপোরেশন ৩.৯ বিলিয়ন ডলারে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু কাজ দেওয়া হয়েছে সুমিতমোকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম বলেন, প্রস্তাব মূল্যায়নের পর উভয়ের দর বেড়ে যায়। তবে মারুবিনির দরমূল্য প্রায় এক বিলিয়ন বৃদ্ধি পায়, যা সুমিতমোর চেয়ে প্রায় ৩০ কোটি ডলার বেশি। তাই সুমিতমোকেই কাজ দেওয়া হয়েছে। অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান জাইকার অনুমোদনের পরই চুক্তির আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের পর চুক্তির মূল্য দাঁড়িয়েছে ট্যাক্স-ভ্যাটসহ ৪৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। যেখানে ট্যাক্স-ভ্যাটের পরিমাণ ৯ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
মারুবিনির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দরপত্র বাছাই প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত নীতিমালা ও ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাইকার গাইডলাইনের শর্ত লঙ্ঘিত হয়েছে।
সংস্থার বক্তব্য অনুসারে, জাইকার গাইডলাইন অনুসারে দরপ্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অস্বচ্ছলতা থাকলে সে অযোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ার কথা। সুমিতমোর অন্যতম অংশীদার তোশিবা। এই তোশিবাই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান যন্ত্রপাতি প্রস্তুত ও সরবরাহ করবে। তোশিবা বর্তমানে আর্থিক দিক দিয়ে যোগ্য নয়।
কারণ তোশিবা গত বছর ৪৯৯ বিলিয়ন জাপানি ইয়েন আর্থিক লোকসান গুনেছে। চলতি বছরও একই পরিমাণ লোকসান দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সুমিতমো কনসোর্টিয়াম অযোগ্য বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু তাদেরকে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচন করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের পর নেগোসিয়েশনের সময় সুমিতমোকে বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই তারা দরপ্রক্রিয়া নিয়ে সিপিটিইউতে আপিল করেছে।
এ বিষয়ে গত ১১ জুলাই কোল পাওয়ার কোম্পানিকে দেওয়া এক চিঠিতে সিপিটিউই শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুক্তির প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার আবেদন করা হয়। কিন্তু এর আগেই ১০ জুলাই সুমিতমোকে চুক্তির আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।
চিঠি ইস্যুর বিষয়টি সিপিটিইউকে জানানো হয়েছে বলে জানান সিপিজিসিএলের এমডি আবুল কাশেম। এই পরিস্থিতিতে সিপিটিইউ কর্তৃপক্ষ আগামী ২৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, প্রাক্-দরপত্র প্রক্রিয়ার সময় কনসোর্টিয়ামের প্রতি সদস্যের আর্থিক যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হয়। চূড়ান্ত আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নে কনসোর্টিয়ামের যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। তাছাড়া ঋণদাতা জাইকাও অভিযোগগুলোর বিষয়ে অবহিত রয়েছে। তারা সব জেনেই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।
এ ছাড়া তোশিবা শত বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে তাদের আর্থিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা হবে না। তবে শুনানি শেষে সিপিটিইউ কোনো নির্দেশনা দিলে তা মানা হবে বলে জানান তিনি।
Posted ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta