মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৬ জানুয়ারী) :: মিয়ানমার সামরিক জান্তার দমন-নিপীড়ন, খুন,ধর্ষনসহ নানাবিদ অত্যাচার উৎপীড়নের শিকার হয়ে এ দেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ১২ অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে।
সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের থাকা,খাওয়া,চিকিৎসা,পয়োনিস্কাশন সহ নিয়মিত ভাবে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছে। কিন্তু ক্যাম্পে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি চালু না হওয়ায় রোহিঙ্গা জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার আশংখা করছে কৃষিবিদ,অর্থনীতিবিদ ও সচেতন মহল।
শনিবার উখিয়ার থাইংখালী জামতলি, তাজনিমার খোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে কর্মরত অবস্থায় দেখা গেছে বেশির ভাগ মহিলা গর্ভবতি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রোহিঙ্গা মাঝি হামিদ হোসেন জানান, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করলেও তারা ছিল মূলত নজরবন্ধির মতো। বর্মি সামরিক জান্তারা এসব রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে তাদের ফায়দা লুটেছে। রাখাইনে জন্ম নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য সেবাতো দুরের কথা রোহিঙ্গারা ঠিক মতো খাবার খেতে পারেনি। যে কারনে অধিকাংশ শিশু অপুষ্টিকর অবস্থায় রয়েছে।
রোহিঙ্গা মাঝি এনায়েত উল্লাহ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রাখাইনে কোন মানুষ রোগব্যধিতে আক্রান্ত হলে তাকে চোরাইপথে বাংলাদেশে এনে চিকিৎসা দিতে হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্বন্ধে রোহিঙ্গা মহিলারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ বললে চলে। তারা জানেনা ঔষধ খেলে সন্তান হয়না। আবার অনেকেই ধর্মের দোহাই দিয়ে একের পর এক সন্তান ধারণ করছে। যে কারনে একেকটি পরিবারে ১০/১২জন করে সদস্য রয়েছে।
কুতুপালং ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায়, ব্র্যাক, ইউনিসেফ,সেইভ দ্যা সিলড্রেন, এসিএফ, এমএসএফ হল্যান্ডসহ প্রায় ৭০টির অধিক এনজিও সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করছে। কয়েকজন স্বাস্থকর্মীর সাথে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের ধারণা দেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
ময়নারঘোনা ক্যাম্প ঘুরে গর্ভবতি মহিলা আনোয়ার খাতুন(২৮)সাথে কথা হয়। সে গর্ভিত অবস্থায় তার স্বামীকে বর্মি সেনারা জবাই করে হত্যা করেছে। তার আরো ৪টি সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে কুলসুমার বয়স মাত্র ৮ বছর। এতো কম সময়ে ৪সন্তান জন্ম দিলেন কেন জানতে চাওয়া হলে ওই মহিলা লজ্জায় মূখ ঢেকে বস্তিতে ঢুকে পড়েন।
এসময় পাশেই চিকিৎসা কেন্দ্র ব্র্যাকের এক মহিলার কর্মী সাজেদা বেগমের সাথে আলাপ করা হলে সে জানান, রোহিঙ্গা মহিলারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহন করেনা। ছেলে/মেয়ে জন্ম দেওয়া বন্ধ করা হলে নাকি পাপ হবে। এ অজ্ঞতার কারনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ঘরে ঘরে গর্ভবতি মহিলা রয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।
আর্ন্তজাতিক এনজিও সংস্থা সেইভ দ্যা সিলড্রেনের তথ্যমতে, প্রতিদিন ক্যাম্পে অন্তত ১৩০জন শিশু জন্ম নেবে। সেই হিসেবে বছরে ৫০ হাজার শিশু জন্ম নেওয়ার হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে উখিয়া বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আহমদ ফারুকের সাথে আলাপ করে জানতে চাওয়া হলে রোহিঙ্গা সংখ্যা জ্যামিতি হারে বাড়তে থাকলে দেশে খাদ্য ঘাটতির আশংখা আছে কি না, জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর জমির পরিমাণ বৈ বাড়ছেনা। সেহেতু সীমিত জনসংখ্যা উপরে আরো ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখানেই বসবাস করছে। উপরোন্ত প্রতি বছর ৫০হাজার শিশু জন্ম নিলে অবশ্যই খাদ্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
এ কথার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, এখানে উৎপাদিত ফসল স্থানীয় ভাবে চাহিদা পূরণ করছে। বরং খাদ্য ঘাটতি মেতাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান,চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গার চাপে খাদ্যের উপর প্রভাব পড়ার আশংখা রয়েছে। তবে সরকার এ ব্যাপারে সচেতন ।
উখিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মশিউর রহমান কাছে জানতে চাইলে ক্যাম্প পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি চালু হয়েছে কি না? জবাবে তিনি বলেন আমাদের কর্মী সংখ্যা নগন্য সেজন্য সাংবাদিকদের সাথে হয়তো তাদের দেখা হয়নি। তবে অসংখ্য রোহিঙ্গা অভিযোগ করে বলেন এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা কর্মীর দেখা মেলেনি।
Posted ১০:০৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta