কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩০ জুন) :: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করার সময় স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ কলেজ ছাত্র সুদীপ্তর মৃতদেহ ৪ দিন পর বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়ার মোহনায় ভেসে উঠেছে। শুক্রবার সকালে নৌ বাহিনীর সদস্যরা সোনাদিয়া সংলগ্ন মোহনা থেকে সুদীপ্তর মৃতদেহটি উদ্ধার করে।মামা সুমন পাল সুদীপ্তর মৃতদেহটি উদ্ধারের পর শনাক্ত করেছেন।
আর নিখোঁজের পর থেকেই পুত্রের সন্ধানে কক্সবাজারেই অবস্থান করছিলেন পিতা মাস্টার শীতল চন্দ্র দে ও তার পরিবারের সদস্যরা।গত তিনদিন সুদীপ্তর সন্ধানে নৌবাহিনী, টুরিস্ট পুলিশ, দমকল বাহিনী ও সি-সেফ লাইফগার্ডের কর্মীরা সাগরের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি অভিযান চালিয়েও সন্ধান পাননি। অবশেষে শুক্রবার সোনাদিয়া দ্বীপের স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সকালে নৌ বাহিনীর সদস্যরা চর থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করে।আর পিতা মাস্টার শীতল চন্দ্র দে চারদিন পর পেলেন ছেলের লাশ।
এদিকে সুদীপ্ত দের লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রণজিৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, মরদেহ দেখে তাঁর মা-বাবা সুদীপ্তকে শনাক্ত করেছেন। তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই সুদীপ্তর লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়,গত মঙ্গলবার ভোর ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের লাবণী পয়েন্ট সৈকতে ডুবে নিখোঁজ হন কলেজ ছাত্র সুদীপ্ত দে (১৮)। তিনি রাজধানী ঢাকার পিলখানা বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। সুদীপ্ত ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা হলেও তাদের গ্রামের বাড়ী ভোলা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার ভোর ৭টায় আর্মি রেস্ট হাউসের সামনের সৈকতে গোসল করতে নামেন সুদীপ্ত ও তার বন্ধু মেহেদী। একসময় একটি ঢেউয়ের ধাক্কায় গুপ্তখালে পড়ে ডুবে গেলে সুদীপ্তকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ আর লাইফগার্ডের সদস্যরা পর্যটন মৌসুমের এই বিশেষ দিনগুলোতে সৈকতে সর্বদা মাইকিং,বিপদজ্জনক পয়েন্টে পুলিশের নজরদারি,সৈকতের টিভিস্কিন ও বিলবোর্ডগুলোতে সতর্কতামূলক প্রচারণা সহ কোন প্রকার গঠনমূলক তৎপরতা নেই বললেই চলে।আর এই দৃশ্য প্রায়ই সৈকতে দেখা যায়। এসব অব্যবস্থাপনার কারণেই সৈকতে পর্যটকের মৃত্যূ এবং নিখোঁজের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, গত ২০০০ সাল থেকে চলতি ২০১৬ সালের জুলাই পর্যন্তগত ১৫ বছরে শুধু সমুদ্রে গোসল করতে নেমে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে মারা গেছেন প্রতিভাবান ছাত্র, ক্লোজআপ তারকা, প্রবাসী, বিদেশী পর্যটক সহ ১৪৩ জন পর্যটক। মুস্তাফিজুর রহমান সুজন, ইয়াছির, আরাফাত ইসলাম রিংটো, নাজিম উদ্দিন তোশার, মোঃ শাকিল, মঈনুল হোসেন , দীপুদাশ , মিজানুর রহমান,বাদশা মিয়া , ক্লোজআপ তারকা আবিদ, আশিক, রিংকু সহ আরো অনেক পর্যটক রয়েছে।এভাবে সাগরতটের নোনা জলে গা ভাসাতে গিয়ে স্রোতের টানে অনেকে নিখোঁজ কিংবা মৃত্যুরকুলে পতিত হচ্ছেন। বৈরী আবহাওয়া এবং সমুদ্র সৈকতে জোয়ার-ভাটার হিসাব না মেনে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে গোসল করতে নেমে ঢেউয়ের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে সৈকতে পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সি-সেফ লাইফগার্ডের পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, সৈকতের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে ছয়টি গুপ্ত খাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এ গুপ্ত খাল সৃষ্টি হয়। পূর্ণ ভাটার সময় গুপ্ত খালগুলো দেখা গেলেও জোয়ারের সময় ডুবে থাকে। তাই সেগুলো চোখে পড়ে না। গুপ্ত খালে আটকা পড়লে ডুবুরিরাও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে পারে না। জোয়ার-ভাটার টানে গুপ্ত খালের ভেতর থেকে অনেক সময় লাশ বের হয়ে (খালের মোহনা) সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে ওঠে। সুদীপ্ত দের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গুপ্ত খালের পাশে গোসলে নামা নিষিদ্ধ করে লাল নিশানা ওড়ানো হলেও অনেকে তা মানছেন না।
Posted ২:১৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta