বিশেষ প্রতিবেদক(২৫ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হিমছড়ি বনাঞ্চলে শিকারীদের উৎপাতে প্রাণীকূল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রাণ বাঁচাতে বিপন্ন প্রাণী পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে চলে আসছে সমুদ্র সৈকতে।
সর্বশেষ রোববার সকালে আহত এক হরিণ শাবককে দরিয়ানগর এলাকার সমুদ্র সৈকত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে চিকিৎসা দিয়ে ওই বিপন্ন হরিণটিকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কে অবমুক্ত করা হয়।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হিমছড়ির শতাধিক ফিট উঁচু খাড়া পাহাড় থেকে মেরিন ড্রাইভে ঝাঁপ দেয় এক বছর বয়সী একটি মাদি হরিণ শাবক। পরে হরিণ শাবকটি সমুদ্র সৈকতে এসে ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে বনকর্মীরা স্থানীয়দের সহায়তায় হরিণ শাবকটি উদ্ধার করে প্রাণী চিকিৎসকের (ভেটেরিনারি সার্জন) কাছে নিয়ে যায়।
চিকিৎসা শেষে বেলা ২টার দিকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ কক্সবাজার শহরে এসে হরিণ শাবকটি নিয়ে যায় এবং বিকালে সেখানে অবমুক্ত করে। হরিণ শাবকটি বনাঞ্চলে তাড়া খেয়ে সমুদ্র সৈকতে চলে এসেছে বলে মনে করেন স্থানীয় পর্যটনকর্মী নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন- উদ্ধারের পর শাবকটির শরীরে আঘাতের নানা চিহ্ন দেখা গেছে। সেখান থেকে রক্ত ঝরছিল।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী কবীর জানান- খবর পেয়ে বনকর্মীরা হরিণ শাবকটি উদ্ধার করে প্রাণী হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা শেষে বেলা ২টার দিকে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এই বনাঞ্চলে অন্তত এক দশক পর হরিণের দেখা মিলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন- গত কয়েক বছরে হিমছড়ি বনাঞ্চলে বনায়ন করে পাহাড়গুলোকে সবুজে আচ্ছাদিত করা হয়েছে। এ কারণে এই বনাঞ্চল থেকে অতীতে হারিয়ে যাওয়া অনেক পশুপাখি আবারও ফিরে আসছে। এরই মধ্যে অন্যতম হল হরিণ। গত ছয় মাস আগে এ বনাঞ্চলে হরিণের একাধিক দল বাচ্চা প্রসব করেছে।
হিমছড়ির গভীর বনাঞ্চলে গত কয়েক মাস ধরে হরিণ শাবকের কিচির মিচির ধ্বনি শোনার কথা উল্লেখ করে দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকার বাসিন্দা মীর হোসেন বলেন- দরিয়ানগর-হিমছড়ি বনাঞ্চলে গত কয়েক বছরে পশু পাখির বিচরণ বেড়েছে। সেখানে হাতি শুকরসহ আরো কয়েক প্রজাতির শাবকের বিচরণ দেখা যাচ্ছে। এটা বনের স্বাস্থ্য বৃদ্ধির লক্ষণ বলে মনে করেন বনবিজ্ঞানীরা।
স্থানীয়দের মতে, কক্সবাজারের দক্ষিণাঞ্চলের বনাঞ্চল প্রাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হলেও গত দুই বছরে রোহিঙ্গা বসতিসহ নানা কারণে বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় এবং শিকারীদের উৎপাতে প্রাণীকূল বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রাণীরা বনাঞ্চল ছেড়ে প্রায়শ লোকালয়ে চলে আসছে। গত মাসাধিককাল ধরে দরিয়ানগর থেকে মাঙ্গালাপাড়া পর্যন্ত এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই নেমে আসছে হাতি, শুকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী।
Posted ২:৪৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta