মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও(২৯ আগস্ট) :: কক্সবাজার জেলার ৭১ ইউনিয়নে কর্মরত ৬৪০ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য তথা চৌকিদার ও দফাদার গত কয়েক মাস ধরে বেতন-ভাতা পাননি। পবিত্র ঈদুল আযহার আগে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য।
এতে করে উক্ত গ্রাম পুলিশ সদস্যদের পরিবার-পরিজনকে নিরানন্দে ঈদ কাটাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বর্তমানে ৬৪০ জন চৌকিদার ও দফাদার কর্মরত রয়েছেন। তারা সবাই বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য।
এলাকার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় থানা পুলিশকে সহযোগিতা দান, বাল্য বিয়ে, ইভটিজিং বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া, প্রতি সপ্তাহে থানায় একবার হাজিরা দেয়া, সরকারী যে কোন দপ্তরে চাহিদা মতে কার্যক্রমে এগিয়ে আসা, গ্রামের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিতকরণই তাদের দৈনন্দিন কর্তব্য। অত্যন্ত সামান্য বেতনে তারা বছরের পর বছর সরকার ও জনগণের সেবা করে আসছেন।
তাদের চাকুরী রাজস্ব খাতভূক্ত নয়। উন্নয়ন খাত থেকে তাদের যৎসামান্য বেতন দেয়া হয়। প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর তারা বেতন-ভাতা পান। সরকারী অংশ জেলা প্রশাসন এবং বেসরকারী ১% অংশ উপজেলা প্রশাসন থেকে নগদ পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন জেলা শাখা সভাপতি ও ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ দফাদার নুর মোহাম্মদ জানান, সর্বমোট তাদের মাসিক বেতন ৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারী অংশ ১৫০০ এবং বেসরকারী বা ইউপি অংশও ১৫০০। গত জুলাই থেকে তারা এখনো বেতন পাননি। জেলা নেতৃবৃন্দ বিগত ১০/১৫ দিন যাবত বেতনের জন্য ইউএনও ও ডিসি অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, ডিসি অফিসে যোগাযোগ করলে জেলা প্রশাসনের বিলিং সহকারী মার্মা বাবু ডিসি বা প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করতে বলেন। আর ইউএনও অফিসে গেলে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে কক্সবাজারের ডিসি ঢাকায় অবস্থান করছেন। সংগঠনটির জেলা সাধারণ সম্পাদক, চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন চৌকিদার মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, গ্রাম পুলিশদের পেটে ভাত নেই। কোরবানীর গরু কিনা তো দুরের কথা, তেল-মসলা কিনারও টাকা নেই। বর্তমানে তাদের পরিবারে চলছে হাহাকার। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। এর মধ্যে যদি তারা বেতন না পান তাহলে পরিবার-পরিজনের কাছে কিভাবে মুখ দেখাবেন। তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
তিনি আরো জানান, প্রতি সপ্তাহে ওয়ার্ড ভিত্তিক জন্ম ও মৃত্যু তথ্য সংগ্রহ, গবাদি পশুর হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ, মাদক ও অপরাধে জড়িত লোকের তথ্য প্রদান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্তদের স্বনাক্তকরণসহ সরকারী বিভিন্ন কাজে দিন-রাত তাদের ভূমিকা রাখতে হয়। কিন্তু কথায় আছে, পেটে খেলে পিঠে সয়। তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় অবর্ণনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
একইভাবে দুঃখের কথা জানালেন সংগঠনটির কক্সবাজার সদর থানা সভাপতি, পিএমখালী ইউনিয়ন চৌকিদার জামাল উদ্দীন এবং সাধারণ সম্পাদক পোকখালী ইউনিয়ন চৌকিদার মো. ফারুক।
তারা বলেন, ডিসি নেই, ইউএনও নেই, এ অযুহাতে নানা তালবাহানার মাধ্যমে তাদের বেতন ফাইলে দস্তখত করেননি সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় স্মারক নং ও দেয়া হয়নি এতে।
চকরিয়া উপজেলা গ্রাম পুলিশ সভাপতি, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চৌকিদার জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক, ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন চৌকিদার আবু তাহের মানিকসহ অনেকেই বেতন না পাওয়ায় নিজেদের অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের কথা জানান এ প্রতিনিধিকে। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের বেতন দানকারী কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Posted ৬:২৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta