বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী ওরফে টিপু (৫৪) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
তাঁরা হলেন খুলনা সিটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর ও একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসান ইফতেখার (৫৫) ও কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মেজবাউল হক ওরফে ভুট্টু (৫৪)।
সোমবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি শেষে দুজনকে এক দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আদেশ দেন আদালতের বিচারক আখতার জাভেদ।
দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ কয়েক দিন আগে আদালতে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছিল।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান বলেন, আদালত কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারকে পুলিশ হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিন এবং মেজবাউল হককে কারাগারের ফটকে (জেলগেট) জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
সুবিধাজনক সময়ে পুলিশ দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। বর্তমানে দুই আসামি কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দী আছেন।
পুলিশ জানায়, গত ৯ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানের ভেতরে তৈরি করা কাঠের সেতু এলাকায় মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় রব্বানীকে।
হত্যাকাণ্ডের দিন রাতে র্যাব হোটেল গোল্ডেন হিলে অভিযান চালিয়ে শেখ হাসান ইফতেখারকে এবং শহরের টেকপাড়ার নিজ বাসা থেকে মেজবাউল হককে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রব্বানী হত্যার ঘটনায় সাবেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
রব্বানী ও ইফতেখার খুলনা থেকে কক্সবাজার এসে গোল্ডেন হিলের একটি কক্ষে ওঠেন। রিমান্ডে এনে পুলিশ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালাবে। আপর আসামি মেজবাহুলের সঙ্গে রব্বানীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁকের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অন্যদিকে গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি শেখ শাহরিয়ার ইসলাম ওরফে পাপ্পু (২৭) ও গোলাম রসুলের (২৫) রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি আদালতে।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেছিল।
পুলিশ জানায়, কক্সবাজার শহরের কক্স-কুইন রিসোর্টের বাথরুম থেকে রব্বানী হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি পিস্তল ও চারটি গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় পুলিশ ১৫ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে।
এ মামলায় শেখ শাহরিয়ার ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়। ২ নম্বরে রাখা হয় গোলাম রসুলকে। অপর তিন আসামি হলেন খুলনা সিটির দৌলতপুরের রিপন (৪৫), রায়হান শেখ (৩২) ও রিয়াজুল ইসলাম (২৭)।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি শাহরিয়ার ইসলামের চাচা শহীদকে ২০১৭ সালে হত্যা করে গোলাম রব্বানীর বাহিনী। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন হত্যা মামলা শাহরিয়ারকে আসামি করে জেল খাটানো হয়। এর প্রতিশোধ নিতে একাধিকবার গোলাম রব্বানীকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়েও ব্যর্থ হন শাহরিয়ার।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে গোলাম রব্বানীকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে শাহরিয়ার ও রিয়াজ। ৭ জানুয়ারি গোলাম রব্বানী কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। ৯ জানুয়ারি কক্সবাজার আসেন শাহরিয়ার, রিপন, রায়হান শেখ ও রিয়াজুল ইসলাম।
তাঁরা ওঠেন শহরের সৈকত বহুমুখী সমবায় সমিতির আবাসিক এলাকার কক্স কুইন রিসোর্টে। ওই দিন রাত ৮টা ২০ মিনিট থেকে ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে সৈকতের হোটেল সি-গালের পশ্চিম পাশে ফুটপাতের ওপর গোলাম রব্বানীকে পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে হত্যা করেন শাহরিয়ার।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ মৌলভীবাজারের একটি বাসা থেকে শাহরিয়ার, গোলাম রসুল ও ঋতু নামের এক তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। গত ১৫ জানুয়ারি রাতে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই তিন আসামি ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
Posted ৩:৫৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta