শুক্রবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে পর্যটন নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে ধ্বস : ক্ষতি শত কোটি টাকা

রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
138 ভিউ
কক্সবাজারে পর্যটন নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যে ধ্বস : ক্ষতি শত কোটি টাকা

আব্দুল কুদ্দুস রানা,প্রথম আলো :: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত এবং কারফিউর কারণে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার শহর।

পর্যটক না থাকায় পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমেছে ধস। কক্সবাজার শহরের কলাতলীর পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল খালি পড়ে রয়েছে।

বিক্রি নেই তিন হাজারের বেশি দোকান ও পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁয়। সমুদ্র সৈকতের আশপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটও বন্ধ হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন তীব্র হলেও তখন কক্সবাজার শান্ত ছিল।

১৯ জুলাই কক্সবাজারে প্রথম কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে শিক্ষার্থীদের মিছিল-সমাবেশ শুরু হয়। ওই দিন সংঘর্ষ, গোলাগুলি ও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এতে কক্সবাজার থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন,‘পর্যটনের সঙ্গে কেবল হোটেল নয়, অনেক বিষয় জড়িত। এর সঙ্গে পরিবহন, রেস্তোরাঁ, বার্মিজ পিংমল,শুটকী, কিটকট,বীচ বা্ইক ও স্পীড বোটের বিষয়টিও জড়িত।

অর্থাৎ পর্যটকরা যেদিকে যাবেন, সেদিকে আর্থিক বিষয় সম্পৃক্ত। পর্যটক না আসায় সব খাতেই এর প্রভাব পড়েছে।

২০ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিনে কক্সবাজারের পর্যটন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায় ৩০০ কোটি টাকা ক্ষতি ছাড়িয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ সময় লেগে যাবে। কারফিউ শিথিলের পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

তিনি বলেন, পর্যটক না থাকায় পর্যটনশিল্পে অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে। দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কক্সবাজারে পর্যটক টানাও সম্ভব হচ্ছে না।

গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি, ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। পর্যটনের পাশাপাশি মৎস্য, লবণ, শুঁটকি, শামুক-ঝিনুক, পান-সুপারি, গণপরিবহনসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায় ধস নেমেছে।

ইন্টারনেট পরিষেবা পুরোপুরিভাবে কার্যকর না হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য এবং টাকা লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে।

ফেডারেশন অব টুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন,‘২০২০-২১ সাল গেছে কভিডের মধ্য দিয়ে। ২০২৩ সালে ঘুরে দাঁড়ানোর একটু চেষ্টা ছিল, কিন্তু ২০২৪ সালে আন্দোলন ও কারফিউতে সব শেষ হয়ে গেছে।

ঈদের পর থেকে পর্যটন খাত খুব কঠিন সময় পার করছে। এ খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন,শহরে এখন কোনো পর্যটক নেই। পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস-রিসোর্ট ও কটেজ আট দিন ধরে খালি পড়ে আছে। তিন শতাধিক রেস্তোরাঁও বন্ধ।

কেবল হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোর হিসাব করলেও দৈনিক গড়ে পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। কারফিউ তুলে ফেললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এখন হোটেলকক্ষ ভাড়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ বিশেষ ছাড় দিয়েও পর্যটকদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, হোটেল-রেস্তোরাঁ খালি পড়ে থাকায় অন্তত ২০ হাজার কর্মচারীর বেকার সময় কাটছে। লোকসানের কারণে মালিকেরা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও পরিশোধ করতে পারছেন না।

বেলা ১১টায় সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, দুই কিলোমিটারের বিশাল সৈকতে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ। কেউ বালুচরে বসানো চেয়ারে (কিটকট) বসে, কেউ দাঁড়িয়ে সমুদ্রের উত্তাল রূপ দেখছেন। সাগরে নামতে নিষেধাজ্ঞার কয়েকটি লাল নিশানা বালুচরে উড়ছে।

সৈকতে ঘোড়া নিয়ে ঘুরছেন কয়েকজন, তবে তাতে চড়ার মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন না। উত্তাল সমুদ্রের পানিতে দ্রুতগতির কয়েকটি জেটস্কি দেখা গেলেও তাতেও চড়ার মানুষ নেই। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাঁচ দিন ধরে সৈকতে গোসল করতে নামায় জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা চলছে।

কলাতলীর উত্তর দিকে সুগন্ধা, সি-গাল ও লাবণী পয়েন্টেও একই অবস্থা দেখা যায়। সৈকতে থাকা নারী-পুরুষের বেশির ভাগই স্থানীয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিটকটে বসে উত্তাল সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করছিলেন শহরের টেকপাড়ার কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী জামাল হোসেন। দূরে তাঁর তিন বন্ধু মুঠোফোনে ছবি তুলছিলেন। জামাল বলেন, ‘ঘরে ভালো লাগছিল না, তাই সৈকতে এলাম। ফাঁকা সৈকতে ভালোই লাগছে।’

কলাতলী সৈকতে ঘোড়া নিয়ে ঘুরতে থাকা শহরের সমিতিপাড়ার যুবক রিদওয়ান হোসেন বলেন, সকাল ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘোড়ার পিঠে চড়ার মতো কাউকে পাননি।

তিনি বলেন, পর্যটক না থাকলে ৫০-৬০টি ঘোড়ার মালিক ও কর্মচারীদের বিপাকে পড়তে হয়। কয়েক দিন ধরে ঘোড়ার খাবার কেনার টাকাও জোগাড় হচ্ছে না।

পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে পর্যটকদের বসার কিটকট বসানো রয়েছে দুই হাজারের বেশি। ৯৫ শতাংশ কিটকট খালি পড়ে আছে।

সমুদ্রে গোসলে নেমে নিখোঁজ পর্যটকদের উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বেসরকারি সি-সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, ১৭ জুলাই বিকেলেও সুগন্ধা সৈকতে অন্তত ৭০ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সবাই গন্তব্যে ফিরে গেছেন। কখন আবার পর্যটক সমাগম হয়, বলা যাচ্ছে না।

সৈকতের লাবণী পয়েন্টের হোটেল কল্লোলের মহাব্যবস্থাপক ওমর চিশতী বলেন, সারা বছর পর্যটক থাকলেও হোটেলের ১০২টি কক্ষই ফাঁকা ছিল। অগ্রিম যেসব বুকিং ছিল, তা–ও বাতিল করা হয়েছে।

মেরিনড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপের পরিবেশবান্ধব পর্যটনপল্লি ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’ এর মহাব্যবস্থাপক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ৪৬টি কক্ষের ৬টিতে অতিথি রয়েছে। শতভাগ বুকিং ছিল, তবে তা বাতিল করে অতিথিরা সময় পরিবর্তন করছেন।

কক্সবাজারের কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির আওতাধীন হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে ৫২টি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন খাতের বিনিয়োগকারীদের পথে বসতে হবে।তাদের এখন টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

138 ভিউ

Posted ২:৪৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : Shaheed sharanee road, cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com