বিশেষ প্রতিবেদক(১৪ জুন) :: কক্সবাজার জেলায় মৃত্যূর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেই চলেছে ৫০ হাজার পরিবার। গত কয়েক বছর ধরে জেলায় পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানি সত্বেও তাদের সরানো যাচ্ছে না। আর প্রশাসনও সারা বছর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের সরানোর কোন উদ্যোগ নেয়না। বিপদ দেখলেই মাইকিং করা হয়। আর আশংকামুক্ত হলেই আবার সব ভুলে যান দায়িত্বশীল কর্তারা। এভাবে চলছে কক্সবাজারে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের সরানোর উদ্যোগ।
এরই মধ্যে গত বুধবার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া এলাকার পাহাড় ধসে মোহাম্মদ সেলিম (৪০) ও তার মেয়ে তিশা মনি (৩) মারা যায়।এছাড়া গত দুই দিনে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলায় অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসে ১৫২ জনের মৃত্যূর খবর শুনে কক্সবাজারেও পাহাড়ে বসবাসকারিদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
এর মধ্যে কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার ও জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আরো ২০ হাজার পরিবার পাহাড়ে ঝূঁকি নিয়ে বসবাস করছে। আর পাহাড়ে হাজার হাজার ঝুকিপূর্ণ বসতি থাকার কারনে পাহাড় ধসের শংকা করছে সংশ্লিষ্ঠরা। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন ১৩ জুন ও ১৪ জুন কক্সবাজার শহরসহ পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং করার নির্দেশ দিয়ে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ ও সংশোধিত পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (২০১০) ৪ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন দখলীয় অথবা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন, মোচন করা যাবে না।’এ আইনে পাহাড় কাটার অপরাধে সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল ও ৫ লাখ টাকার জরিমানার বিধান থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ পাহাড় কাটার অপরাধে এ পর্যন্ত তেমন কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি।
জানা যায়,দেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলোর মধ্যে কক্সবাজার জেলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গত ২০১০ সালের ১৫ জুন হিমছড়িতের ৬ জন সেনা সদস্য সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে ৫৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এছাড়াও প্রতিবছর পাহাড় ধসে কক্সবাজারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিবছর বিপদ শংকা হলেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং অন্যান্য বেসরকারী সংস্থা তৎপর হয়ে উঠেন।আর বিপদ চলে গেলেই কোন খবর থাকেনা।
তবে আশার কথা হচ্ছে এবার বর্ষা মৌসুমের আগে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের তালিকা এবং সরানোর কমিটি গঠিত হয়েছে। শুরুতে তারা কয়েকটি বসতি সরিয়ে দিতে সক্ষম হলেও পরে তাদের কার্যক্রম থেমে যায়।আর যারা পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তারা ঠিকই রয়ে গেছেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের উপদেষ্টা বিশ্বজিত সেন বলেন,বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা প্রয়োজন ছিল। পাহাড়ে দিন দিন অবৈধ বসতি বেড়ে যাচেছ। এখন পাহাড় ধস হলেই মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হবে। আর এই মৃত্যূর দায়ভার বর্তাবে দায়িত্বশীলদের উপর।
পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের সরানো ও তালিকা প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম বলেন,‘কমিটি গঠনের পর পর কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। বেশ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরানো হয়েছে। পরে পাহাড়ে বসবাসকারিরা তাদের না সরানো জন্য আন্দোলন করলে অভিযান থেমে যায়।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন,‘জেলা প্রশাসন, উন্নয়ন কতৃপক্ষ, পুলিশ বিভাগ,পৌরসভা,পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়। গঠনের পর কার্যক্রম ছিল প্রসংশনিয়।কিন্তু হঠাৎ করে থেমে যায়।এভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবায়ন হয়না। ফলে নাগরিকরা সমস্যা থেকে রেহায় পাননা।’
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন,‘পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ন বসবাসকারিদের তালিকা প্রণয়ন করার জন্য গঠিত কমিটি তালিকা প্রণয়ন করার পাশাপাশি নিয়মিত মাইকিংও করে। সচেতন করে মাইকিং করার কারনে তখন কিছু কিছু পরিবারকে পাহাড় থেকে সরানো সম্ভব হয়েছেন। তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন বলেন,‘উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের নির্দেশ পেয়ে ১৩ জুন শহরসহ জেলাব্যাপী মাইকিং করে সর্তক করা হয়।আর পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। বিশেষ করে শহরের লাইট হাউজ, সৈকত পাড়া,সার্কিট হাউস সংলগ্ন, মোহাজের পাড়া, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মধ্যম ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলি, কলাতলী আদর্শগ্রাম, ঝরিঝরিকুয়া,নতুন জেল গেইট (দক্ষিণ) সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন, লিংকরোড পাহাড়ি এলাকায়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস হচ্ছে বনভূমি ও পাহাড়ি খাস জমিতে।
Posted ৪:১১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta