বিশেষ প্রতিবেদক(১৫ জুন) :: মাঝে একদিনের বিরতি দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হয়েছে কক্সবাজারে। শহরের ছোটবড় ১১টি পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজনের কাছে এখন বৃষ্টি চরম আতঙ্কের নাম। এমন বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চললে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তবু প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন না।
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা কত—এমন প্রশ্ন করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, শহরের বিভিন্ন পাহাড়ে অন্তত ১৫ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ। বাড়িগুলো পাহাড়ের পাদদেশে কিংবা ঢালুতে অবস্থিত। ভারী বৃষ্টি হলেই এগুলো ধসে পড়বে। সম্প্রতি পাঁচ দফা যৌথ অভিযান চালিয়ে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে পাহাড়ে বসবাসকারী লোকজন জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করলে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকে। এখন আবার লোকজনকে পাহাড় থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে।
২০০৯ সালে ১৫ জুন কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেবারের মতো এবারও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ভোর থকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কক্সবাজারের টেকনাফ, রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে পাহাড়ধসে দেড় শ মানুষের মৃত্যুর খবর চরম আতঙ্ক তৈরি করেছে এখানকার লোকজনের মধ্যে। কিন্তু এমন ভয় নিয়েও পাহাড়ের বসতিতেই থাকছেন তাঁরা।
শহরের বাইপাস সড়কের জেলগেটের দক্ষিণ পাশের সরকারি পাহাড়ের প্রায় ২০ একরের মতো জায়গায় গড়ে উঠেছে ১৫০টি টিনের ঘর। গত সোমবারের প্রবল বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়ায় এ পাহাড়ের অন্তত ৪টি বাড়ি ধসে গেছে। চালার টিন উড়ে গেছে ৫০টিরও বেশি বাড়ির। অথচ এসব ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নিচে নামছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হলেও কেউ শুনছেন না।
এখানকার বাসিন্দা সালামত উল্লাহ (৪৫) বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিলে তাঁর পাহাড়ের ঘরটি অন্য লোকজন দখল করে নেবে। তখন স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে তিনি বিপাকে পড়বেন। তাই পাহাড় ছাড়ছেন না।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, মাইকিং করার পরও লোকজন পাহাড় ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে রাজি হচ্ছে না। তারপরও প্রাণহানির আশঙ্কায় ম্যাজিস্ট্রেট ও কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে পৌরসভার ৮টি পৃথক দল গত বুধবার থেকে মাঠে নেমেছে। তাঁরা উঁচু পাহাড়ে গিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী লোকজনকে নিচে নেমে আসতে বাধ্য করছেন। লোকজনকে নিরাপদে রাখার জন্য পৌরসভার ৬টি ওয়ার্ডে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে গৃহহীন লোকজনকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদে কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে দুপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আবদুর রহমানকে প্রধান করে বিজিবি, পুলিশ, বন বিভাগ, পৌরসভার কর্মকর্তাদের নিয়ে এই যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল থেকেই এই কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ বসতি স্থাপনকারীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরে ছোটবড় ১১টি পাহাড়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী কয়েক হাজার পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। এ জন্য গত মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। টেকনাফ, রামু, উখিয়াতেও চলছে মাইকিং। খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
পৌরসভার লাইটহাউসপাড়া, সৈকতপাড়া, সার্কিট হাউস, মোহাজেরপাড়া, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, আদর্শগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার ১১টি উঁচু পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে ঘরবাড়ি। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এসব পাহাড়ের কাটা অংশে ধস সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদেরও। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণের পরিষদ সভাপতি মোহাম্মদ উর রহমান বলেন, প্রতিবছর একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় লোকজন হতাহত হলেও পাহাড়কাটা বন্ধ হচ্ছে না। এর ফলে বড় ধরনের পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে।
Posted ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta