ইতোমধ্যে প্রশাসন এ আশংকায় নজিরবিহীন তৎপরতা শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন অন্যান্য প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় গত কয়েকদিন ধরে পাহাড়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে লোকজনকে সচেতন করছেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। তবে প্রশাসনের এত তোড়জোড় সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা রয়েছেন নির্লিপ্ত। ফলে টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার জেলা জুড়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের প্রায় ২৫ লাখ অধিবাসীর মধ্যে অন্তত ৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন পাহাড়ে। যারমধ্যে চরম ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন দুই ল াধিক মানুষ। এরমধ্যে কিছু কিছু বসতি ২ শতাধিক ফুট উঁচু খাড়া পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত হওয়ায় যেকোন ভারী বর্ষণ ও ভূমিকম্পে এসব লোকালয়ের পরিণতি কত যে ভয়াবহ হতে পারে তা নিয়ে ভাবতেই চুল খাড়া হয়ে যায় পরিবেশবিদদের। এমনই মন্তব্য কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকার। তাঁর মতে, কক্সবাজারে যেভাবে পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি তৈরী হয়েছে, তা একসময় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতে পারে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন– আমরা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে টিম করে ঝুঁকিপূর্ণস্থানে তাদের পাঠিয়ে জনগণকে সতর্ক করছি। এরপরও তারা যদি পরামর্শ না শুনে তাহলে প্রশাসনের করার কী থাকে?
জানা যায়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি কক্সবাজারসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় শক্তিশালী মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছে। গত বছর দেশে ত্রিশ বারের বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এরমধ্যে ২৫ এপ্রিলের ভূমিকম্পটি ছিল শক্তিশালী। মূলত: এসব ভূমিকম্পের কারণেই কক্সবাজারের পাহাড়গুলোর মৃত্তিকাবন্ধন দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং কক্সবাজারের কয়েক হাজার পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে।
সংশিহ্মষ্টদের আশংকা, নতুন কোন ভূমিকম্প অথবা তীব্র বর্ষণের ফলে এসব পাহাড় ভেঙে পড়ে ভয়াবহ কোন বিপত্তি তৈরী করতে পারে। বর্তমানে এসব পাহাড়ের টুকরো টুকরো অংশ ভেঙে পড়ছে। এমনকি কোন বৃষ্টিপাত না হওয়া সত্ত্বেও।
দরিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা আয়েশা বেগম জানান, গত বর্ষা মৌসুমের একেবারে শেষদিকে বানরের পাহাড়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। বর্ষা মৌসুম আসার পর প্রায়ই টুকরো টুকরো করে ভেঙে পড়ে পাহাড়টি।একই অবস্থা কক্সবাজার শহর ও শহরতলী, উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়গুলোতেও বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ২০টি ভূমিকম্প নথিভূক্ত হয়। জাপানে একবছরে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভূমিকম্প হয়। তবে বাংলাদেশে দিনদিন ভূমিকম্প বাড়ছে। এসব ছোট ছোট ভূমিকম্প ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
অতীতের রেকর্ডকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষকরা যে কোন সময় বাংলাদেশে রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন। আর সে মাত্রার ভূমিকম্প হলে কক্সবাজারে ফাটল ধরা উঁচু ও খাড়া পর্বতগুলো কী ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা বলা দুষ্কর বলে মনে করছেন গবেষকরা। এর পাশাপাশি ভারী বর্ষণেও খাড়া পাহাড়গুলো ভেঙ্গে ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি করতে পারে।
Posted ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta