বিশেষ প্রতিবেদক(৫ জুলাই) :: কক্সবাজার শহরের দুটি পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী ১৫০ পরিবারের প্রায় ৮০০ জনকে সরিয়ে নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় প্রশাসন বুধবার বেলা দেড়টা থেকে এ অভিযান শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের রাডার স্টেশন ও লাইটহাউস নামের দুটি পাহাড় থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কক্সবাজারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, তিন দিন ধরে শহরের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ফলে ফাটল দেখা দিয়েছে শহরের ১০-১২টি পাহাড়ে। কয়েকটি পাহাড়ে ধসের ঘটনাও ঘটছে। প্রাণহানির আশঙ্কায় তাই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, এর আগেও লোকজনকে পাহাড় থেকে নিরাপদ স্থানে সরে আসার জন্য জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে তৈরি ঘরবাড়ি ছেড়ে কোনো লোকজন নিচে নামতে রাজি হয়নি। তাই প্রাণহানি রোধে এবার লোকজনকে জোর করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
অভিযানে অংশ নেন পুলিশ, আনসার, দমকল বাহিনী ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা দেড়টার দিকে জেলা প্রশাসনের দলটি রাডার স্টেশন পাহাড়ে যায়। তারপর পাহাড়ের খাদে, ঢালুতে ও নিচে কবরস্থানপাড়ায় তৈরি প্রায় ১০০টি বাড়ির প্রায় সাড়ে পাঁচ শ লোককে জোর করে ঘর থেকে বের করে আনা হয়। তারপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় শহরের পৌর প্রিপারেটরি উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে।
কবরস্থানপাড়ার বাসিন্দা আমিন উল্লাহ (৪৬) বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন আমাদের ঘর থেকে বের করে দিল। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় যাব? আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটানোর পরিবেশ নেই।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, শহরের কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মধ্যে রাডার স্টেশন পাহাড়টি অন্যতম। গত বছর জুন মাসে এই পাহাড়ের পশ্চিম দিকের কিছু অংশ ধসে পড়ে একটি পরিবারের স্বামী-স্ত্রী-মেয়েসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এখনো পাহাড়ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে।
বেলা তিনটার দিকে জেলা প্রশাসনের দলটি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে পাশের লাইটহাউস পাহাড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানকার পাহাড় থেকে ৫০টি বাড়ির প্রায় ২৫০ জনকে সরিয়ে আনা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী কমিশনার পঙ্কজ বড়ুয়া।
লাইটহাউস সমাজ কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম (৬৫) বলেন, এই পাহাড়ে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে অন্তত চার হাজার মানুষ। ভারী বর্ষণের ফলে গতকাল সকাল থেকে একাধিক স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকটি বসতবাড়ি ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। প্রাণহানির আশঙ্কা থাকায় মাইকিং করে লোকজনকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য নিজেরাও প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
Posted ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta