হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(৭ জানুয়ারী) :: কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রভাবশালী মাদক চোরাকারবারীদের অতৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় নীল নেশার ভয়ংকর ইয়াবার চালান এবার চোরাই পথ থেকে সীমান্ত জেলা কক্সবাজারের স্থল ও জলপথে জোয়ারের মত ঢুকে পড়ছে।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা গত ২ সপ্তাহে ৪৬ কোটি প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার ইয়াবার মাদকের চালান জব্দ করলেও হঠাৎ মাদক দমনে পুলিশের অপারগতায় সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই ঘোষণায় ইয়াবা চোরাকারবারী চক্র আরো উৎসাহিত হয়ে উঠবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,কক্সবাজারের উপকূলীয় সীমান্ত পয়েন্ট এবং পার্বত্য এলাকা হয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইয়াবাসহ বিয়ার জাতীয় মাদকের চালানের প্রবেশ।
গত ২ সপ্তাহে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের নাজিরপাড়া বিওপি গত ২১ ডিসেম্বর ১০হাজার ইয়াবা, গত ২৪ ডিসেম্বর টেকনাফ সদর বিওপি ৯ হাজার ৮২১ পিস ইয়াবাসহ ১ জনকে আটক, ২৮ ডিসেম্বর হোয়াইক্যং বিওপি চেকপোস্ট ৯ হাজার ৭শ ৫পিস ইয়াবাসহ ১ জনকে আটক এবং এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক হতে কক্সবাজার থেকে আসা একটি বাসে তল্লাশী চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ সেনা সদস্যকে আটকের ঘটনায় পুরো দেশব্যাপী তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়।
এরপর চলতি বছরের ২জানুয়রী হ্নীলা বিওপি ৭০ হাজার ইয়াবা, ৪ জানুয়ারি টেকনাফ বিওপি ১৪ হাজার ৫শ ৯৩ পিস, ৫ জানুয়ারী র্যাব-৭এর একটি দল বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলার হতে ৫লাখ পিস ইয়াবাসহ পাচারকারী চক্রের ৮ জনকে আটক করে ও সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারী টেকনাফে বিজিবি জওয়ানেরা পরিত্যক্ত ৭ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করেছে।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের অভিযানে মাদক উদ্ধার ও আটকের ঘটনা রয়েছে। কোনো কোনো সময় বড় চালানে কোটি টাকার ইয়াবাসহ পাচারকারী আটক হলেও কতিপয় দালালের মধ্যস্থতায় মোটাংকের বিনিময়ে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় মাদক চোরাকারবারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠে।
তাই কক্সবাজার সীমান্তের লোকজনসহ জেলার প্রভাবশালী মহল কৌশলে এই লোভনীয় চোরাচালানে পা দিয়ে হঠাৎ কোটিপতি বনে যাচ্ছে। যাতে অনেকের সম্পদ, আয়ের উৎস এবং ব্যয়ের মিল খুঁজে পাওয়া যায়না।
কতিপয় রাজনৈতিক নেতা,জনপ্রতিনিধি,আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অসাধু সদস্য, স্থানীয় প্রভাবশালী, নামধারী সাংবাদিক, অর্থলোভী আইনজীবীসহ এই মাদক চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে সমাজের উচ্চ শিক্ষিত পরিবারের সদস্যরাও। নিত্য নতুন কৌশল ও পথ ব্যবহারের ফলে প্রতিদিন জল ও স্থলপথে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক চোরাচালান বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৬ জানুয়ারী পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক রাজধানীর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পক্ষে মাদক চোরাচালান দমন সম্ভব না বলে জানানোর সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর কক্সবাজারসহ পুরো দেশের মানুষের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে এবং জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে।
এদিকে একটি সুত্রে দাবী উঠেছে যে,আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর রাজনৈতিক দল ও বিত্তশালীদের প্রভাবের পাশাপাশি সরকারী বেতন-ভাতা এবং সুবিধাভোগী কতিপয় সদস্যরা মাদকসহ অপরাধ দমনের বদলে লোভের বশীভূত হয়ে এই চক্রের সাথে গোপন আতাঁতে লিপ্ত হয়ে পড়ায় বিভিন্ন এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন আতœরক্ষার্থে মাদক চোরাকারবারীদের বৃহৎ একটি অংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে আশ্রয় নিয়েছে।
এই কাজে উভয়কূল রক্ষা করে নিজেরাই পার পাওয়ার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছে নানা অপরাধে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু তালিকাভূক্ত জনপ্রতিনিধি। সুতরাং এই দেশকে ভালবেসে লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে প্রকৃত দেশ প্রেমের চেতনায় জাগ্রত হয়ে সম্মিলিতভাবে মাদক চোরাচালান দমনের বিকল্প নেই এবং মাদক মামলার সহজ জামিনের বিষয়টি ঠেকানো দরকার বলে সুশীল সমাজকে অভিমত প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর রুহুল আমিন বলেন,ইয়াবা সেবনের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে সম্মিলিতভাবে মাদক চোরাচালান দমন করতে হবে।
এই ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মাইন উদ্দিন খান বলেন,ভৌগলিক দিক দিয়ে সীমান্তবর্তী স্থল ও সাগর পথ মাদক চোরাচালানের জন্য সহজতর। সীমান্তে দেয়াল কিংবা কাঁটাতার না থাকায় মাদক চোরাকারবারীরা সহজে মাদকের চালান পাচার করতে পারে। এই মাদকের চালান দমনের ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরি করতে পারলে মাদক চোরাচালান অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।
টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লুকাশিষ চাকমা জানান,সবার সম্মিলিত সহযোগিতার মাধ্যমে মাদক চোরাচালান ও সেবনরোধ করা সম্ভব।
Posted ১০:৪৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta