কক্সবাংলা রিপোর্ট :: কক্সবাজারে হঠাৎ সফর করেছেন বাংলাদেশে বহুল আলোচিত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কিন্তু হঠাৎ কেন তিনি কক্সবাজারে সফরে আসলেন এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
সম্প্রতি সম্প্রতি পিটার ডি. হাস যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক তরল প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি “এক্সিলারেট এনার্জি” এর স্ট্রাট্রেজিক অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেছেন।
সূত্র বলছে এক্সিলারেট এনার্জি কক্সবাজারের মহেশখালিতে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরে এলএনজি টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপন করে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরি করছে।এ কারণেই হয়তো তিনি কক্সবাজার আসতে পারেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ৪ঠা ডিসেম্বর কক্সবাজারে রামুতে একটি ৫০ শয্যার একটি হসপিটাল এবং মহেশখালীতে নির্মাণাধীন ৩০ শয্যারিএকটি এক্সিলারেট হসপিটাল পরিদর্শন করেছেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস।
এ সময় এক্সিলারেট এনার্জির ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেরেক ওং, এক্সিলারেট এনার্জির বাংলাদেশ কান্ট্রি ম্যানেজার মোঃ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
জানা যায়,২০১২ সালে ভারতের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এরপর ২০১৯ সালে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি। এরপর তিন বছর সময় নিয়ে নতুন পিএসসি–২০২৩ চূড়ান্ত করা হয়। গত ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এর আগে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে।
কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরে বহুমাত্রিক জরিপ চালিয়ে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর থেকে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র বলছে, দরপত্রে অংশ নিতে ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মধ্যে ছয়টি কোম্পানি দরপত্র কিনেছে। দরপত্রে অংশ নেওয়ার সময় শেষ হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর।
ইতিমধ্যে গভীর সমুদ্রে ১৫টি ও অগভীর সমুদ্রে ৯টি ব্লকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে এবার আগের চেয়ে বেশ কিছু সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। দরপত্রে দেশের স্বার্থের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী কোম্পানির স্বার্থও দেখা হয়েছে।
বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল,শেভরন,এক্সিলারেট এনার্জি, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস, নরওয়ে ও ফ্রান্সের যৌথ কোম্পানি টিজিএস অ্যান্ড স্লামবার্জার, জাপানের ইনপেক্স করপোরেশন ও জোগম্যাক, চীনের সিনুক, ইতালির ইনি এসপিএ, সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি ও ভারতের ওএনজিসি আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময় পেট্রোবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ২২ জুলাই ঢাকা মিশন থেকে বিদায় নিয়ে ওয়াশিংটন চলে যান পিটার হাস। গত ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস থেকে দীর্ঘ ৩৩ বছরের কর্মময় জীবনের ইতি টেনে অবসরে যান। পরে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিকারক মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা পদে যোগ দেন পিটার হাস। বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে সমুদ্রে ভাসমান একটি টার্মিনাল আছে এক্সিলারেট এনার্জির। এর বাইরে আরো একটি টার্মিনাল নির্মাণের কথা রয়েছে তাদের। এছাড়া, ২০২৬ সাল থেকে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহে একটি চুক্তি করেছে এক্সিলারেট ।
কূটনৈতিক ক্যারিয়ারে জীবনের শেষ পদায়নে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন পিটার হাস। গত ২২ জুলাই সোমবার মধ্যরাতে নির্ধারিত মিশন শেষে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান বহুল আলোচিত এই মার্কিন কূটনীতিক। পূর্বসূরিদের মতো পিটার হাসও ছিলেন বাংলাদেশিদের কাছে বেশ পরিচিতি কূটনীতিবিদ।
মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে বাংলাদেশের বিষয়ে মার্কিন নীতি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন’ ইস্যুতে রাজনীতিক ও আমলাদের অফিস ও বাসায় বারবার ছুটে যান পিটার হাস। ঢাকায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বার্তা প্রচারে বেশ সরব হতে দেখা যায় তাকে। এ নিয়ে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সঙ্গে তার বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছিল।
২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হয়ে বাংলাদেশে আসেন পেশাদার কূটনীতিক পিটার হাস। প্রায় আড়াই বছরের ঢাকা মিশনে গণতন্ত্র, নির্বাচন, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা প্রভৃতি ইস্যুতে কথা বলা এবং বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিকে যুক্ত করার লক্ষ্যে ব্যস্ত ছিলেন হাস। দায়িত্ব পালনকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার দূতিয়ালি কতটা সফল ছিল সেটি নিয়েও কূটনৈতিক অঙ্গনে চলেছে নানামুখী বিশ্লেষণ।
Posted ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta