কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৯ মে) :: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় “মোরা”র ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে ধেয়ে আসছে কক্সবাজার উপকূলে। এটি বর্তমানে কক্সবাজার উপকূল থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় বাতাস শুরু হয়ে গেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানিয়েছেন,জারি করা ৭ নম্বর বিপদ সংকেত তুলে ফেলে তার স্থলে জারি করা হয়েছে ১০ নম্বর মহা-বিপদ সংকেত। ঘূর্ণিঝড় ‘ মোরা’ ধীরে ধীর শক্তিশালী হচ্ছে। এটি সকালে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে মাইকিং এর মাধ্যেমে সমুদ্র সংলগ্ন এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে চলে আসতে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি জেলার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে সাগরে থাকা ট্রলার ও জেলেদের নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন কক্সবাজার উপকূলের ট্রলার মালিক ও জেলেদের স্বজনরা।অপরদিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ করেছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সকালে জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভায় বসেছিল জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, এনজিও কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্নস্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেন।
সভায় জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ তে সম্ভাব্য দুর্যোগে মানুষের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে ৫৩৮টি সাইক্লোন শেল্টার খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া গঠন করা হচ্ছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারী লোকজনের জন্য ইফতার এবং সেহরির ব্যবস্থা রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে কুতুবদিয়ার প্রতিটি ইউনিয়ন, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবজুম, সদরের পোকখালী, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, পেকুয়ার রাজাখালী, উজানটিয়া, মগনামা, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, সেন্টমার্টিন ও বাহারছড়া ইউনিয়নের লোকজনকে বিকেলের আগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এদিকে, সোমবার আবহাওয়ার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পুরো জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত প্রচার করা হলেও কক্সবাজার শহরের জনজীবনে তার কোন প্রভাব পড়েনি। দীর্ঘদিন ধরে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষের। সোমবার থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হতে দেখে লোকজন মনে করছে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে গেছে। ফলে অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক জীবন-যাপন কক্সবাজারের মানুষের। এলাকাটির বাসিন্দাদের মালিকানাধীন বেশিরভাগ মাছ ধরার নৌকা সাগর থেকে ফেরত আসেনি।
সোমবার দুপুরে শহরের সমুদ্র সংলগ্ন এলাকা সমিতি পাড়া এবং কুতুবদিয়া পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকাতেই স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।
বিপদ সংকেত নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। পাড়া দু’টির অনেকেই জানে না ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। আবার অনেকে জানলেও বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মাথা ব্যথা নেই। কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানালেন, সন্ধ্যার পরই সিদ্ধান্ত নেবেন এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবেন। নাকি বসতবাড়ীতেই থাকবেন।
নাজিরার টেক সংলগ্ন নদীটি পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। লোকজন ছোট্ট ডিঙি নৌকার সাহায্যে এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিতে যুব রেড ক্রিসেন্টের একটি দল গিয়েছিলো নাজিরার টেক এলাকায়। নৌকার সাহায্যে ডাঙায় আসতেই তাদের দলপতি মোঃ হোছাইনের সঙ্গে আলাপ হয়।
তিনি বললেন, আমরা যুব রেডক্রিসেন্টের ৪৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে ৩টি টিম গঠন করেছি। সাইরেন ও মাইক বাজিয়ে এবং বিপদ সংকেতের চিহ্ন স্বরূপ পতাকা দেখিয়েই মানুষকে সচেতন করার কাজ করছি। ইতোমধ্যে নতুন পাড়া, মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়া এবং নাজিরার টেক এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু অন্যান্য বারের মতো এবার এই এলাকার মানুষের মধ্যে কোন অনুভূতি দেখিনি।
ওই সময় পাশে থাকা এলাকাটির একজন জানালেন, ‘জো’ (ভরাকাটাল)’র সময় সাগরের পানি ফুলে যায়। এ কারণে এলাকার লোকজন পানি থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতো। কিন্তু এখন ‘ডালা’ (মরাকাটাল) চলছে। ফলে এই এলাকার মানুষের মনে বিশ^াস জন্মেছে বড় কোন জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা নেই।
কক্সবাজার বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহম্মদ জানিয়েছেন, সাগরে থাকা ট্রলার ও জেলেদের নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন কক্সবাজার উপকূলের ট্রলার মালিক ও জেলেদের স্বজনরা।তবে বিভিন্নভাবে তাদেরকে দ্রুত কূলে ফিরে আসার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোরা আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ৭০-৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের মানে হলো, সাগরে মাঝারি শক্তির একটি ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে, যেখানে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্র বন্দরের খুব কাছ অথবা উপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
Posted ৮:০৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৯ মে ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta