কক্সবাংলা রিপোর্ট(১২ জুন) :: ঘূর্ণিঝড় মোরার রেশ কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভারীবর্ষণ ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজার উপকূলের মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক বিরাজ করছে।গত দুদিন ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি স্থানীয় নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় এর প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা সদরের ঈদগাঁও,কুতুবদিয়া,চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী,পেকুয়া ও রামুতে পাহাড়ি ঢল-সামুদ্রিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক জনসাধারণ।
রোববার রাত থেকে শুরু হওয়া তীব্র ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকায় বাতাসের তোড়ে ভেঙে গেছে অনেক ঘরবাড়ি ও গাছপালা।এতে করে কক্সবাজারের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার সকাল থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার-কুতুবদিয়াসহ কয়েকটি রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।এছাড়া সকালে কক্সবাজার শহরের কলাতলী পয়েন্টে মাছ ধরার একটি নৌকা ডুবে গেলে ১২ জন মাঝি-মাল্লাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে এখনও দু’জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ হাজার পরিবার। কুতুবদিয়া দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ভাঙন বেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।এতে উত্তর ধুরুং,আলী আকবর ডেইল, বড়ঘোপ ইউনিয়নে জোয়ারের পানিতে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধূরী বলেন, বিগত ৪ বছর ধরে উত্তর ধুরুং এলাকার কাইছারপাড়া, চুল্লারপাড়া, চরধুরুং, নয়াকাটা, আকবরবলীপাড়া, ফয়জানির বাপের পাড়া, উত্তর সতর উদ্দিনসহ ১০গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় পাউবোর প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় শত শত পরিবার জোয়ারের নোনা জলে ভেসে গেছে।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টিপাতে মাতামুহুরী নদীতে পাহাড়ি ঢল নামার কারনে পৌরসভার একাধিক স্থানে বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।সোমবার দুপুর থেকে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মাতামুহুরী নদীর ঢলের পানি লোকালয়ে ঢুকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের অন্তত ২০ হাজার জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিকাল তিনটার দিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ২৬ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ অবস্থার কারনে উপজেলা ও পৌরসভার বেশির ভাগ নীচু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে পানিতে। এতে করে উপজেলার শতাধিক গ্রামের অন্তত লক্ষাধিক জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বড় ধরণের বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
প্রতিবারের মত এবারও জোয়ারের পানিতে টেকনাফ উপজেলায় অসংখ্য গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানে তিন শতাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
রামু উপজেলার ঐতিহাসিক শাহসূজা সড়কের কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া সংযোগ অংশে বাকঁখালী নদীর উপর নির্মিত ৩ কোটি ব্রীজ টি একপাশের অংশ নদীতে বিলীন হতে শুরু করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার লাখো মানুষ । বছরের প্রথম পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতের তোড়ে ব্রীজটি ভেঙ্গে গিয়ে নদীতে বিলীন হলে ওপারের অন্তত ২ শত গ্রামের দেড় লাখ মানুষের কপালে চরম দূর্দশা নেমে আসবে এ কারণে তাদের এ অবস্থা।
অপরদিকে টানা ২ দিনের প্রচন্ড বৃষ্টিপাত ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজার জেলা সদরের গুরুত্ববহ বানিজ্যিক এলাকা ঈদগাঁওর গোমাতলীর পাড়া মহল্লা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। দূর্ভোগ আর দূর্গতিতে পড়েছে সর্বশ্রেণি পেশার মানুষজন। এতে করে কর্মজীবিরা চরমভাবে বিপাকে পড়েছে।
এছাড়া জোয়ারের পানি বেড়ে পেকুয়া উপজেলার মগনামার বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে তিনটি গ্রাম। রবিবার দিনগত রাত ১টা থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ইউনিয়নের কাক পাড়া, ডলইন্যা পাড়া ও কালার পাড়া গ্রামে সাগরের পানি প্রবেশ করতে থাকে। গ্রামের বাসিন্দারা রাতেই অন্যত্রে সরে যেতে শুরু করেছেন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একে এম নাজমুল হক কক্সবাংলাকে জানান, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আর এর প্রভাবেই কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
কক্সবাজার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান কক্সবাংলাকে জানান,ঝড়ে বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জরুরি মেরামত করে সোমবার বিকাল নাগাদ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা গেলেও জেলার অধিকাংশ এলাকা এখনও অন্ধকারে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান কক্সবাংলাকে জানান, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বেড়েছে। এ কারণে কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জরুরি ভিক্তিতে এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন কক্সবাংলাকে জানান, কক্সবাজারের উপকূলীয় সদর উপজেলা, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও পেকুয়ায় সামুদ্রিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি, পানের বরজসহ ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
Posted ৭:১৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta